নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাজীপুরের টঙ্গীতে পরিত্যক্ত রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে টঙ্গীর সাহারা সুপারমার্কেটের পাশে এ ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন গুদামে ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়। খবর পেয়ে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাসহ পাঁচজন দগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। দুজনকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
আগুনে দগ্ধ হয়েছেন টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শাহীন, পরিদর্শক আবু নাঈম, ফায়ার ফাইটার শামীম (৪৫), মো. নূরুল হুদা (৪৫), মো. জয় হাসান (২৫)। আহতদের প্রথমে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাদের জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, টিনশেডের গুদাম একটি পোশাক কারখানার। বিকেলে হঠাৎ সেখানে বিস্ফোরণ ঘটে। এর পর ভেতরে থাকা লোকজন দৌড়ে বের হয়ে আসেন। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আগুন নেভানোর কাজ শুরুর পর রাসায়নিকের এক ড্রামে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কয়েকজন দগ্ধ হন।
গুদামের পাশের দোকান মালিক আসাদুজ্জামান আরমান জানান, তিনি দোকানের ভেতরে ছিলেন। এমন সময় দেখা যায়, বিদ্যুতের খুঁটিতে বিস্ফোরণ হচ্ছে। পরে গুদামের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এ সময় ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজনকে জানাই, এখানে ওয়াশিং ও ডায়িং করার কিছু রাসায়নিক আছে। তিনি আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিসের লোকজনকে পানি দিতে না করা হয়। তারা পানি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, আমরা ৩টা ২১ মিনিটে খবর পাই, টঙ্গী রেলগেট পার হয়ে দোকানে আগুন লেগেছে। সন্ধা ৭টায় আগুন আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি। যেহেতু রাসায়নিকের আগুন, আবার জ্বলতে পারে। একেবারে নিয়ন্ত্রণে– এমন বলা যাচ্ছে না। আমাদের লোকজন কাজ করছে। এ সময় আমাদের পাঁচজন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে চারজনকে ঢাকা বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি ও আগুন লাগার কারণ জানতে কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটির মাধ্যমে রহস্য উদ্ঘাটন করা যাবে। এখন আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছি।
বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৪, তিনজন সংকটাপন্ন
গাজীপুরের টঙ্গীতে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তাসহ তিন কর্মীর অবস্থা গুরুতর। তারা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহতদের মধ্যে কর্মকর্তা জান্নাতুল নাঈমের ৪২ শতাংশ, ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদার শতভাগ, শামীম আহম্মদের শতভাগ ও জয় হাসানের শরীরের ৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দোলন বলেন, ওই ঘটনায় তাদের তিনজন ফায়ার ফাইটার ও একজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। তাদের বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসাধীন কর্মীদের দেখতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে যান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল। বার্ন ইনস্টিটিউটে দগ্ধ ফায়ার সদস্যদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। সেখানে কিছু সময় অবস্থান করেন তিনি। এ সময় তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, টঙ্গীতে রাসায়নিক গুদামে আগুন নির্বাপণের সময় তিন ফায়ার ফাইটার ও একজন কর্মকর্তা দগ্ধ হয়েছেন। তারা বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। সব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফায়ারকর্মীরা কাজ করে থাকেন; গতকালও তেমনি তারা কাজ করছিলেন। তবে বিস্তারিত ঘটনা জানার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান বলেন, চারজন ফায়ার সার্ভিসকর্মীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। বাকিদের সাধারণ শয্যায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
একে