আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গাজায় অবরোধ ভাঙার চেষ্টায় ইতালি থেকে রওয়ানা দিয়েছে আরও একটি ফ্লোটিলা। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটির সাংবাদিক হাসান মাসউদ বর্তমানে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি নৌযানে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, আমরা সব ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করছি। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, কয়েকটি নৌযান এখনো গাজার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যদি একটি নৌযানও গাজায় পৌঁছায়, তাহলে অবরোধ ভাঙার লক্ষ্য আংশিকভাবে সফল হবে।
তিনি জানান, ফ্লোটিলার নৌযানে থাকা আইনজীবীরা ইসরায়েলের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও সামুদ্রিক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ সংগ্রহ করছেন। এসব তথ্য জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতে পাঠানো হবে।
আল জাজিরার এ সাংবাদিক আরও বলেন, আরেকটি ফ্লোটিলা ইতালির সিসিলি থেকে গাজার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে। নতুন ফ্লোটিলার যাত্রা প্রমাণ করে যে, কর্মীরা এখনো গাজার ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে খাদ্য, পানি ও ওষুধ পৌঁছাতে বদ্ধপরিকর এবং ইসরায়েলের পূর্ণ অবরোধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন।
ফ্রিডম ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকারে দেখা গেছে, এই বহরে ৯টি নৌযান রয়েছে। সেগুলো এই মুহূর্তে গ্রিসের উপকূলে রয়েছে।
ইসরায়েলি বাধার মুখে সুমুদ ফ্লোটিলা
অন্যদিকে, গাজামুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজ থেকে আটক কর্মীদের ইসরায়েলে নিয়ে যাচ্ছে দেশটির কমান্ডোরা। আটক কর্মীদের মধ্যে সুইডিশ পরিবেশবাদী আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন। এ তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সংস্থাটির দাবি, আটক সবাই ‘নিরাপদ ও সুস্থ আছেন’। তাদের ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, আটক ব্যক্তিদের ইউরোপে পাঠাতে ‘ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়া’ শুরু করা হবে।
খবরে বলা হয়েছে, গত রাত থেকে ইসরায়েলি নৌ কমান্ডোরা ফ্লোটিলার অন্তত ৪৪টির মধ্যে ২১টি নৌযান আটক করেছে। এসব নৌযানে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর চেষ্টা চলছিল, যা অবরোধ ভাঙার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ।
গাজার জলসীমায় ফ্লোটিলার জাহাজ
জানা গেছে, ইসরায়েলের বাধা পেরিয়ে গাজার জলসীমায় ঢুকে পড়েছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি জাহাজ। পথে রয়েছে আরও ২৩টি। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, মিকেনো নামে ওই জাহাজ বর্তমানে গাজার জলসীমায় অবস্থান করছে। তবে সেটি ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে পড়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়।
আল জাজিরা জানিয়েছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক কর্মী-সামাজিক আন্দোলনকারীকে বন্দি করেছে ইসরায়েল। গাজার অবরোধ ভেঙে মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে যাওয়া এই বহরে ৪০টিরও বেশি জাহাজ ছিল।
এর আগে ইসরায়েলি নৌবাহিনী ফ্লোটিলার জাহাজগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়, জলকামান ছুড়ে আক্রমণ চালায় এবং আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে কর্মীদের আটক করে।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বলছে, এই বাধা তাদের মিশন থামাতে পারবে না। সংগঠনটির ভাষ্যমতে, অবৈধভাবে চালানো ইসরায়েলি বাধা সত্ত্বেও তারা গাজার অবরোধ ভাঙতে এবং একটি মানবিক করিডোর খুলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাদের দাবি, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় অনাহারে থাকা ফিলিস্তিনিদের জন্য এই নৌবহর খাদ্য ও মানবিক সহায়তা বহন করছে।
বাংলাদেশের শহিদুল আলম ছাড়াও সুমুদ ফ্লোটিলায় রয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রুহি আক্তারও। শহিদুল আলম ‘কনশায়েন্স’ নামে একটি বড় জাহাজে রয়েছেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেটি আটক হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
এমআই