মামুনূর রহমান হৃদয়: আন্তর্জাতিক নারী দিবস (পূর্বনাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস)। প্রতি বছর মার্চ মাসের ৮ তারিখে পালিত হয়। সারা বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবস উদযাপন করে থাকেন। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের প্রতিপাদ্য ভিন্ন হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপনের মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানটি বেশি গুরুত্ব পায়।
এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’।
নারীর ন্যায্য অধিকার নিয়ে মাথা উচু করে সমাজে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারার পেছনে রয়েছে এক সাহসী সংগ্রামের ইতিহাস।
ঘটনাটি সেই ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন।
আন্দোলন করার অপরাধে সে সময় গ্রেফতার হন বহু নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন তাদের ন্যায্য অধিকার।
১৯১০ সালের ৮ই মার্চ ডেনমাকের্র কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই সারাবিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। এর দুই বছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বর্তমানে প্রতিবছর ৮ই মার্চ উপলক্ষে আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, বারকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চীন, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি বিসাউ, ইরিত্রিয়া, কাজাকিস্তান, কিরঘিস্তান, লাউস, মাদাগাস্কার, মলডোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টিনেগ্রো, নেপাল, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, ভিয়েতনাম, জাম্বিয়া ৮ মার্চ নারীদের জন্য রাষ্ট্রীয় ছুটি হিসেবে পালন করে। প্রথাগতভাবে পুরুষরা তাদের মা, স্ত্রী, নারীবন্ধু, নারী সহকর্মীদের এই দিনে ফুল ও উপহার দিয়ে সম্মানিত করে। কোনো কোনো দেশে এই দিনটি মা দিবসের মতো একই সম্মানে উদযাপন করা হয় এবং সন্তানেরা তাদের মা, দাদিমা এবং নানিমাকে ফুল ও উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়।
গত কয়েক দশকে নারী দিবস উদযাপনের ধরন এবং লয়েও এসেছে অনেক পরিবর্তন, শ্লোগানে এসেছে আশাবাদী সুর। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখন নারী দিবস উদযাপন করে ঘটা করে; যেমন ওয়ার্ল্ড জায়েন্ট সার্চ ইঞ্জিন গুগলও তাদের লোগো পরিবর্তন করে ৮ মার্চ ঘিরে।
বাংলাদেশেও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপিত হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে অত্যন্ত আড়ম্বরে। নারীশিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর আংশগ্রহণে বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেক এবং সক্ষম হয়েছে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণে। রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীশিক্ষায় অর্থনৈতিক প্রণোদনার ব্যবস্থা রয়েছে এবং নারী উদ্যোক্তাদের সকল ক্ষেত্রে দারুণভাবে উৎসাহিত করা হয়।
লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ
সময় জার্নাল/এমআই