মো. মাহিদুজ্জামান সিয়াম, গবি প্রতিনিধি:
সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) বাস মেরামতের সময় চল্লিশ হাজার টাকা আত্মসাৎ, অভিযোগ তোলায় এক প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে হুমকি ও মারধরের চেষ্টার অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তাল ক্যাম্পাস।
বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুর ২টায় বাদামতলা থেকে প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচিতে হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে প্রতিবাদের স্লোগান- ‘জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলো একসাথে’, ‘চল্লিশ হাজার নয়, আমাদের নৈতিকতা লোপাট হয়েছে’, ‘হুমকি নয়, জবাব চাই, দুর্নীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চাই।' এই পদযাত্রা ও অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা তুলে ধরেন ছয় দফা দাবি।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস মেরামতের কাজে ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ তোলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা। কিন্তু দুর্নীতির তদন্ত তো দূরের কথা, অভিযোগ তোলার ‘অপরাধে’ তাকেই নাকি হুমকি ও মারধরের চেষ্টা করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে আগেও অনিয়মের অভিযোগ ছিল। উদাহরণস্বরূপ, একসময় ৭১ লাখ টাকা চুরির ঘটনাও ধামাচাপা পড়ে যায়। তবে সেই অর্থ কীভাবে ফেরত এলো বা আসলেই তদন্ত হয়েছিল কি-না এ বিষয়ে এখনো নেই কোনো স্বচ্ছতা।
শিক্ষার্থীর অভিযোগ করেছেন, এর আগেও প্রায় ৭১ লাখ টাকা চুরি হলেও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সম্প্রতি বাস মেরামতের জন্য বরাদ্দ অর্থের ব্যবহারে জালিয়াতি হয়েছে। প্রশাসনের ভেতর থেকেই একটি অংশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি:
১. বাস দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত মোজাহিদ খান ও এইচ এম তাইফ-উর আকবরকে সাময়িক বরখাস্ত করে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. বাস মেরামতসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব শিক্ষার্থীদের সামনে নোটিশ আকারে নিয়মিত প্রকাশ করতে হবে।
৪. তদন্তে গাফিলতির দায়ে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির সদস্যদের ৭ দিনের জন্য বরখাস্ত করে তা লিখিতভাবে জানাতে হবে।
৫. উপাচার্য প্রশাসনের ব্যর্থতা স্বীকার করে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবেন।
৬. দাবি পূরণে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া হলো।
ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মনোয়ার হোসাইন অন্তর বলেন, “গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির রিপোর্ট অনুযায়ী ৪০ হাজার টাকা চুরি হয়েছে, তবে চোখের আড়ালে আরও কত টাকা চুরি হয়েছে, তা আমরা জানি না। তদন্ত কমিটি দুই মাসেও রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি, এটা উপাচার্যের দায়িত্বহীনতার স্পষ্ট প্রমাণ। আমরা জানতে চাই, কেন এত গড়িমসি?”
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নাসিম খান বলেন, “৭১ লাখ টাকা চুরির পরও তদন্ত হয়নি, এবার ৪০ হাজার টাকার ঘটনায়ও একই চিত্র। প্রশাসনের এই নীরবতা প্রমাণ করে, চুরির সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত। উপাচার্য সাহেব, আপনি সবকিছু স্পষ্ট করুন, না হলে এই চুরির দায় নিয়েই পদত্যাগ করুন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আবুল হোসেন বলেন, “৭১ লাখ টাকা ইতোমধ্যে ফেরত এসেছে। বাস মেরামতের ঘটনায় ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসন কাজ করছে। পাশাপাশি বিভাগগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য ফিল্ড ভিজিটের ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”