বাকৃবি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের আজ সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এই নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে সবগুলো হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন।
সোমবার (১সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে মিছিল নিয়ে কামাল রঞ্জিত (কে আর) মার্কেটে এসে জড়ো হতে থাকেন এবং প্রতিটি ছাত্রী হলের সামনে যেয়ে তাদের হল না ছাড়ার জন্য অনুরোধ করেন।
‘আমার ভাইয়ের রক্ত ঝরে; প্রশাসন কি করে? কথায় কথায় হল ছাড়,হল কি তোর বাপ দাদার’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।এরপর সকাল সাড়ে ১১টায় আমতলায় প্রেস ব্রিফিং আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা এবং গতকালকের হামলায় পরিপ্রেক্ষিতে ৬ দফা দাবি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।এই দাবি গুলো হলো -
১. অবৈধভাবে হল ভেকেন্টের নির্দেশনা দুপুর ২ টার মধ্যে প্রত্যাহার করে আদেশ তুলে নিতে হবে।
২. হলগুলোতে চলমান সব ধরনের সুবিধা নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে হবে।
৩. এই প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর শিক্ষক দের মদদে বহিরাগত দিয়ে হামলার দায়ে প্রক্টরিয়াল বডিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে।
৪. বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ককটেল বিস্ফোরণ, লাইব্রেরি ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং দেশীয় অস্ত্র দ্বারা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা এবং নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্থার ঘটনার জন্য উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে ।
৫. হামলার সাথে জড়িত শিক্ষকবৃন্দ এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. গত ১ মাস ধরে চলমান যে একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলন করে আসছি, সেই একক ডিগ্রি অবিলম্বে প্রদান করতে হবে। তিনটি ভিন্ন ডিগ্রি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রেস ব্রিফিং শেষে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী এহসানুল হক হিমেল বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। আমরা শিক্ষার্থীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা আড়াই শতাধিক শিক্ষক আন্তরিকতার সাথে শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নিয়েছি। শতভাগ দাবি মেনে নেওয়ার পরেও কেন তারা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করলো, সেটি আমার প্রশ্ন। আট ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর শিক্ষকেরা প্যানিকড ও ট্রমায় পড়ে যান। পরে কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা, নিরাপত্তারক্ষীরা গেইট ভেঙ্গে শিক্ষকদের বের করতে সাহায্য করেন।
বহিরাগতদের হামলার বিষয়ে বলেন, শিক্ষার্থীরা যে দাবি করছে শিক্ষকেরা বহিরাগত দিয়ে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে, এটি সম্পূর্ণ ভুল কথা। আমরা বাইরের কাউকে বলিনি ক্যাম্পাসে আসতে, আমরা কেন বলবো? ছাত্রছাত্রীরা তো আমাদের ছেলে মেয়ের মতো।
ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আইন শৃঙ্খলার দায়িত্ব তুলে দেয়া হয়েছে। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং যারা হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিবেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আমি অবশ্যই কমিটি করবো।
উপাচার্যের ক্ষমা চাওয়া ও জড়িত শিক্ষকদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কেন ক্ষমা চাইব? আমি তো কোন অন্যায় করিনি।
এমআই