"ক্রোমিয়াম বিষাক্ত!" —এমন কথা শুনে অনেকেই আঁতকে উঠবেন। আর যদি বলা হয়, এই বিষাক্ত উপাদানটি আমাদের শরীরেও দরকার, তাহলে অবাক হবেন নিশ্চয়ই! হ্যাঁ, প্রকৃতির অদ্ভুত কৌশলের এক নিদর্শন হলো এই ক্রোমিয়াম (Chromium)। এটি একদিকে যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ, অন্যদিকে তেমনি শরীরের জন্য এক অতি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানও।
ক্রোমিয়াম মূলত দুইটি ভিন্ন রাসায়নিক রূপে বিদ্যমানঃ ত্রিযোজী ক্রোমিয়াম (Cr³⁺) রূপে এটি দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই মাত্রা ও রূপ অনুযায়ী ব্যবহারে এটি উপকারী হয়, অতিরিক্ত বা ভুল রূপে গ্রহণ করলে ক্ষতিকর হতে পারে। ছয়যোজী ক্রোমিয়াম (Cr⁶⁺) হলো সবচেয়ে টক্সিক রূপ। এটি ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে (অর্থাৎ carcinogenic)। এছাড়াও শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা করতে পারে, ত্বকে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন বা ঘা সৃষ্টি করতে পারে।
তবুও ক্রোমিয়ামের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু কেন? ত্রিযোজী ক্রোমিয়াম স্বাস্থ্যরক্ষার এক নীরব সৈনিক। সঠিক রূপে এবং পরিমাণমতো গ্রহণ করলে ক্রোমিয়াম উপকারী। এটি মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ট্রেস এলিমেন্ট হিসেবে কাজ করে।
Cr³⁺ এর প্রয়োজনীয়তা:
(১) গ্লুকোজ বিপাকে (Glucose metabolism): ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
(২) চর্বি ও প্রোটিন বিপাকে সহায়ক: দেহের শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।
(৩) ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ক্ষুধা দমনে সাহায্য করে।
Cr³⁺ পাওয়া যায় যেসব উৎস থেকেঃ গোটা শস্য (whole grains), ব্রকলি, আলু, মাংস, ডিম, কিছু ফল ও সবজি।
ছয়যোজী ক্রোমিয়াম এক ভয়ংকর দানব। শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত এই রূপটি বিষাক্ততা ও পরিবেশদূষণের জন্য berbad নাম কুড়িয়েছে। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে Cr⁶⁺ নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত, তবে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশে এর ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে। অনিয়ন্ত্রিত শিল্পবর্জ্য, দূষিত পানি বা খাদ্যের মাধ্যমে Cr⁶⁺ শরীরে প্রবেশ করলে তা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।
তাই - শিল্পকারখানায় পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। খাবার ও পানি বিশুদ্ধ কিনা, সে বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।
মোঃ মুরাদ হোসেন
শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়