গত বছরের ১৭ ই মার্চ থেকে বন্ধ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা কেউ করছে রান্নার কাজ, কেউ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যস্ত, কেউ করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় পার, কেউ বানাচ্ছেন হ্যান্ড ক্রাফট আবার কেউবা সময় পার করছেন জনপ্রিয় লেখকের বই পড়ে কেউবা আবার শুয়ে বসে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনের চিত্র লেখায় ফুটিয়ে তুলছেন মামুনূর রহমান হৃদয়।
খোঁজ নিতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলাম সরকারি তিতুমীর কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের (১৫-১৬) বর্ষের শিক্ষার্থী ও অত্র কলেজের সাংস্কৃতিক সংগঠন শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ'র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সাইফুল ইসলামের সাথে। ফোন ধরতেই তিনি সালাম দিয়ে বললেন কেমন চলছে দিনকাল? উত্তরে বললাম আগের মত নয় তবে ভালো। আপনার দৈনন্দিন জীবন কেমন কাটছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমার স্নাতক শেষ হয়েছে মাস তিনেক আগে। এখনো ফলাফল পাইনি। এখন ফলাফল প্রকাশ হলে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হবো ইনশাআল্লাহ। যেহেতু এখন করোনার মহামারী চলছে সেহেতু কিছুটা নিরব; ক্ষতি মেনে নিয়েও অবসর সময় পার করছি। যেখানে আমার অনার্স শেষ হওয়ার কথা ২০১৯ সালে সেখানে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখিন হই। সেশনজট পড়তে হয়েছে তারপর এখন করোনাকাল। কিছুটা দুশ্চিন্তা কাজ করে কারন স্নাতকোত্তর শেষে নিজেকে প্রমাণ করার সময় কমে যাচ্ছে অর্থাৎ চাকরি বয়স কমে যাচ্ছে। তারপরেও স্বাভাবিক জীবন যাপন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি তাই তো সাংস্কৃতিক চর্চা করে মনকে প্রফুল্ল রাখছি। অনলাইনে বিভিন্ন সময় সাংগঠনিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কাজ করে যাচ্ছি। যেহেতু একজন সাংস্কৃতিক প্রেমি মানুষ তাই বিভিন্ন লেখকের বই পড়ছি এবং গান শোনা, নিউজ দেখা, পত্রিকা পড়া, এছাড়া নিজেও মাঝে মাঝে লেখালেখি করি পাশাপাশি বিসিএস'র জন্য ভালোকিছু বই পড়ে যাচ্ছি। তাছাড়া গৃহস্থলের জরুরী কাজে মাঝে মাঝে সাহায্য করি। এভাবেই মূলত করোনাকালে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, করোনা কাল কাটবে সবাই আবার হাসবে প্রাণের ক্যাম্পাসে আবারও গানে গানে আইযুব বাচ্ছু কিংবা মান্নাদের গানে মাতবো। সর্বোপরি প্রাণের ক্যাম্পাসে আবার হাসতে চাই শুদ্ধ সতেজ নিঃশ্বাস নিতে চাই।
কথা হয় অত্র কলেজের আরেক শিক্ষার্থী সাকিলা পারভীনের সাথে। তিনি বলেন, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার প্রথম কাজ হচ্ছে পড়াশোনা করা।কিন্তু দীর্ঘ দিনের বন্ধ ক্যাম্পাসে যেতে না পেরে শরীরে এক প্রকার অলসতা দেখা দিচ্ছে। সারাদিন ঘরে বসে বন্দী জীবন পার করছি। আগের দৈনন্দিন জীবন আর এখনের সময়ের সাথে আছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আগে ভোর হলেই ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুতি নিতাম ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য। আর এখন সকাল হলে যেন ঘুম ভাঙ্গতেই চায় না। আর যখন ঘুম থেকে উঠি, ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ফোন নিয়ে বসে থাকি। যেহেতু এখন পড়াশোনা নেই বললেই চলে। তবে মাঝে মাঝে অনলাইনে পাঠদানের কার্যক্রম হলে অংশগ্রহণ করি। দুপুরে রান্নার কিছু কাজ থাকে। যতটুকু পারি রান্নার কাজে হাত লাগাই। তারপর খাবেরর আবারও অবসর সময়। অনেকটা বাধ্য হয়েই ফোন নিয়ে পড়ে থাকি। রাতে খাবারের পরেও তাই। এভাবেই চাতক পাখির মত কাটছে আমার জীবন। করোনা পরিস্থিতিতে ঘোরাঘুরির কোন সুযোগ-ও তো নেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা হয় শিক্ষার্থী মিহি আলমের সাথে। তিনি বলেন, কোভিও-১৯ পরিস্থিতিতে আগের থেকে এখনকার চলার পথ অনেক কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। এখন সারাদিন বাসাতেই থাকি। বলতে পারেন গৃহবন্দী নয় বরং নিজেকে মাঝে মাঝে গৃহবাসী মনে হয়। রান্নার কাজের পাশাপাশি ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হ্যান্ড ক্রাফট বানিয়ে দিন পার করছি; আর চেষ্টা করে যাচ্ছি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে সচেতনতামূলক কার্যক্রমে কাজ করে চলছি দেশ ও জাতির রক্ষার্থে। আর যখন কোন কাজই হাতে থাকে না সেক্ষেত্রে গল্পের বই পড়া, বিকেল বেলা ছাদে যাওয়া কখনো আবার টেলিভিশনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে চলছে আমার গৃহজীবন।
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আরমান মিয়া বলেন, এখন যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ তাই অন্যান্য স্বাভাবিক কাজ করেই আমার দিন কাটছে। বোনের ছেলের সাথে বাসায় খেলাধুলা করে আমি সময় পাড় করি। তাছাড়া বাজার-সদাই করার যাবতীয় দায়িত্ব আমি নিয়েছি। এছাড়াও অবসর সময়ে একাডেমী ও একাডেমীর বাইরের অনেক বই পড়ে সময় পার করছি। আর যখন কোন কাজই থাকে না তখন ফোন নিয়ে পড়ে থাকা ছাড়া আর উপায় থাকে না।তবে ক্যাম্পাস বন্ধের পর ফোনে সময় ব্যয় তুলনামূলক কিছুটা বেড়েছে।
এদিকে সাদিয়া রহমান তন্নী নামের আরেক শিক্ষার্থী জানান, ক্যাম্পাস বন্ধের ফলে আমার ঘুমের সময় তুলনামূলক বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে ঘুমাতাম ৭-৮ ঘন্টা এখন তা গিয়ে দাড়িয়েছে ৮-৯ ঘন্টা। এর পরেও যেন সময় শেষ হতে চায় না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার একটি ব্যবসায়িক পেইজ রয়েছে। সেখানে প্রোডাক্ট সেলের কার্যক্রম করে থাকি। এছাড়াও আমি একটি এনজিও'র সাথে যুক্ত আছি। এনজিও'র কাজ সমূহ আমি করে থাকি। কাজের ফাঁকে সময় পেলে খাবার খাওয়া, গোসল ইত্যাদি কাজ সেরে নেই। অবশিষ্ট যেই সময় অবসর থাকি সে সময় বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে আড্ডা দিয়ে পার করি। এভাবেই চলছে আমার নিত্যদিনের কর্মসূচী। আশা করি শীঘ্রই শিক্ষার্থীরা পদাচরণ করবে তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে এবং তারা ফিরে পাবে তাদের স্বাভাবিক জীবন।
লেখক: শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক।