নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্বের বৃহত্তম হালাল পণ্য প্রদর্শনী মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হালাল শোকেস (MIHAS) ২০২৫-এ অংশ নিয়ে বাংলাদেশের কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার শিল্পের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান রিমার্ক এইচবি লিমিটেড অর্জন করেছে এক নজিরবিহীন সাফল্য। ২১টি দেশের ১১৮টিরও বেশি আন্তর্জাতিক কোম্পানির সরাসরি আগ্রহ এবং প্রায় ২৫ লক্ষ মার্কিন ডলারের সম্ভাব্য রপ্তানি অর্ডার রিমার্কের ঝুলিতে এসেছে এবারের আয়োজনে।
রিমার্কের নিওর, লিলি, সিওডিল, হারল্যান, স্কিনমিন্ট, অরিক্স, ক্যাভোটিন, অ্যাকনল এবং ডার্মাইউ ব্র্যান্ডের হালাল সার্টিফায়েড ২০০টিরও বেশি পণ্য এবারের মেলায় প্রদর্শিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ক্রেতা ও রিটেইল চেইন প্রতিনিধিরা রিমার্কের পণ্য ও উৎপাদন প্রযুক্তিতে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বিশেষ করে নিওরের সানস্ক্রিন, ফাউন্ডেশন, লিপ বাটার ও অ্যান্টি-এজিং সিরিজ, সিওডিলের ফলিক্সিল শ্যাম্পু ও স্কিন রিনিউয়াল আইটেম, এবং হারল্যান ও লিলি ব্র্যান্ডের ফেসওয়াশ, লিপস্টিক ও স্কিনক্রিম পণ্যগুলোর প্রতি আগত দর্শকদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
প্রদর্শনীর সময়েই রিমার্ক একাধিক দেশের ক্রেতাদের কাছ থেকে রপ্তানি অর্ডার পায়। এছাড়া, কোম্পানিটির জিএমপি সার্টিফায়েড হালাল ফ্যাক্টরিতে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর জন্য প্রাইভেট লেবেল পণ্য উৎপাদন ও উন্নতমানের প্যাকেজিং সল্যুশন সংক্রান্ত বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। অনেক ক্রেতা সরাসরি অর্ডার প্রদান করেছেন, যা রিমার্কের উৎপাদন সক্ষমতা, মান নিয়ন্ত্রণ এবং বিশ্বমানের প্যাকেজিং প্রযুক্তির প্রতি তাদের আস্থার বহিঃপ্রকাশ।
মালয়েশিয়ার জাতীয় ঐক্য মন্ত্রণালয়ের সচিব জেনারেল দাতো’ হাসলিনা বিনতি আবদুল হামিদ রিমার্কের হারল্যান ব্র্যান্ডের লিপস্টিক ব্যবহার করে এর গুণগত মান ও বিশ্বমানের প্যাকেজিং দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "বাংলাদেশে তৈরি এই পণ্যের মান আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতা রাখে। মালয়েশিয়াতে এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়বে বলে আমি আশাবাদী।"
এছাড়াও প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল, যার মধ্যে ছিলেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোছাম্মৎ শাহানারা মনিকা এবং বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক বেবি রানী কর্মকার। তারা রিমার্কের স্টল ঘুরে দেখেন এবং পণ্যের গুণমান ও প্যাকেজিং-এর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
রিমার্ক ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইউনিটের ডেপুটি
এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রাশেদুল ইসলাম জানান, "প্রদর্শনীর শুরু থেকেই আমরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। রপ্তানির এই নতুন দ্বার আমাদের জন্য যেমন উৎসাহব্যঞ্জক, তেমনি দেশের জন্যও এটি গর্বের বিষয়। বিশ্ববাজারে হালাল কসমেটিকসের চাহিদা বাড়ছে, এবং বাংলাদেশ এই শিল্পে অংশগ্রহণ করে একটি নতুন পরিচয় পেয়েছে।"
তিনি আরও জানান, রিমার্ক ইতিমধ্যে সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও আজারবাইজানে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বাজারে প্রবেশের পরিকল্পনা রয়েছে।
এবারের মিহাস ২০২৫-এ অংশ নেয় বিশ্বের ৮০টি দেশের ১,০১৯টি কোম্পানি, যেখানে ২,৩৮০টিরও বেশি স্টল ছিল। প্রায় ৪৫ হাজার দর্শনার্থী এই প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। আয়োজনের মধ্যে ছিল ইনভেস্টমেন্ট ও পারচেজিং মিশন, বিজনেস সেমিনার, অ্যাওয়ার্ড শো এবং নলেজ হাব।
বাংলাদেশ এবার চতুর্থবারের মতো মেলায় অংশ নেয় এবং মোট ১২টি বুথ বরাদ্দ পায়, যার মধ্যে দুইটি পরিচালনা করে বাংলাদেশ হাইকমিশন। খাদ্য, কসমেটিকস, হস্তশিল্প, সিরামিক, পাটজাত এবং পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতের পণ্য উপস্থাপন করা হয়।
রিমার্কের এই অর্জন প্রমাণ করে যে, গুণগত মান, উদ্ভাবন, এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বাংলাদেশ কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার খাতে রপ্তানির নতুন দিগন্তে প্রবেশ করতে সক্ষম। ২৫ লাখ ডলারের রপ্তানি সম্ভাবনা এবং ১১৮টির বেশি প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ বাংলাদেশের কসমেটিকস খাতে বৈশ্বিক সম্ভাবনার শক্ত ভিত্তি স্থাপন করেছে। এটি শুধু রিমার্কের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের রপ্তানি খাত এবং ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডিং-এর জন্য একটি ঐতিহাসিক সাফল্য।
হালাল কসমেটিকসের বাজার প্রতি বছর ৮% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুসলিম ভোক্তাদের পাশাপাশি নিরাপদ, নৈতিক ও অ্যালার্জি-ফ্রি পণ্যের খোঁজে অমুসলিম ভোক্তারাও এখন হালাল পণ্যের প্রতি আগ্রহী। এই প্রেক্ষাপটে রিমার্কের অংশগ্রহণ একটি কৌশলগত সফল পদক্ষেপ।
এর আগে বিশ্বের বৃহত্তম কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার পণ্যের প্রদর্শনী কসমোপ্রফ (সিবিই আশিয়ান)-২০২৫এ অংশ নিয়ে প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলারের কসমেটিকস পণ্যের এবং বাংলাদেশে উৎপাদিত রিমার্ক এলএলসি ইউএসএ এর মেডিকেটেড স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড সিওডিল দুবাই ডার্মা থেকে মিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ পায়।
এমআই