আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গাজা পুনর্গঠন ও দীর্ঘ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে নতুন শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক শেষে হোয়াইট হাউজ থেকে এ বিষয়ে বক্তব্য দেন ট্রাম্প। তবে তার প্রস্তাবিত ‘চিরস্থায়ী শান্তির’ এ উদ্যোগ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন কারণে বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
ট্রাম্পের দেওয়া পরিকল্পনায় রয়েছে বহু ধাপ যার মধ্যে বড় বাধা হিসেবে রয়েছে বন্দি ও জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে বিরোধ, আন্তর্জাতিক নজরদারি, হামাসের ভবিষৎ এবং গাজার ভাগ্য নির্ধারণ। বিশ্লেষকদের মতে, এসব স্পর্শকাতর ইস্যু মোকাবিলা করা না গেলে পুরো প্রক্রিয়াই ভেস্তে যেতে পারে।
১. বন্দি মুক্তি
ইসরায়েলে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ২৫০ জন ও আরও ১,৭০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাবকে বড় নিরাপত্তা ছাড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভুক্তভোগী ইসরাইয়েলি পরিবারের সদস্যরা এবং ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো এর তীব্র বিরোধিতা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে ওই ২৫০ বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বিল পাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
২. হামাসকে সাধারণ ক্ষমা
হামাস যোদ্ধাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ও অবাধ চলাচলের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবে আতঙ্কে রয়েছে ইসরায়েলের সাধারণ নাগরিকরা। এর ফলে হামাস বিদেশ থেকে আবারও কার্যক্রম চালাতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
৩. আন্তর্জাতিক নজরদারি
ট্রাম্প ও সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার নেতৃত্বে একটি 'শান্তি পরিষদ' গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ প্রস্তাব ফিলিস্তিনিদের কাছে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণের মতো মনে হতে পারে এবং মার্কিন হস্তক্ষেপের বিষয়কে মেনে নাও নিতে পারে ।
৪. গাজার নিরস্ত্রীকরণ ও হামাসের অস্ত্র জমা
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে হামাসের অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে এবং সকল ধরণের অস্ত্র জমা নেওয়া হবে। তবে অতীতে এ ধরনের নজরদারির প্রস্তাব ব্যর্থ হওয়ায় এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৫. অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধিতা
হামাসের প্রতি যেকোনো ছাড়ের বিরোধীতা করবে ইসরায়েলে ডানপন্থী মন্ত্রী বেজালেল স্মোতরিচ, ইতামার বেন-গভির এবং ইয়েশা কাউন্সিল । অপরদিকে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ মনে করছে, এতে তাদের অবস্থান দুর্বল হবে এবং এসব সংস্কারের শর্ত মেনে নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
৬. অস্পষ্ট সময়সীমা
গাজার নিরস্ত্রীকরণের ওপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হলেও, কতদিনের মধ্যে তা করা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি।
গাজায় চলমান দুই বছরের গণহত্যা বন্ধ করার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের এ প্রস্তাব একটি বড় মাইলফলক। তবে পারস্পরিক অবিশ্বাস, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ, শর্তের অপব্যবহারের আশঙ্কা ও বাস্তবায়নের পথে একাধিক বড় বাঁধা চুক্তিকে কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ করে দিতে পারে। ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মধ্যে হওয়া ঐতিহাসিক অন্যান্য চুক্তির মত এ শান্তি প্রস্তাবও ব্যর্থ হতে পারে।
এমআই