তালুকদার হাম্মাদ, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (১২ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে এ ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে অভিযুক্ত অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নিয়ে হামলার জন্য উস্কানি দেওয়া ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা পারভিন তিনাকে ভিকটিম সাজিয়ে অভিযোগ করেছেন তারা।
অভিযোগে তারা বলেন, “প্রক্টরের সামনে তাদের বিভাগের বান্ধবী আফসানাকে সাংবাদিক মারধর করেছে। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে ওই ছাত্রীকে।”
তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই ছাত্রীকে মারধরের মতো কোন ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে একি হলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী তিনার সম্পর্কে বলেন, "তিনা হলে একদিন নাচতে নাচতে অজ্ঞান হয়ে গেছে । ওর অজ্ঞান হওয়ার রোগ আছে তাহলে। খালি নাটক করছে।"
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ছাত্রীর গায়ে কোন আঘাত লাগার চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে আতঙ্কগ্রস্ত বা প্যানিক অ্যাটাকে এমন হতে পারে।
এ ছাড়া মেডিকেল সেন্টারের একাধিক সূত্র জানায়, মেয়েটিকে স্বাভাবিকই মনে হয়েছে। আক্রান্ত না হয়েও সে আক্রান্তের অভিনয় করছে বলে মনে হচ্ছে।
এই বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, আমি ঘটনাটি শোনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে সবাইকে নিবৃত করি। লিখিত অভিযোগ করা হলে ব্যবস্থা নেবো।
আপনার সামনে মেয়েকে মারধর করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, ‘আমি হট্টগোলের আওয়াজ শুনে মাঠের দিকে এগিয়ে যাই। গিয়ে দেখি কয়েকজন মিলে একজন সাংবাদিককে মারধর করছে। তার পাশে আরেক সাংবাদিক আসলে তাকে ভিডিও ডিলিট করতে বলা হয় । তিনি কোনো ভিডিও করেননি বললে সাথে সাথেই তাকে এসে লাথি মারতে দেখা যায় ”
ভুক্তভোগী আরিফ বিল্লাহ বলেন, "ফুটবল মাঠে দুই পক্ষের হাতাহাতির ঘটনাটি আমি সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মোবাইলে ভিডিও করতেছিলাম। এ সময় আফসানা পারভীন তিনা আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। ঘটনার কারণ জানতে চাইলে একযোগে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আমাকে ঘিরে ধরে অকথ্য গালাগালি ও শারীরিকভাবে মারধর করে।"
এদিকে নুর আলম তাকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও মারধরের শিকার হতে হয়। তিনি বলেন, “আমি ভিডিও করতে গেলে ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী আমাকে ক্যামেরা বন্ধ করতে বলে মারধর করে। এসময় কয়েকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে। এর কিছুক্ষণ পরে অন্য সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে আসলে তাদের ওপর ফের হামলা চালায় তারা। আমি হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”
হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে রবিউল আলমকেও হামলার শিকার হতে হয়। রবিউল আলম বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে হট্টগোলের শব্দ শুনে সেখানে গিয়ে দেখি আমার সহকর্মী সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহকে কিছু শিক্ষার্থী ঘিরে মারধর করছে। আমি ভিডিও ধারণের চেষ্টা করলে কয়েকজন আমার ওপর চড়াও হয়। তারা আমার মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং বলে, “ওরে ধর, ভিডিও থাকলে ডিলিট দে।”
তিনি আরও বলেন, এরপর তারা আমাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। অর্থনীতি বিভাগের নাহিদ ইসলাম আমার তলপেটে লাথি মারে, এতে আমি মাটিতে পড়ে যাই। ঘটনাস্থল থেকে আমাকে শাখা সমন্বয়ক এস এম সুইট, সহ সমন্বয়ক গোলাম রাব্বানীসহ কয়েকজন উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পাঠান। এর আগে, ২০ এপ্রিল বৈশাখীয়ানা মেলায় একটি সংবাদ প্রকাশের পর নাহিদ ইসলাম আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।"
এ বিষয়ে অভিযুক্তদের একজন অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নাহিদ হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের বিভাগের আন্তঃসেশন খেলা হচ্ছিল। তখন বল আউট হওয়া না হওয়া নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হয়। জুনিয়র একজন স্যরি বলে সমাধান করা হয়। এসময় আমি সাংবাদিক কাউকে মারিনি। আমার গলা ধরছে তখন আমি কি করব।’
এদিকে ভিক্টিম সাজা শিক্ষার্থী আফসানা পারভিন তিনাকে একাধিকবার কল দিলেও পাওয়া যায়নি।
অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি ড. পার্থ সারথি লস্কর বলেন, ‘আজকে অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃশিক্ষাবর্ষ খেলা ছিল। সেখানে ২০১৯-২০,২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের খেলা ছিল। শুনেছি মারামারি ঘটনা ঘটেছে। তবে সেখানে ঠিক কি হয়েছে জানি না। বিষয়টি নিয়ে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, সাংবাদিকদের অবমাননা করা উচিত হয়নি। প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত করলে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিকদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ ছাড় দেওয়া হবে না। সাংবাদিকদের কারণেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ভালো আছে। সাংবাদিকদের তাদের পেশাগত দায়িত্ব সম্মানের সাথে পালনের সুযোগ দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় প্রশাসনেরও সহযোগিতা করা উচিত।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, আমি ক্যাম্পাসের বাইরে। ঘটনা এখনো শুনিনি। প্রক্টরের কাছে শুনবো কি হয়েছে। আমি আগামীকাল রবিবার ক্যাম্পাসে আসবো৷ তারপর দেখি কী করা যায়।