নিজস্ব প্রতিবেদক:
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেশের সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে সমাধান করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, 'গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের ওপর আমি জোর দিতে চাই। আমি বিশ্বাস করি একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদের সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে সমাধান করবে। বৈপ্লবিক কোনো ঘটনা ঘটবে এটা সম্ভব নয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে সেই পরিবর্তনটা অবশ্যই আসবে।'
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় একটি হোটেলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের ওপর জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের এই জায়গায় আরেকটি সমস্যা, যা সম্ভবত নিজেরাই তৈরি করেছি—সহনশীলতার অনেক অভাব আমাদের মধ্যে আছে। এই জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সহনশীল হতে হবে ও ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা পারব।'
তিনি বলেন, '২০২২ সালে আন্দোলনের সময় অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করেছিলাম, ৩১ দফা কর্মসূচি নিয়ে আমরা জনগণের সামনে এসেছিলাম। যেদিনই কর্মসূচি নিয়ে সামনে আসি, সেই দিন আমাদের ওপর গুলি হয়েছে। অফিসের সামনের সভা করতে দেয়নি পুলিশ, গুলি করেছে এবং মিরপুরের একটি ছেলে শহীদ হয়েছেন।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরাও চাই অতি দ্রুত এসব হত্যার বিচার হোক। জরুরি সংস্কারগুলো অতি দ্রুত হোক। তবে একটি জিনিস মনে রাখা প্রয়োজন—জনগণের প্রতিনিধিত্বসম্পন্ন সরকার খুবই জরুরি। কারণ ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করা, আর ম্যান্ডেট ছাড়া কাজ করার মধ্যে অবশ্যই কিছু পার্থক্য আছে।'
প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে এবং জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে—এমন আশা প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, 'আরও বড় একটি প্রশ্ন আছে—তা হলো প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণ করতে হবে, যা আওয়ামী লীগ সরকার ভেঙে দিয়েছে। এজন্য আমাদের এত সমস্যা। প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরায় নির্মাণ করতে হবে। কাজটা সহজ নয়, সময় লাগবে, ধৈর্য ধরতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'বিগত ১৫-১৬ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিস্ট শাসকের অধীনে থেকে গোটা জাতি নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছে। আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, প্রতিবাদ করেছি। অসংখ্য নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, হত্যার শিকার হয়েছেন। বিচারের নামে অনেক রাজনৈতিক নেতা, আলেম-ওলামা হত্যা করা হয়েছে।'
প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে অতিদ্রুত জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি করায় জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাকে ধন্যবাদ জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, 'হত্যাকাণ্ডের শুরুটা অনেক আগেই। ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা, মানুষের অধিকারগুলো বিলীন করে দেওয়া এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তারা কাজ করেছে।'
এ সময় জুলাই-আগস্টে শহীদ, আহত ও অঙ্গহানির শিকারদের প্রতি দল ও নিজের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান ফখরুল।
প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, 'আমরা অনেক কথা বলি, আসলে একটি বছর খুব বড় সময় নয়। এই সময়ে তারা অনেকগুলো কাজ করেছেন। অস্বীকার করার উপায় নেই। তারা যে বড় কাজটি এগিয়ে নিয়েছেন, তা হলো সংস্কারের কাজ।'
এমআই