মাইদুল ইসলাম, সময় জার্নাল প্রতিবেদক : মনের জোর, নিজের লক্ষ্য ছিলেন অবিচল আর তা থেকেই এসেছে সাফল্যের মন্ত্র। জীবনের প্রধান ইচ্ছেটাই ছিলো শিক্ষকতা করার। নানান ধাপ পেরিয়ে এখন তিনি রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের প্রশাসনিক দায়িত্বে। কিছুদিন আগেই তিনি এই কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন পান।
‘এ বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল, নারী দিল তাহে রূপ-রস-সুধা-গন্ধ সুনির্মল’।
বিশ্বের প্রতেকটি অর্জনে নারীর অবদান অনিশিকার্য। সেই সাথে নারীরা আজ প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে লাভ করছে উত্তারউত্তার সাফল্যে। কর্মক্ষেত্রের বাঁধা-বিপত্তি পেছনে ফেলে প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষার্থীর রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক তালাত সুলতানা। আজ ৮ই মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে জানার চেষ্টা করেছি অধ্যাপক তালাত সুলতানার জীবনের উত্থান-পতন ও সফলতার মন্ত্র।
অধ্যাপক তালাত সুলতানা সরকারি তিতুমীর কলেজের ২০তম উপাধ্যক্ষ। তিনি ২০০৯ সালে কলেজটিতে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন এবং এরপর দীর্ঘদিন সুনামের সাথে বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজ কর্মগুনে গত ১ মার্চ ২০২১ তারিখে তিনি তিতুমীর কলেজের উপাধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বাবা কুমিল্লার ও মা চাটগাঁয়ের হলেও জন্ম এবং সোনালী শৈশব কাটিয়েছেন বরিশালে। শিক্ষার হাতেখড়ি বরিশালের উদয়ন স্কুলে এরপরে বরিশাল সদর গার্লস স্কুলও পড়েন। পরে ঢাকার হলিক্রস কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করেন। তারপর স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর জীবন শেষ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে।
অধ্যাপক তালাত সুলতানার বাবা একজন এডভোকেট কাজ করছেন লিগাল অ্যাডভাইজার হিসেবে। তার মা ও ছিলেন ভিকারুন্নেসা কলেজের বাংলা শিক্ষিকা।
সব সময় শিক্ষক হতে চাইলেও কয়েকটি ভিন্ন পেশায়। কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন পেশায় চাকরি করে অভিজ্ঞতার ঝুলিটাও সমৃদ্ধ করেছেন ঢের।কর্মক্ষেত্রের শুরুটা হয় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের(বিআইডিএস) গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে। সেখানে সাফল্যের সাথে ৪ বছর কাজ করার পর। ১৪ তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে আসেন সবসময়ের চাওয়া মহান পেশা শিক্ষকতায়।
শিক্ষকতায় ক্যারিয়ায়ের সূচনা হয় ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে এরপরে চট্টগ্রামের চারুকলা কলেজে সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা করেছেন। চারুকলা কলেজের পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন তিনি। এরপরে পদোন্নতি পেয়ে চাকরি করেন ডিজি অফিসে। সবশেষ ২০০৯ সালে যোগদান করেন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। দীর্ঘদিন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাফল্যের সাথে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করার পর। ২০২১ সনের ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগ্যতাবলে কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান।
পড়াশোনা শেষে মেয়েরা চাকরি করবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে বাসায় ছিল সে পরিবেশ । কর্মের ক্ষেত্রে পরিবার তেমন কোনো বাধার সৃষ্টি করেনি, করলেও তা আটকাতে পারেনি তাকে। নিজে্র লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল যার ফলে সাপোর্ট দিতে বাধ্যে হয়েছে পরিবার।
সংস্কৃতিমনা এই অধ্যাপক জানালেন মন খারাপ বাঁ খারাপ সময় তাকে কাবু করতে পারেনি। মন খারাপের সময় গান গাওয়া,বই পড়ে দিব্যি উতরে যান খারাপ সময়। খারাপ সময়ে বন্ধুরা সবসময় ছিল পাশে বলে জানান তিনি। তাদের সাপোর্টে অনেক কিছু সহজে পার করতে পেরেছেন। বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনায় অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। মোটকথা খারাপ সময়ে মুখ থুবরানোর মানসিকতা ছিলো না তাঁর।
কয়েকটি পেশায় চাকরি করা তালাত সুলতানা মনে করেন, নারীদের ক্ষেত্রে অন্যান্য পেশার চেয়ে শিক্ষকতা পেশায় কম বাধার সম্মুখীন হতে হয়। অন্যান্য পেশাগুলোয় নারীদেরকে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়।তিনি যখন রিসার্চের কাজে ঢাকার বাহিরে সারা বাংলাদেশে কাজ করেছিলেন তখন কিছুটা বাধার সম্মুখিন হতে হয়েছিল তাকেও। তাছাড়া তিনি মনে করেন বিয়ে ও বাচ্চা নেয়ার পরে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় কর্মজীবী নারীদের। এছাড়াও ৯-৫ টা কর্মক্ষেত্রে কাজ করার সাথে সংসার সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে কর্মজীবী নারীদের ক্ষেত্রে তবে এগুলো দমাতে পারেনি তাকে।
নারী দিবসে সকল নারীদেরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন,নারীরা এখনো একটু পিছিয়ে আছি। কেন নারীদের একদিন ঘটা করে দিবস পালন করতে হবে? পুরুষেরা তো দিবস পালন করছে না। তাই আমাদেরকে আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত, নারীদের অসামান্য দক্ষতা ও কাজের মাধ্যমে সারাবছরই সন্মান কুড়িয়ে নিতে হবে। তাছাড়াও তিনি সকলকে আহবান করেন একদিনের নারী দিবসে নারীকে সম্মান নয়, সবার সবসময় নারীদেরকে সম্মান করা উচিত কারণ তারা ঘর, বাহির, শিক্ষা, পরিবারসহ সকল ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। তাই আমাদেরও উচিত তাদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া।
সময় জার্নাল/আরইউ