বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নীলফামারীতে শ্রমিক-সেনাবাহিনী-পুলিশ সংঘর্ষ, গুলিতে শ্রমিক নিহত

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫
নীলফামারীতে শ্রমিক-সেনাবাহিনী-পুলিশ সংঘর্ষ, গুলিতে শ্রমিক নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নীলফামারীর উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) শ্রমিকদের সঙ্গে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। 

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত শ্রমিকের নাম হাবিবুর রহমান হাবিব (২১)। তিনি সদর উপজেলা সংলশী ইউনিয়নের কাজিরহাট এলাকার দুলাল হোসেনের ছেলে এবং উত্তরা ইপিজেডের ইকু ইন্টারন্যাশনাল (স্পিনিং অ্যান্ড কম্পোজিট) কোম্পানির কর্মী।

নীলফামারী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ফরহান তানভিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হাবিবের বুকে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।

ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট, উত্তরা ইপিজেডের এভারগ্রিন প্রোডাক্টস ফ্যাক্টরি (বিডি) লিমিটেডের শ্রমিকরা চার দিন ধরে ন্যায্য বেতন, অতিরিক্ত কাজের মুল্য পরিশোধ এবং ছাঁটাইকৃত পুরাতন শ্রমিকদের পুনর্বহালের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছিলেন। এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে ইপিজেডের অন্যান্য কোম্পানির শ্রমিকরাও একই দাবিতে একত্রিত হন।

শনিবার ও রবিবার আন্দোলনের প্রভাবে সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) কারখানা কর্তৃপক্ষ নোটিশ জারি করে প্রতিষ্ঠানটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করতে ইপিজেডে গেলে মূল ফটকে প্রবেশের চেষ্টা করেন। রক্ষিরা বাধা দিলে তারা প্রধান সড়ক অবরোধ করে, যা নীলফামারী-সৈয়দপুর মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ শ্রমিকদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। আতঙ্কে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, সাধারণ মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। এই সংঘর্ষের সময় হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহতদের মধ্যে ছয়জন নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আহতরা হলেন মো. মোমিনুর রহমান (২৫), মো. শাহিন (২৬), নুর আলম (৩০), মোস্তাক আহমেদ (২৫), লিপি আক্তার (২৬) ও জমিলা খাতুন (৩৫)।

কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টানা আন্দোলনের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯-এর ধারা ১২(১) অনুযায়ী ২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিষ্ঠানটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী নোটিশে পুনরায় খোলার কথা জানানো হবে।

শ্রমিকরা মোট ২৩ দফা দাবি তুলেছেন। এর মধ্যে রয়েছে উৎপাদন টার্গেট কমানো, ওভারটাইম নিশ্চিত করা, ছুটি যথাযথভাবে দেওয়া, বেতন ও ভাতা সময়মতো পরিশোধ, আবাসন ও প্রমোশনের জটিলতা নিরসন, সকাল ৭টার আগে ডিউটি না রাখা, গর্ভবতী শ্রমিকদের বিশেষ সুবিধা, নারী শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করা এবং ক্ষুদ্র সমস্যার কারণে চাকরিচ্যুত না করা।

শ্রমিকরা দাবি করেছেন, তারা চার দিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো আলোচনা করেনি, বরং কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে। তারা জানিয়েছেন, তাদের এই দাবিগুলি নতুন নয়, দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল।

নিহত হাবিবুর রহমানের বড় ভাই আশিকুর রহমান বলেন, ‘হাবিবুর রহমান ইকু ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি নিটিং কারখানায় রাতে কাজ করেছেন। সকালে কাজ শেষে ইপিজেড থেকে বের হওয়ার সময় গুলিতে আমার ভাই নিহত হন।’

নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর সাঈদ বলেন, ‘আমরা এখনো সড়কে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছি।’

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল