আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক, রয়টার্স-এর সাবেক আন্তর্জাতিক ব্যুরো প্রধান এবং বাংলাদেশে কম্পিউটারভিত্তিক স্যাটেলাইট মারফত সংবাদ সরবরাহ প্রযুক্তির প্রবর্তনকারী এবং পাবনার কৃতীসন্তান আতিকুল আলমের আজ ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৫ সালের আজকের এই দিনে (২০ জুলাই) তিনি বগুড়া শ্বশুরালয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বনানী কবরস্থানে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আমিন।
সাংবাদিক আতিকুল আলম ১৯৩৪ সালের ৪ মে পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার হাশিমাবাদ (খাগরবাড়িয়া) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবি আবুল হাশেম তাঁর পিতা এবং আতিকা খাতুন তাঁর মা।
আতিকুল আলম ছিলেন বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক এবং আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে দেশের সর্বাধিক নন্দিত ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৯৩ সালে তিনি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সাংবাদিকতার পুরস্কার “দি এস্টর” লাভ করেন। এই উপমহাদেশে তিনি দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি এই পুরস্কারে ভূষিত হন। প্রথম ব্যক্তিটি হলেন ভারতের ‘দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মি. অরুন শুরী।
আতিকুল আলমের সাংবাদিকতা জীবন ছিল সুদীর্ঘ। ১৯৫২ সালে পাবনা শহরের ‘সাপ্তাহিক পাক হিতৈষী’ পত্রিকায় তাঁর হাতেখড়ি। এরপর কিছুদিন তিনি তৎকালীন ঢাকাস্থ ‘দি ডেইলি মর্নিং নিউজ’ এবং চট্টগ্রামের ‘দি ইস্টার্ন এক্সামিনার’ ও ‘দি ডেইলি ইফনিটি’তে কাজ করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি লাহোর থেকে প্রকাশিত ‘দি পাকিস্তান টাইমস’-এর চট্টগ্রাম সংবাদদাতা হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে তিনি ওই পত্রিকার ঢাকা ব্যুরো প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে বিবিসি সংবাদদাতা হিসেবে তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত হন। যুগপৎ তিনি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সংবাদ প্রতিষ্ঠান রয়টার্স-এর বাংলাদেশ সংবাদদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি একই সময়ে লন্ডনের দি গার্ডিয়ান, জার্মানির ডয়েচে ভেলে রেডিও এবং ওয়াশিংটনের ভয়েস অব আমেরিকার দক্ষিণ এশীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আতিকুল আলম ১৯৮১ সালে ঢাকাতে রয়টার্স-এর আন্তর্জাতিক ব্যুরো প্রতিষ্ঠা করেন এবং ব্যুরো প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনিই সর্বপ্রথম বাংলাদেশে কম্পিউটারভিত্তিক স্যাটেলাইট মারফত সংবাদ সরবরাহ প্রযুক্তি প্রবর্তন করেন।
১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণের পর কিছুদিন ঢাকার ‘দি ডেইলি মর্নিং সান’-এর সম্পাদক ছিলেন। সর্বশেষ তিনি দুটি মার্কিন দৈনিক পত্রিকা স্যাটেলাইট মাধ্যমে আংশিক সম্পাদনা করেন।
পেশাগত প্রয়োজনে বিশ্বের অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন। তাঁদের প্রায় সবাই বর্তমানে লোকান্তরিত। তাঁদের মধ্যে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী, ইরানের শাহ, পাকিস্তানের আইউব খান, শ্রীলঙ্কার শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে, মিসরের জামাল আবদুল নাসের এবং চীনের গুয়া কুয়ো ফেং।
আতিকুল আলম পেশাগত কারণে পৃথিবীর প্রায় ১০০টি দেশ ভ্রমণ করেন। দক্ষিণ এশিয়ার একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করেন।
সময় জার্নাল/ইএইচ