এম. পলাশ শরীফ, বাগেরহাট প্রতিনিধি: বানিজ্যিক ভিত্তিতে এপিস মেলিফেরা মৌ চাষ করে সাড়া জাগিয়েছে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের সফল চাষী আরিফুল ইসলাম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৌসুমি ফল ও ফসলের ফুল থেকে পুষ্প রস নিয়ে সংগ্রহ করে বছরের ৬মাসে ৮৫ মন মধু উৎপাদন করছেন চাষি।
সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের গড়ঘাটা গ্রামের আদর্শবান সবজি চাষী মোকছেদ আলী খানের ছেলে আরিফুল ইসলাম খান। বৌলপুর আলিম মাদ্রাসা থেকে ২০১১ সালে আলিম পাশ করে বেকার জীবনযাপন করছে। কর্মের তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরমুখি হয়েছিলো। ২০১৬ সালে কচুয়া উপজেলায় সার্ভেয়ার প্রশিক্ষণে গিয়ে মৌ চাষ দেখে উদ্বিদ্ধ হয় আরিফুল। সেখান থেকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) বাগেরহাটের যাত্রাপুরে মৌ-চাষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ পরবর্তীতে খুলনা বিসিক ও পিরোজপুরের বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে বানিজ্যিক ভিত্তিতে এপিস মেলিফেরা ১৮টি বাক্স নিয়ে মৌ চাষের যাত্রা শুরু করেন। এখন সেখানে দাড়িয়েছে ১১০টি বক্স।
ভ্রাম্যমান এ চাষি দেশের মানিকগঞ্জ, নাটোর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও ঈশ্বরদীতে সরিষা, ধুনিয়া, কালোজিরা ও লিচু, তরমুজ, বরই ফুল থেকে পুষ্প রস নিয়ে মৌ-মাছির বক্সের মাধ্যমে এ মধু সংগ্রহ করছেন। ফসল ভিত্তিক এ সব স্থানে ১৫/২০ দিন ধরে ফসলের মাঠের পাশে মৌ বক্স নিয়ে অবস্থান করে মৌ সংগ্রহের জন্য।
সফল চাষি আরিফুল ইসলাম খান বলেন, এ সব ফসলের ফুল থেকে বছরের ৬ মাসে ৮৫ থেকে ৯০ মন মধুু সংগ্রহ করে সে। লিচু ফুলের প্রতিমন মধু পাইকারি বিক্রি হয় ১৬ হাজার, সরিষা ৮/৯ হাজার, তরমুজ ১৩ হাজার সবচেয়ে বেশী দরে কালোজিরা প্রতিমন মধু ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সরকারিভাবে এ চাষে তিনি কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যেমে ২ লাখ টাকা লোন নিয়ে এর যাত্রা শুরু করেন। বর্ষা মৌসুম অন্যদিকে করোনা লকডাউনে ঘরে বসে থেকে ১১০ মৌ-মাছির বক্স নিয়ে সপ্তাহে ১০০ কেজি চিনি খাবার দিতে হচ্ছে এ মৌ-মাছিদের। তিনি কৃষি দপ্তরসহ সরকারের প্রতি করোনার প্রনোদনার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি মধু বাজারজাত করনে উৎপাদিত মধু চাক ভাংগার জন্য উন্নত কৃষি যন্ত্রাংশ মেশিনের দাবি জানান।
সফল মৌ চাষি আরিফুল এখন ইনটেক বোতলে বাজারজাত করছেন মধু। যা খুচরা মূল্যে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৬শ’ টাকা। বর্তমানে তার সংগ্রহে ২টন খুলনায়, বাড়িতে ১২ মন মধু সংগ্রহ রয়েছে।
এ সর্ম্পকে ইউনিয়ন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের মাধ্যমে তেল ফসল প্রকল্পের একাধিক গ্রুপ রয়েছে। এ গ্রুপের প্রধান করা হয়েছে এ সফল চাষি আরিফুলকে। সরিষা ফসলে ক্ষেতের পাশে মৌ চাষ হলে সরিষা ক্ষেতে ১৫/২৫ ভাগ সফল বৃদ্ধি হবে। ক্ষতিকারক পোকার আক্রামণ থেকে রক্ষা পাবে কৃষক।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) সিফাত আল মারুফ বলেন, এ অঞ্চলে এই প্রথম মৌ চাষ শুরু করেছেন চাষি আরিফুল ইসলাম। সরিষা ফসলে চাষিদেরকে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে এ মৌ চাষে উদ্ভুদ্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে সফল চাষি আরিফুলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার চিন্তাও করছেন তারা। কৃষি দপ্তরের মাধ্যমে তাকে সহায়তার আওতায় নেয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে এ কর্মকর্তা জানান।
সময় জার্নাল/এমআই