নিজস্ব প্রতিবেদক:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ করতে ১৪৪টি নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেতে আবেদন করলেও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে কোনো দলই উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ইসি নতুন করে দলগুলোকে চিঠি দিয়েছে শর্ত পূরণে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্যের ঘাটতি পূরণ করতে না পারলে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদন বাতিল করে দেবে নির্বাচন কমিশন।
ইসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তারা বলেন, ১৪৪টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও তারা কেউই শতভাগ তথ্য পূরণ করতে পারেনি। এজন্য সব দলকে আমরা ১৫ দিন সময় দিয়েছি ঘাটতি তথ্য পূরণে। এ সময়ের মধ্যে যদি কোনো দল শতভাগ তথ্যের ঘাটতি পূরণে ব্যর্থ হয় তাহলে সেই দলগুলো নিবন্ধন আবেদন বাতিল করে দেওয়া হবে। ১৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনপ্রত্যাশী রাজনৈতিক দলগুলো ঘাটতি তথ্য পূরণ করতে না পারলে সেসব রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আবেদন বাতিল করবেন কি না জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘তারা তথ্য দিলে আমরা পর্যালোচনা করব। তারপর কমিশনে তা উপস্থাপন করব। আইন অনুযায়ী ১৫ দিন পর নতুন করে আর সময় দেওয়ার সুযোগ নাই। যেহেতু ১৫ দিনের বেশি বাড়তি সময় বিধান নাই সেহেতু কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বলে আমি মনে করি।’
আইন অনুযায়ী, প্রাথমিক যাচাই-বাছাই কমিশনের কোনো রাজনৈতিক দল যদি নিবন্ধন আবেদন সঠিকভাবে পূরণ না করে অথবা শর্তপূরণ বা দলিলাদির ঘাটতি থাকে তাহলে সেই দলগুলোকে ১৫ দিন সময় দিয়ে প্রয়োজনীয় দলিলাদি সরবরাহসহ অন্যান্য ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ দিয়ে চিঠি দেয় কমিশন। চিঠি পাওয়ার পর নিবন্ধন আবেদনকারী দল প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করলে কমিশন আইন অনুযায়ী নিবন্ধন আবেদন মঞ্জুর বা না-মঞ্জুর করবে। এছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধন আবেদনকারী দল কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সেই দলকে নিবন্ধনের অযোগ্য বিবেচনা করে আবেদনরি বাতিল করে দেবে।
আবেদনের ত্রুটি সংশোধন ১৪৪ টি নিবন্ধন প্রত্যাশী নতুন রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেয় ইসি। চিঠিগুলোতে আবেদনের ঘাটতি সম্পর্কে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে পাঠানো চিঠিতে দলটির নিবন্ধনে জমা দেওয়া আবেদনে বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে বলে জানানো হয়। ত্রুটিগুলোর মধ্যে রয়েছে—ঠিকানাসহ দলের সব কার্যকর জেলা দফতরের তালিকা দেওয়া হয়নি, ঢাকা ও সিলেট জেলা দফতরের ভাড়া চুক্তিপত্রে দলের নাম উল্লেখ নেই, ঠিকানাসহ সব উপজেলা, থানা দফতরের তালিকা দেওয়া হয়নি, ২৫টি উপজেলা/থানায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভোটার (ন্যূনতম ২০০ জন) সদস্যের অন্তর্ভুক্তি পাওয়া যায়নি, ইটনা উপজেলার ভাড়ার চুক্তিপত্রে দলের নাম উল্লেখ নেই, হালুয়াঘাট উপজেলার ভাড়ার চুক্তিপত্রে দলের নাম ও অফিসের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি, আবেদন ফরম-১-এর ফিল্ড নম্বর-৯-এ তহবিলের পরিমাণ উল্লেখ নেই, আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত তহবিলের উৎসের বিবরণীতেও তহবিলের পরিমাণ উল্লেখ নেই এবং নিবন্ধনের বিষয়ে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তের অনুলিপির শেষ পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর নেই।
ডেসটিনি গ্রুপের সাবেক এমডি রফিকুল আমিনের রাজনৈতিক দল আম জনগণ পার্টির ঘাটতির কথা উল্লেখ করে ইসির চিঠিতে বলা হয়, এনআইডি নম্বর ছাড়াই দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। ১৯ জেলায় ২০০ ভোটারের তথ্যে ঘাটতি পাওয়া গেছে। নেই কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ে কমিটিতে সদস্য নির্বাচনের বিধান। ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ সদস্যপদ মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়নি এবং দলে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি নেই ঘোষণায় তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে দলটির দলিল বা কার্যক্রম সংবিধানপরিপন্থী নয়।
আম জনতার দলের সভাপতি মিয়া মসিউজ্জামানকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, দুই-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দফতরের বাড়ি ভাড়ার রসিদ, চুক্তিপত্র ও দলের মালিকানা দলিল যুক্ত করা হয়নি। একইভাবে ১০০ উপজেলার ক্ষেত্রে কমিটির তালিকা ও দফতরের রসিদ যুক্ত নেই। দাখিল করেনি দলের নামে রক্ষিত ব্যাংকের তথ্য এবং গঠনতন্ত্রে কোনো পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ মহিলা সদস্যপদ সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়নি।
ইসি সূত্র জানায়, গত ২২ জুন পর্যন্ত ১৪৪টি দল ১৪৭টি আবেদন দাখিল করে। এতে সকল দলই প্রাথমিক যাচাইয়ে পাস করতে পারেনি৷ এমনও দল আছে যারা সঠিকভাবে নিবন্ধন আবেদন পূরণ করতে পারেনি। আবার নিবন্ধনের যে শর্ত পালন করতে হয় সেখানেও রয়েছে তথ্যের ঘাটতি।
আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক তৃতীয় জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এছাড়াও কোনো দলের কেউ পূর্বে সংসদ সদস্য থাকলে বা পূর্বের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। এই প্রধান শর্তগুলো ছাড়াও বেশকিছু নিয়ম কানুন মেনে আবেদন করতে হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ে এসব নিয়ম কানুনগুলোই সাধারণত খেয়াল করা হয়।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় দলগুলোর আবেদন পাওয়ার পর কমিশন প্রথমে এগুলো প্রাথমিক বাছাই করে। এরপর সেই দলগুলোর তথ্যাবলি সরেজমিন তদন্ত শেষে বাছাই সম্পন্ন করে দাবি আপত্তি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় কমিশন। সেখানে কোনো আপত্তি এলে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করা হয়। আর কোনো আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিবন্ধন সনদ দেয় ইসি। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দল নিজ প্রতীকে ভোটে প্রার্থী দিতে পারে না।
বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫১টি (আওয়ামী লীগসহ)। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তী সময়ে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। দলগুলো হলো- জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সম্প্রতি আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জাগপা নিবন্ধন ফিরে পেলেও ইসি কেবল জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে।
একে