রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ২৪ ইশতেহার ঘোষণা করেছে ইসলামি ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। আজ শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে লিচুতলায় এ ইশতেহার ঘোষণা করেন প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ।
ইশতেহারে ৭টি বিষয়কে ‘হ্যাঁ’ এবং ৭টি বিষয়কে ‘না’ হিসেবে উল্লেখ করেছে প্যানেলটি। এ ছাড়াও তারা ছাত্র সংসদের মেয়াদের ১২ মাসে ২৪টি সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইশতেহারে ‘হ্যাঁ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ, আবাসন সংকট নিরসন, মানসম্মত খাবার নিশ্চিতকরণ, নিরাপদ ক্যাম্পাস, তথ্যসেবা ও আধুনিকায়ন, সকল অংশীজনের মাঝে সুসম্পর্ক বৃদ্ধি এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণকে।
অন্যদিকে ইশতেহারে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বাক্ষরে ৫০ টাকা হল ফি; হল দখল ও সিট-বাণিজ্য; ট্যাগিং ও ফ্রেমিংয়ের রাজনীতি; স্লাটশেমিং, সাইবার বুলিং ও শারীরিক নির্যাতন; ধর্মবিদ্বেষ; মাদক ও ছিনতাই এবং সন্ত্রাস ও সহিংসতাকে।
এদিকে ইশতেহারে ১২ মাসে ২৪টি সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ছাত্র শিবির মনোনীত প্যানেলটি। তাদের ২৪টি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি হলো- জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে রাকসু নির্বাচনকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের অন্তর্ভুক্তকরণ, জুলাইয়ের হামলাকারীদের বিচার, জাদুঘর স্থাপন ও ১৬ জুলাইকে ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণা করা হবে; ক্যাম্পাসে মানসম্মত খাবারের নিশ্চয়তা প্রদানে ডাইনিং, ক্যান্টিনসহ অন্যান্য জায়গায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং মূল্য নির্ধারণ করা।
অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের অধিকার সংরক্ষণে শতভাগ আবাসিকতার রোডম্যাপ ঘোষণা এবং এর পূর্ব পর্যন্ত আবাসন ভর্তুকি দেওয়া; শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্বারোপে শিক্ষার্থীদের মাঝে গবেষণা বৃত্তি দেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা; লাইব্রেরি ও রিডিং রুম সম্প্রসারণ ও সংস্কারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে আনা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ অন্যান্য আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করা; শিক্ষা কারিকুলাম আন্তর্জাতিকীকরণে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এমওইউ চুক্তি করা এবং টিচার্স একচেঞ্জ চালু করা।
প্রশাসনিক কার্যক্রম আধুনিকায়নে একটি অ্যাপের মাধ্যমে সকল সুবিধা নিশ্চিত করা এবং টিএসসিসি, অডিটরিয়ামের ভাড়া শিক্ষার্থীদের সাধ্যের মধ্যে আনা; চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকীকরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারকে ২০ সয্যাবিশিষ্ট করা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া; নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা দেওয়া; ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ও লাইটিং ব্যবস্থা করা।
পরিবহন ব্যাবস্থা উন্নত করতে ক্যাম্পাসের ভেতরে গাড়ি চলতে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা এবং বাসের ট্রিপ বৃদ্ধি করা; নারী শিক্ষার্থীদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষনিক হেল্পলাইনের আওতায় আনা এবং ‘চাইল্ড ডে কেয়ার’ স্থাপনসহ বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করা; শিক্ষক মূল্যায়ক ব্যবস্থা চালু করা; তথ্যসেবা নিশ্চিতকরণে একটি অ্যাপ চালু করা এবং শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন কোর্স চালু করা; শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন অন ক্যম্পাস জব নিশ্চিত করা; পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি বাস্তবায়ন করা।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় লিফট, ব্রেইল পদ্ধতি, অডিওবুক, বিশেষ বাথরুম সুবিধা ও নানা প্রশিক্ষন নিশ্চিত করা; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও অন্যান্য ধর্মালম্বীদের অধিকার রক্ষায় উপাসনালয় ও ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা বৃদ্ধি; সংস্কৃতির বৈচিত্র্যতা বৃদ্ধিতে হামদ, নাত, কাওয়ালী ইসলামী দর্শনভিত্তিক নানা আয়োজন করা এবং এর সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা; স্বাস্থ্যকর স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা; ক্রীড়া উন্নয়নে বাজেট বৃদ্ধি ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট সুবিধার বৃহৎ সংস্কার করা।
সাহিত্য, প্রকাশনা ও সামাজিক সংগঠনের উন্নয়নে নানান সুবিধা নিশ্চিত করা; ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন ক্যাম্পাসের জন্য প্রকৃতি রক্ষা কমিটির মাধ্যমে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে; অপরাধ দমনে অনলাইন-অফলাইনে নানান ব্যাবস্থা নেওয়া হবে এবং দলীয় শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা হবে।
ইশতেহার ঘোষণা শেষে প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজা বলেন, ‘এটি আকাশ কুসুম কোনো প্রস্তাবনা নয়। আমরা এই সংস্কার বাস্তবায়ন করবো। এছাড়া এর জবাবদিহিতার জন্য আমরা চার্ট টাঙানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সেখানে কোন কাজ কতটুকু হলো তা উল্লেখ করা থাকবে।’
একে