বুধবার, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫
ইসাহাক আলী, নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোর শহরের দুই নম্বর ওয়ার্ডের বঙ্গজল ও ঝাউতলা এলাকায় হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে । গত ২৪ ঘন্টায় এই এলাকা থেকে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় ১৬৭ জন রোগী । এখনো সময়ের সাথে সাথে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সদর হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। স্যালাইন ও ওষুধের সংকট না থাকলেও শয্যা সঙ্কটে মেঝেতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তাদেরকে। সিভিল সার্জন বলেছেন পানিবাহিত কারণে এ ধরনের প্রাদুর্ভাব হতে পারে তবে ঔষধ ও স্যালাইনের সংকট নেই কয়েকজন আশংকাজনক থাকলেও এখনো কাউকে রেফার্ড করার মত পরিস্থিতি হয়নি।
হাসপাতালে আসা রোগী, নার্স, চিকিৎসক ও স্থানীয়রা জানান, গত মঙ্গলবার সকালেও সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ইউনিট ছিল অনেকটাই ফাঁকা । কিন্তু দুপুর থেকেই হঠাৎ করে রোগীর ভিড় বাড়তে থাকে। শহরের বঙ্গজল ও ঝাউতলা এলাকার প্রায় ১৬৭ জন রোগী গত ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছে সদর হাসপাতালে। আক্রান্তদের ধারণা পৌরসভার পানি থেকে এর প্রাদুর্ভাব হয়েছে। প্রথমদিকে চিকিৎসক ও ওষুধ সংকট থাকলেও বর্তমানে তা কাটিয়ে ওঠে চিকিৎসা সেবায় কাজ করে যাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে স্যালাইন ও ঔষধের সংকট না থাকলেও শয্যাসঙ্কটে অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন মেঝেতে। সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। চিকিৎসা দিতে অনেকটাই হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। পানি থেকেই এ ধরনের রোগের পাদুর্ভাব হয়েছে বলে আক্রান্ত রোগী ও তাদের সজনরা মনে করছেন। তবে কেউ কেউ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
হাসপাতালে আসা এক শিশুর পিতা আব্দুল্লাহ জিহাদ জানান, হঠাৎ তার মেয়ে পাতলা পায়খানা শুরু করল প্রথমে সে গুরুত্ব না দিলেও পড়ে অতিরিক্ত ভাবে বমি ও পায়খানা করা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুধু তার মেয়ে নয় ও এলাকার প্রচুর রোগী একই সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এতে মনে হচ্ছে পৌরসভার সরবরাহকৃত পানি থেকেই ডায়রিয়ার পাদুর্ভাব হয়েছে।
শহরের ঝাউতলা এলাকার আলামিন নামে এক রোগী জানান, সে ছাড়াও তার বাড়িতে ডায়রিয়ায় সাতজন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। বমি ও পাতলা পায়খানা হচ্ছে। এতে তিনি চিন্তিত। দ্রুত চিকিৎসা কামনা করেন তিনি।
সরজমিনে হাসপাতালে গিয়ে অন্তত ১০ থেকে ১২ জন রোগীর সাথে কথা বলে একই কারণ জানান তারা। এছাড়া নার্সদের সেবা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন। ওয়ার্ড ও হাসপাতালের টয়লেট গুলোর নোংরা অবস্থায় ক্ষোভ জানান তারা। তারা বলেন, এমন পরিবেশে চিকিৎসা শেষে সুস্থ না হয়ে এই কারণেই অনেকে অসুস্থ হয়ে যাবে। অবিলম্বে সুন্দর ও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার দাবি করেন তারা।
এদিকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের পক্ষে জুলফিকুল হায়দার বাবু জানিয়েছে , ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে । পৌরসভার পক্ষ থেকে পানি ফুটিয়ে খাওয়ার জন্য মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে । এছাড়া পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হবে। পানি পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হচ্ছে।
সিভিল সার্জন ডাক্তার মুক্তাদির আরেফিন বলেন, নিশ্চিত না হলেও ধারণা করা হচ্ছে পানিবাহিত কারণেই ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে ১৬৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ জনের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এখনো উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। স্যালাইন ও ওষুধের সংকট নেই চিকিৎসকরা প্রাণপণ চিকিৎসা সেবা দিতে কাজ করে যাচ্ছে। দ্রুতই এই অবস্থা সহনীয় পর্যায়ে আসবে বলে আশা করেন তিনি।
এদিকে নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন বলেন ইতিমধ্যেই একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে এছাড়া পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে ডায়রিয়ার কারণ অনুসন্ধান করে অন্যস্থানে যাতে এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করেছেন পৌরবাসী।
এমআই