মুহাম্মদ তাওফিকুল হাসান, ডিআইইউ প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত দ্বীপ, ভোলা জেলার চর কুকরি-মুকরিতে বাস করে নাসির। আর পাঁচ-দশজনের মত সাধারণ গ্রামীণ যুবক। সেখানকার একমাত্র কলেজে পড়ে নাসির। তার আগ্রহ ডিজিটাল মার্কেটিং আর ফ্রিল্যান্স নিয়ে। তাই একাডেমিক পড়াশোনার বাইরেও ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে, ফ্রি অনলাইন কোর্সে অংশ নিয়েই সে স্বপ্ন বুনছে, হয়তো একদিন সে-ও ফ্রিল্যান্সার হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে।
কিন্তু বাস্তবতা তার অনুকূলে নেই। তাদের চরে ওয়াই-ফাই তো দূরের কথা, মোবাইল নেটওয়ার্ক এতই দুর্বল যে, ঠিকমতো মেইল পাঠানোও কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। এজন্যই তার শেখা সব কিছুই থেকে গেছে শুধু বইয়ের পাতায় আর মোবাইলের স্ক্রিনে দেখা ভিডিওতে।
স্টারলিংক দেশে আসার কথা শুনে নাসিরের আশার আলো জ্বলে উঠল।
"তাহলে এবার আমিও শহরের মতই ইন্টারনেট পাবো? তখন আর ইন্টারনেটের জন্য জেলাপর্যায়ে ছুটতে হবেনা, ঝড়বৃষ্টির দিনেও অনলাইন ক্লাস করতে পারবো, বিশ্ববাজারে নির্বিঘ্নে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবো।"
কিন্তু বাস্তবতা আবার তাকে থামিয়ে দেয়। স্টারলিংক এর দাম তার কাছে স্বপ্নের মতোই। তার বাড়ির আশেপাশে তেমন আর কোনো বাড়ি ঘর নেই, আশেপাশের কয়েকজন মিলে যে সেটআপ দিবে সে উপায়ও নেই। পাশাপাশি তার সর্বনিম্ন প্যাকেজ (রেসিডেন্সিয়াল লাইট) এর খরচ প্রায় তাদের পরিবারের মাসিক আয়ের সিংহভাগ। নাসির জানে, প্রযুক্তি তার চারপাশে। কিন্তু তা এখনো তার হাতের নাগালে আসেনি।
ওয়াই-ফাই যেখানে পৌঁছায় না, স্টারলিংক হয়তো সেখানে পৌঁছাবে, কিন্তু তার সামর্থ্যে পৌছাবেতো? প্রশ্নটা এখানেই।
❝প্রযুক্তির গতি যতই বাড়ুক, যদি তা সকল নাগরিকের হাতে না পৌঁছায় - তবে সেটি প্রকৃত উন্নয়ন নয়। ❞
একদিকে শহরের ছেলে ডিজিটাল মার্কেটিং করে লাখ টাকা আয় করছে, অন্যদিকে নাসির শিখেও তার প্রয়োগ করতে পারছেনা।
স্টারলিংক অবশ্যই সম্ভাবনার দরজা খুলছে। কিন্তু এই দরজা সবাইকে ঢুকতে দিলে তবেই না তা গনতান্ত্রিক প্রযুক্তি হয়ে উঠবে।
সরকার, প্রযুক্তি কোম্পানি ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের উচিত স্টারলিংক এর মতো সেবাকে সহজ, সাশ্রয়ী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলা।
প্রযুক্তি কেবল শহুরে জীবনের অলংকার নয়, এটি হওয়া উচিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার। চরাঞ্চলের নাসিরের কথা মাথায় রেখেই আমাদের ভবিষ্যৎ নীতিমালা তৈরির সময় এসেছে।
একে