শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ক্ষতিগ্রস্ত হবে মাধ্যমিকের প্রায় পৌনে ১ কোটি শিক্ষার্থী

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫
ক্ষতিগ্রস্ত হবে মাধ্যমিকের প্রায় পৌনে ১ কোটি শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিনিধি:

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপাতে রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রস্তুতি আগেভাগেই শুরু হয়েছিল। গত মে মাসে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। কিন্তু চার মাস ধরে কার্যাদেশ আটকে রেখে বছরের শেষ সময়ে মাধ্যমিকের টেন্ডার বাতিল করে পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। মুদ্রকরা বলেন, অক্টোবরের আগে রিটেন্ডার হওয়া পাঠ্যবই ছাপানো শুরু করা যাবে না। আর ছয় মাসের কাজ তিন মাসে করা অসম্ভব।

এতে আগামী জানুয়ারিতে সব শিক্ষার্থী বই পাবে না। আগামী বছর মাধ্যমিকের প্রায় পৌনে ১ কোটি শিক্ষার্থী সঠিক সময়ে পাঠ্যবই না পেয়ে লেখাপড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দিতে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত লেগে যাওয়ায় শিক্ষা বিভাগ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আগামী বছর বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ৮ কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার এবং মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখ বই প্রয়োজন হবে। জানা গেছে, বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির বইয়ের দরপত্র, মূল্যায়ন ও অনুমোদনের কাজও শেষ হয়েছে। প্রাথমিক স্তরের বই ছাপাতে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এখন চুক্তি করছে এনসিটিবি। নিয়ম অনুযায়ী চুক্তির পর ৭০ দিনের মধ্যে বই সরবরাহ করতে হবে। এদিকে গত ১৯ আগস্ট ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির জন্য ১১ কোটি ৮৯ লাখ ৩২ হাজার ৮০২ কপি বই ছাপানোর জন্য তিনটি প্রস্তাব ক্রয় কমিটিতে উত্থাপন হয়, যার মোট ব্যয় ধরা হয় ৬০৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে সেটি অনুমোদন দেয়নি কমিটি। ইতিমধ্যে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বইয়ের পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

স্বাভাবিকভাবে নবম-দশম শ্রেণিরও অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে বছরের শেষ সময়ে এসে ২১ কোটি বইয়ের পুনঃদরপত্রে যেতে হচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি)। অনিয়মের অভিযোগে টেন্ডার বাতিল হলেও অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ফের একই নিয়মে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তাহলে রিটেন্ডার দিয়ে লাভ কী হলো? এমন প্রশ্ন অনেকের। জানা গেছে, গত ২৬ আগস্ট ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে বই ছাপাতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর) ২০০৮-এর বিধি ৮৩ (১) (ক) কিছুটা সংশোধন আনা হয়।

পিপিআরের ৮৩ (১) (ক) অনুযায়ী. উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির ক্ষেত্রে দরপত্র প্রস্তুত ও দাখিলের জন্য বিজ্ঞাপনের তারিখ থেকে কমপক্ষে ৪২ দিন সময় দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজন বা দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে এ সময়সীমা কমানোর সুযোগ রয়েছে। সেই বিধিতে সংশোধিত প্রস্তাব পাস করেছে ক্রয় কমিটি। এর মাধ্যমে দরপত্রে সময়সীমা ৪২ দিনের জায়গায় ১৫ দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে। ছাপাখানার মালিকরা বলেন, ‘দরপত্র উন্মুক্তের পরও বেশ কিছু প্রক্রিয়া থাকে। এনসিটিবি ফাইল প্রস্তুত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। মন্ত্রণালয় তা ক্রয় কমিটিতে উপস্থাপন করবে। সেখান থেকে অনুমোদনের পর প্রেস মালিকদের সঙ্গে এনসিটিবির চুক্তি করতে হবে। চুক্তির পর প্রথম পর্যায়ে বই ছাপতে ৭০ দিন সময় পাবেন প্রেস মালিকরা।’ যদিও এরপর নানা উপায়ে সেই সময় বাড়ানো যায়। ফলে সব প্রক্রিয়া শেষে মাধ্যমিকের কিছু বই ছাপার কাজ শুরু হতে পারে অক্টোবরের প্রথমার্ধে। আবার কিছু বই ছাপার কাজ শুরু করতে হবে অক্টোবরের শেষে। এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলেন, ছাপাখানাগুলোর ক্যাপাসিটির চেয়ে কম কাজ দেওয়া হচ্ছে। প্রেসের সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া এখন পুরোদমে প্রাথমিকের কাজ চলছে। সেগুলো আগেভাগেই শেষ হয়ে যাবে। এর পরও ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ তুলে আনতে আমাদের কষ্ট হবে। কিন্তু তার পরও কাজটা করা যাবে বলে আমরা অনেকটা আশাবাদী।

২০২৬ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের ২১ কোটি পাঠ্যবই ছাপাতে চার মাস আগের টেন্ডার বাতিল করে পুনঃ দরপত্র আন্তর্জাতিক করা হচ্ছে বলে গত এক সপ্তাহ ধরে গুঞ্জন চলছিল। অবশেষে বিষয়টি ভুয়া বলে জানিয়েছে এনসিটিবি। রবিবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব প্রফেসর মো. সাহতাব উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তথ্যের সঠিকতা যাচাই না করে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বানসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত খবরের যথার্থতা না থাকায় এ ধরনের সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

পাঠ্যবই ছাপার কাজ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক উইং। একই সঙ্গে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার পাঁয়তারা বন্ধের দাবি জানিয়েছে তারা। রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মতিঝিলে এনসিটিবি কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এমন হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ‘শ্রমিক মরবে মানি না, বিদেশি ছাপা চাই না’, ‘দুনিয়ায় মজদুর, এক হও লাড়াই করো’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘বিদেশি কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’সহ নানান স্লোগান দেন। কেন্দ্রীয় শ্রমিক উইংয়ের প্রধান সমন্বয়কারী মাজহারুল ইসলাম বলেন, শত শত শ্রমিক চব্বিশের অভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছেন। তারা যে নতুন বন্দোবস্তের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। বরং মালিকপক্ষের বন্দোবস্ত ঠিকঠাকমতো হয়েছে। দেশের লাখ লাখ শ্রমিক বেকার। তাদের বঞ্চিত করে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার পাঁয়তারা রয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। আমরা এসব সিদ্ধান্ত মেনে নেব না। শ্রমিকের রুটি-রুজির হক অন্য দেশের হাতে তুলে দিতে চাই না আমরা।

জানা গেছে, গত ৪ মে ষষ্ঠ শ্রেণির দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর গত ১৮ মে প্রাক-প্রাথমিকের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। তবে প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ের দরপত্র উন্মুক্ত হয়েছে গত ১৭ জুন। প্রাথমিক প্রথম থেকে তৃতীয় শেণির বই ৩০ জুন এবং চতুর্থ-পঞ্চম শেণির বইয়ের দরপত্র উন্মুক্ত হয়েছে ১৫ জুলাই। ষষ্ঠ শ্রেণির বই ২ জুন, সপ্তম শ্রেণির বই ৪ জুন, অষ্টম শ্রেণির বই ২৩ জুন, নবম শ্রেণির  বই ২৪ জুলাই এবং ইবতেদায়ির বইয়ের দরপত্র উন্মুক্ত হয়েছে গত ১০ জুলাই। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একটি লটের বইয়ের দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়েছে গত ১৯ জুন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক একজন মন্ত্রীর ছোট ভাই রব্বানী জব্বারের মালিকানাধীন আনন্দ প্রিন্টার্স ও এপেক্স প্রিন্টার্স শুধু তিনটি শ্রেণির ৭২ লাখ বইয়ের কাজ পায়। সাবেক একজন মন্ত্রীর ভাই ও আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বর্তমান সময়ে কীভাবে এত কাজ পান—সেই প্রশ্ন তুলে বিষয়টি শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে জানতে চান কমিটির অন্য সদস্যরা। এছাড়া, ২২৭টি লটের বিপরীতে ৯টি প্যাকেজ করায় আপত্তি তোলে টেকনিক্যাল কমিটি। ফলে মাধ্যমিকের তিন শ্রেণির বই ছাপার অনুমোদন দেয়নি ক্রয় কমিটি। এছাড়া, নবম-দশম শ্রেণিরও প্রায় ৩০ লাখের বেশি বইয়ের কাজ পেয়েছেন রাব্বানী জব্বার। ফলে সেই দরপত্রেরও অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, নভেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যও ছিল। কিন্তু শেষ সময়ে এসে মাধ্যমিকের তিন শ্রেণির (ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম) পাঠ্যবইয়ের দরপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ায় পুরো পরিকল্পনাটিই এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল