তালুকদার হাম্মাদ, ইবি প্রতিনিধি:
অপরুপ সৌন্দর্যময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ( ইবি) অন্যতম পরিচিত স্থান মীর মুগ্ধ সরোবর। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতিরঝিল নামে অধিক পরিচিত। একসময় শত শত বহিরাগত দর্শনার্থীদের ভীড় জমত এ সরোবরে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আড্ডায় মুখরিত থাকতো সরোবরের চারপাশ। কিন্তু প্রতিনিয়ত সৌন্দর্য হারানোর কারণে ধীরে ধীরে কমছে দর্শনার্থীদের ভীড় ও শিক্ষার্থীদের পদচারণা। ঝোপঝাড় আর ময়লা আবর্জনায় ভরে আছে সরোবরের চারপাশ। পাশে থাকা ময়লার ভাগাড় তৈরি করছে দূর্গন্ধ। কচুরিপানা ও শেওলাতে ভরে আছে সমগ্র সরোবর। নেই কোনো পানি প্রবাহ। এদিকে বাজেট স্বল্পতার কারণে শেওলা-কচুরিপনা পরিষ্কার করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন স্টেইট অফিস।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্ব পশ্চিম-উত্তর কোনে অবস্থিত এ সরোবর। সরোবরের পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার, প্রকৌশল ভবন ও আইআইইআর ভবন। তাছাড়া সরোবর ঘেঁষে নির্মিত হচ্ছে নতুন একাডেমিক ভবন। ক্লাসের ফাঁকে এবং বিকালে সরোবরের চারপাশে থাকা সিঁড়িতে বসে আড্ডা দেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া এখানে বিভিন্ন সংগঠন ও বিভাগ প্রোগ্রামের আয়োজন করে। প্রোগ্রামের পর নানা ধরনের খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলে রাখা হয় এখানে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ এ স্থানটি পরিচ্ছন্ন না করাতে ঝোপঝাড় ও আবর্জনার স্তুপে রুপান্তরিত হয়েছে স্থানটি। তাছাড়া সরোবরটির ঠিক উত্তর কোনে করা হয়েছে ময়লার ভাগাড়। এ ভাগাড় থেকে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় দূর্গন্ধ। এসব কারনেই কমেছে প্রোগ্রাম ও শিক্ষার্থীদের ভীড়।
জানা যায়, একসময় সারাবছর জুড়ে সরোবরটির মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হতো পরিষ্কার পানি, যাতে মুগ্ধ হতো দর্শনার্থীরা। কিন্তু নিয়মিত নিষ্কাশনের অভাবে এখন আর নেই পূর্বের মতো পানি প্রবাহ। বরং সমগ্র সরোবর জুড়ে এখন কচুরিপানা আর শেওলা। এছাড়া একসময় নিয়মিত অতিথি পাখির আগমণ ঘটতো এ সরোবরে। কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সেটিও এখন বিলুপ্ত হয়েছে। একসময় মনোমুগ্ধকর ফুল দিয়ে ঘেরা ছিল সমগ্র সরোবর। কিন্তু এখন সেগুলো না থাকায় কমেছে সৌন্দর্যের মাত্রা। এছাড়া সরোবরের চারপাশে নেই পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা। যে কারণে রাতে শিক্ষার্থীদের এ স্থানে চলাচল হয়ে যায় কষ্টসাধ্য। অন্যদিকে অন্ধকারে এখানে অবাধে বসে মাদকের আসর।
আল-হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী জায়েদ বিন ওসমান বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে আসার পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সৌন্দর্যবর্ধক জায়গার ব্যাপারে শুনেছি যা আমাদের মুগ্ধ করত। কিন্তু ক্যাম্পাসে এসে জায়গাগুলোকে সেভাবে পাইনি। বিশেষ করে মীর মুগ্ধ সরোবরের ব্যাপারে যা শুনে এসেছি ক্যাম্পাসে এসে তার ছিটেফোঁটাও আমাদের চোখে পড়েনি। গ্রীষ্ম আর শীতকালে লেকটিতে একেবারেই পানি থাকে না। আর এখন পানি থাকলেও পুরো লেক ভরে আছে কচুরিপানায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত এ সরোবরের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই।
স্টেইট অফিসের প্রধান আলাউদ্দিন আলাল বলেন, আমরা ১ মাস আগেই কচুরিপানা পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কয়েকদল শ্রমিকের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তারা কেউ ১ লাখ টাকার নিচে রাজি হয়নি। কিন্তু ট্রেজারার স্যার আমাদের বাজেট মাত্র ২৫ হাজার টাকা বাজেট দেওয়ায় সেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, কিছুদিন পর শীতকাল আসলে ওখানে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তার আগেই আমরা চারপাশ পরিষ্কার করে দিব। আমরা গত বছরই প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টে আমাদেরকে আবগত করে প্রোগ্রাম করার জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু সবাই আমাদেরকে না জানিয়ে প্রোগ্রাম করায় ওই জায়গা পরিষ্কার করা হয়না। এ ব্যাপারে সকলের সর্তক হওয়া দরকার।
এমআই