বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সোনার দাম প্রায় দুই লাখ টাকা ভরি, কিনবেন নাকি বেচবেন

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫
সোনার দাম প্রায় দুই লাখ টাকা ভরি, কিনবেন নাকি বেচবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশ যে বছর স্বাধীন হয় সে বছর সোনার ভরি ছিল ১৭০ টাকা। ৫৪ বছর পর সোনার দাম শুনলে অধিকাংশ মানুষই অবাক হবেন। তবে সোনা সব কালেই দামি ধাতু। বর্তমানের কথাই ধরা যাক, ভালো মানের সোনার ভরি ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এই দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে বিশ্বে সোনার দাম আরও বাড়তে পারে, পূর্বাভাস এমনই।

বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির সঙ্গে সোনার দামের সম্পর্ক রয়েছে। অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা মানে সোনার বাজারে মূল্যবৃদ্ধি। কারণ, অস্থির সময়ে বিভিন্ন দেশ সোনায় বিনিয়োগ করে। ঐতিহাসিকভাবেও দেখা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে সোনার দাম সবচেয়ে বেশি বাড়ে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় অর্থাৎ ২০২০ সালের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ২ হাজার ৭০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত এপ্রিলে পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৪০০ ডলারের বেশি পর্যন্ত পৌঁছায়।

বর্তমানে বিশ্ববাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৬০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। পেছনের কারণ হচ্ছে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) আগামী সপ্তাহে সুদহার কমাতে পারে। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার প্রতি ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। স্পট মার্কেটে গতকাল একপর্যায়ে এক আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ৬৫৪ ডলারে দাঁড়ায়।

অস্ট্রেলিয়ান ঋণদাতা এএনজেড গ্রুপ গতকাল বুধবার সোনার দামের পূর্বাভাস আগের চেয়ে বাড়িয়েছে। তাদের পূর্বাভাস, বছরের শেষ দিকে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৮০০ ডলার হতে পারে। আগামী জুন নাগাদ সেই দাম চার হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে, রয়টার্সের প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানান হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই অস্থির সময়ে সোনার নতুন অলংকার কেনা বুদ্ধিমানের হবে নাকি পুরোনো অলংকার বিক্রি করা। আগে বলা যাক, পুরোনো অলংকার বিক্রি করলে মুনাফা কত? সাধারণত পুরোনো অলংকার জুয়েলার্সে বিক্রি করতে গেলে তারা ওজন করার পর তা কোন ক্যারেটের সোনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হবে। তারপর অলংকারটির বর্তমান ওজন থেকে ১৭ শতাংশ বাদ দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হবে। ধরুন, আপনি ১০ বছর আগে প্রায় ৪৩ হাজার টাকায় ২২ ক্যারেটের এক ভরি ওজনের অলংকার কিনেছিলেন। এখন সেটি বিক্রি করতে গেলে আপনি ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৩৬ টাকা পাবেন। তাতে ভরিতে আপনার মুনাফা হবে ১ লাখ ১১ হাজার ৩৩৬ টাকা। ২১ ও ১৮ ক্যারেটের অলংকার হলে মুনাফা ভিন্ন হবে।

অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ, অলংকারটি যে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা, সেখানেই নিয়ে যান। সঙ্গে অবশ্যই রসিদটি নিতে ভুলবেন না। অন্য কোনো জুয়েলার্সে অলংকার বিক্রি করতে গেলে মুনাফা কিছুটা কমে যাবে। কারণ, তখন তারা অলংকারের বর্তমান ওজন থেকে ২২-২৪ শতাংশ বাদ দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করবে।

বাংলাদেশে সোনায় সরাসরি বিনিয়োগ করার সুযোগ কম। সহজ উপায় হচ্ছে, অলংকার কেনা। তবে অলংকার কিনতে গেলে সোনার দামের সঙ্গে ৫ শতাংশ ভ্যাট ও মজুরি যুক্ত হবে। তাতে এক ভরি অলংকার কিনতে দুই লাখ টাকার কাছাকাছি খরচ পড়ে যায়। যেহেতু বাজার খুবই অস্থির সেহেতু অলংকার কিনে বিনিয়োগ করাটা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে অলস পড়ে থাকা টাকা বিনিয়োগ করা যেতে পারে, এমন পরামর্শই দিলেই একাধিক জুয়েলার্স ব্যবসায়ী।

জানতে চাইলে জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সোনার দাম অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে। খুব প্রয়োজন না হলে কেউ সোনার অলংকার কিনতে আসছেন না। সে জন্য ব্যবসার অবস্থা শোচনীয়। বর্তমানে পরিস্থিতিতে পুরোনো সোনার অলংকার বিক্রি করলে ভালো মুনাফা মিলবে। কেউ যদি কিনতে চান তাহলে ব্র্যান্ডের দোকান থেকে সোনার অলংকার কেনা উচিত। তাহলেই মানসম্মত অলংকারের নিশ্চয়তা থাকে। পরে মান নিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না।

দেড় যুগ আগেও দেশের জুয়েলারি ব্যবসায় বিশৃঙ্খলা ছিল। সোনার অলংকার ভাঙালে শেষ পর্যন্ত কতটুকু বিশুদ্ধ সোনা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সংশয় ছিল। ২০০৭ সালে হলমার্ক বাধ্যতামূলক করে জুয়েলার্স সমিতি। এতে যেটি হয়েছে, অলংকারের গায়ে কতটুকু বিশুদ্ধ সোনা আছে, তা খোদাই করে লিখে দেন বিক্রেতা। সেই সঙ্গে অলংকার কেনার রসিদে বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হয়। সাধারণত অলংকার প্রস্তুত করার পর নির্দিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠানে আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তা পরীক্ষা করে বিশুদ্ধ সোনার পরিমাণটি বের করা হয়। যদিও ব্র্যান্ড ও স্বনামধন্য জুয়েলার্সগুলো সেটি মেনে চললেও মফস্‌সলের ছোট-মাঝারি প্রতিষ্ঠান হলমার্কের বিষয়টি মানে না।

জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে বর্তমানে ২২, ২১ ও ১৮ ক্যারেটের সোনার অলংকার বেশি তৈরি হয়। সনাতন পদ্ধতির অলংকার সেই অর্থে তৈরি হয় না। ২২ ক্যারেটের এক ভরি অলংকারে ১৪ আনা ২ রতি বিশুদ্ধ সোনা থাকে। ২১ ক্যারেটে ১৪ আনা ও ১৮ ক্যারেটে ১২ আনা বিশুদ্ধ সোনা থাকে। সনাতন পদ্ধতির অলংকারে বিশুদ্ধ সোনার পরিমাণ বড়জোর ১০ আনা। আর জানেন তো, ১৬ আনায় ১ ভরি, ৬ রতিতে ১ আনা।

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল