শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

পেঙ্গুইন ভেবে ভূল করবেন না, এরা মূলত সমুদ্রযোদ্ধা রেজরবিল

শুক্রবার, জুলাই ১৮, ২০২৫
পেঙ্গুইন ভেবে ভূল করবেন না, এরা মূলত সমুদ্রযোদ্ধা রেজরবিল

মুহাম্মদ তাওফিকুল হাসান, ডিআইইউ প্রতিনিধি:

নেট দুনিয়ায় রেজরবিলের রিলস, শর্টস ভাইরাল হলেও, না জানার কারণে অনেকে তাদের পেঙ্গুইন ভেবে ভূল করেন। আসুন, সমুদ্রযোদ্ধা রেজরবিল সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু তথ্য জেনে নেই, যা আপনাকে পরবর্তীতে বিভ্রান্তের হাত থেকে বাঁচাবে।

উত্তর আটলান্টিকের পাথুরে উপকূলের রেজরবিল আর দক্ষিণ মেরুর বরফাচ্ছাদিত জমিনের পেঙ্গুইন; দেখতে প্রায় একই রকম হলেও জেনেটিক, শারীরিক ও বাস্তুতাত্ত্বিক দিক থেকে এরা একেবারে আলাদা। 

রেজরবিল উত্তর গোলার্ধের একমাত্র জীবিত 'ওক' (auk) জাতীয় পাখি, যাদের ধবধবে কালো-সাদা পালক, প্রায় দেড় ফুট লম্বা দেহ ও "চাকু-ধার" ঠোঁট দেখে অনেকেই পেঙ্গুইন ভেবে বসেন। অথচ পেঙ্গুইন কেবল দক্ষিণ গোলার্ধেই বাস করে এবং উড়তে অক্ষম। রেজরবিল আকাশেও উড়ে, সমুদ্রেও ডুব দেয়; পেঙ্গুইনের ডানা আবার ফ্লিপারের মতো, পানির নিচে দুরন্ত সাঁতারু, কিন্তু আকাশজুড়ে নির্বাসিত।

রেজরবিলদের শরীরের ওজন (৫৯০-৭৫০ গ্রাম) কম এবং হাড়ের গঠন ফাঁপা হওয়ায় তারা উড়ানে উপযোগী। আর পেঙ্গুইনদের শরীরের ওজন 
(১.২-৪০ কেজি) বেশি সাথে হাড় ঘন হওয়ায় ডুব স্রোত নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। 

রেজরবিলরা থাকে মূলত পাথুরে উপকূল, দ্বীপের খাড়া ঢাল, পাথরের ফাঁকফোকর ও গুহা-সদৃশ নিরাপদ জায়গায়। প্রতি মৌসুমে মাত্র একটি ডিম দেয় এবং ডিম ফোঁটার ১৮-২৫ দিনের মধ্যে ছানারা উড়তে না পারলেও; চলাফেরা শুরু করে এবং খাড়া পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিয়ে সমুদ্রে নেমে যায়। এদের প্রধান খাদ্য ছোট মাছ, বিশেষত স্যান্ডইল, স্প্র্যাট, ক্যাপলিন, চিংড়ি ইত্যাদি। এরা পানির নিচে ডাইভ দিয়ে দ্রুতগতিতে মাছ ধরে সাথে প্রতিটি ডাইভে ৮-১০টি পর্যন্ত মাছ সংগ্রহ করতে পারে। 

পেঙ্গুইনরা থাকে খোলা বরফ-কচি, গুহা, পাথর, পাহাড়ি ঢাল, কখনো ঘাস কিংবা গ্যানেট-চুনাপাথরের স্তূপে। প্রতি মৌসুমে ১-২টি ডিম দেয় এবং ছানারা সাধারণত দুই মাস (ছোট প্রজাতি; আদেলি, জেন্টু) থেকে, চার মাস (বড় প্রজাতি; এম্পেরর) এর ভেতর স্বাধীন চলাফেরা ও সাঁতার শেখে। এদের মূল খাদ্য সামুদ্রিক প্রাণী, যার মধ্যে প্রধান হলো ক্রিল (ক্ষুদ্র চিংড়ি সদৃশ), বিভিন্ন প্রজাতির ছোট ও মাঝারি মাছ এবং স্কুইড। এরা পানির নিচে ফ্লিপার ব্যবহার করে দুর্দান্ত সাঁতার কেটে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে।

সবশেষে বলতে পারি রেজরবিল ও পেঙ্গুইন দেখতে একই রকম হলেও তাদের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য, বাসস্থান, উড়ান দক্ষতা, প্রজনন কৌশল সম্পূর্ণ পৃথক। রেজরবিলের গল্প উড়ে-সাঁতার কাটা যা উত্তর আটলান্টিকের সমুদ্রপরিবেশের স্বাস্থ্য জানান দেয়, অপরদিকে পেঙ্গুইনের যাপিত জীবন দক্ষিণ মেরুর বরফগলনের বার্তা বয়ে আনে।

যদিও রেজরবিল বা পেঙ্গুইন কারও বাসস্থান আমাদের দেশে নেই, তবু এদের গল্প বৈশ্বিক সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু সংকট বোঝাতে সহায়ক। বিশেষত বঙ্গোপসাগরের বুকে তেল-দূষণ ও মাত্রাতিরিক্ত ট্রলিং যেভাবে সমুদ্র-পাখির খাদ্যজাল ধ্বংস করে, সাথে তা রেজরবিল-পেঙ্গুইনের দুর্দশার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। 

রেজরবিল ও পেঙ্গুইন উভয়ই পরিবেশগত পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত মাছ শিকারের ফলে খাদ্যাভাব, সমুদ্রে তেল দূষণ ও মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট বিপর্যয়, নতুন সংক্রমিত রোগ ও শিকারী প্রাণীর আক্রমণসহ বিভিন্ন সংকটে রয়েছে। এসব অতি শীঘ্রই বন্ধ না হলে এ দুই গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পাখির জীবন ও বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে পড়বে। এজন্য বিশেষভাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় সমুদ্র সংরক্ষণ, উপযুক্ত নীতিমালা ও জনসচেতনতা বাড়িয়ে এদের বাঁচানো অতীব জরুরি।


একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল