খালেদ হোসেন টাপু, রামু প্রতিনিধি:
দরিদ্র পরিবারের কঠিন সংগ্রামে এগিয়ে চলা তরুনী রিয়া বালা। পরিবারের বোঝা না হয়ে আত্মবিশ্বাসী আর অদম্য প্রচেষ্টায় দেখতেন পরিবারের জীবিকা নির্বাহের স্বপ্ন। একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে রিয়ার। সফল প্রশিক্ষণের পর এবার যাত্রা শুরু করলো রিয়ার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান ‘রিয়া বিউটি পার্লার’। রিয়ার স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি এ পার্লারে কাজ করে স্বাভলম্বী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এলাকার আরও একাধিক তরুনী।
রিয়া বালা কক্সবাজারের রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের রতন শীলের মেয়ে। সোমবার, ৩০ জুন দুপুরে রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি চেইন্দা খোন্দকার পাড়া স্টেশনে এ প্রতিষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করা হয়।
জানা গেছে, ডিএসকে-কেএনএইচ-বিএমজেড প্রকল্পের সুরমা ইয়ুথ গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য ও ‘যুব পরিবর্তন সহায়ক’ হিসেবে বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নেন রিয়া। তার বহুদিনের লালিত স্বপ্ন ছিল নিজ এলাকায় একটি বিউটি পার্লার স্থাপন করে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া এবং পিছিয়ে থাকা নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা।
জানা গেছে, রিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বড় ভূমিকা রেখেছে বেসরকারি সংস্থা ডিএসকে এর কেএনএইচ-বিএমজেড প্রকল্প এবং সেভ দ্যা চিলড্রেন ও বিটা বিউটি কেয়ার প্রশিক্ষণ কর্মশালা। যেখানে রিয়া সহ মোট ১৫ জন নারী যুব সদস্য অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে পরিবার ও প্রকল্পের সহায়তায় এবং ছয়জন সহযোদ্ধা যুব নারীর (আঁখি শর্মা, স্মৃতি শর্মা, প্রিয়াংকা শর্মা, শাহিনা আক্তার, ফারজানা আক্তার ও উর্মি আক্তার) সহযোগিতায় “রিয়া বিউটি পার্লার” যাত্রা শুরু করে।
‘রিয়া বিউটি পার্লার’-এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- ডিএসকে’র সিনিয়র প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোঃ মর্তুজ আলী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্থার যুগ্ম পরিচালক (প্রকল্প) প্রদীপ কুমার রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিএসকে’র টেকনিক্যাল ম্যানেজার মোঃ শফিকুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে রিয়ার পিতা-মাতাসহ উপস্থিত ছিলেন ৭০ জন যুব সদস্য, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, চেইন্দা বাজারের ব্যবসায়ী, এবং ডিএসকে-কেএনএইচ-বিএমজেড প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে যুগ্ম পরিচালক (প্রকল্প) প্রদীপ কুমার রায় বলেন, “রিয়ার এ উদ্যোগ কেবল একটি ব্যবসার সূচনা নয়, এটি একটি সামাজিক পরিবর্তনের পথরেখা। আমরা চাই প্রতিটি গ্রামে এমন এক একজন রিয়া গড়ে উঠুক। যারা নিজেরা সফল হবে, অন্যদেরও সফলতার পথ দেখাবে।”
বিশেষ অতিথি ডিএসকে’র টেকনিক্যাল ম্যানেজার মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, “রিয়ার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এটি শুধু তার নিজের জীবনে পরিবর্তন আনছে না, বরং এলাকার অন্যান্য নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন দ্বার খুলে দিচ্ছে। ডিএসকে সবসময়ই যুবদের ক্ষমতায়নে পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। রিয়া বিউটি পার্লার’ কেবল একটি বিউটি সেলুন নয়—এটি একটি নারীর স্বপ্ন, আত্মবিশ্বাস, সংগ্রাম ও সফলতার প্রতীক। এই উদ্যোগ গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও নারী ক্ষমতায়নের পথে একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে।”
আবেগময় মুহূর্তে রিয়ার মা-বাবা তাঁদের মেয়ের সাহসিকতা ও সংকল্পের প্রশংসা করেন এবং তার স্বপ্নপূরণে ডিএসকে এর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রিয়া বালা বলেন, “আমি চাই ‘রিয়া বিউটি পার্লার’ শুধু একটি সৌন্দর্যসেবা কেন্দ্র না হয়ে নারীদের আত্মবিশ্বাস, আয়ের উৎস ও আস্থার একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠুক।”
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডিএসকে’র ইয়ুথ অর্গানাইজার রাশেদুল হক সরকার। আরো উপস্থিত ছিলেন মাহফুজুর রহমান, অমিত চন্দ্র সরকার, মোকাররম হাসান, যুক্তি চাকমা ও প্রিয়া বড়ুয়া।
একে