রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

শিক্ষক: শুধু পাঠদাতা নয়, অনুপ্রেরণার আলোকবর্তিকা

রোববার, অক্টোবর ৫, ২০২৫
শিক্ষক: শুধু পাঠদাতা নয়, অনুপ্রেরণার আলোকবর্তিকা

আজ ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ১৯৯৪ সাল থেকে ইউনেস্কো এবং এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (EI) যৌথভাবে বিশ্বব্যাপী ১০০টিরও বেশি দেশে এই দিনটি পালন করে আসছে। শিক্ষকতা হচ্ছে একটা মহান ও মর্যাদাপূর্ণ পেশা। এই মহান পেশাজীবীদের শিক্ষা ও উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। এ দিবসটি উপলক্ষে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে, যা স্বপ্নদ্রষ্টা ও পথপ্রদর্শক শিক্ষকদের অবদানের কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।

​একজন শিক্ষক শুধু একজন পাঠদানকারী নন, তিনি একজন অনুপ্রেরণাদাতা। তিনি শিক্ষার্থীদের মনে জ্ঞানের খুঁতপিপাসাকে জাগ্রত করে তোলেন। পথভ্রষ্ট শিক্ষার্থীকে দেখাতে পারেন আলোর পথ।

​তেমনি প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শিক্ষানবিশকালে এক বা একাধিক শিক্ষক তার জ্ঞানপিপাসাকে আলোড়িত করে থাকেন। জাগ্রত করে তার মানবিক গুণাবলী, সাহায্য করেন তার জ্ঞানচক্ষু খুলতে। ধাবিত করেন তার নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের দিকে।

​এ ব্যাপারে গতকাল শনিবার (৪ অক্টোবর) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থীর মতামত তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিনিধি আবুল খায়ের

শুধু অঙ্ক নয় শিখিয়েছেন জীবনের সমীকরণ 

শিক্ষক দিবস মানেই শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতার এক বিশেষ দিন। আমার জীবনে যে কয়েকজন শিক্ষক অমর হয়ে আছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম সন্জু স্যার। তিনি একসময় কুর্মিটোলার বি এফ শাহীন কলেজের শিক্ষক ছিলেন। আমি তখন ভুরুঙ্গামারীতে পড়াশোনা করতাম। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তিনি আমাকে সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিত পড়াতেন।

সন্জু স্যার শুধু একজন শিক্ষক নন, আমার কাছে তিনি ছিলেন পথপ্রদর্শক—অনুপ্রেরণার আলোকবর্তিকা। গণিত অনেকের কাছেই জটিল ও ভয়ংকর মনে হয়, কিন্তু তাঁর পড়ানোর ভঙ্গি ছিল এমন প্রাণবন্ত ও সহজবোধ্য যে কঠিন অঙ্কও মুহূর্তেই বোধগম্য হয়ে যেত। তিনি কখনো মুখস্থবিদ্যায় বিশ্বাস করতেন না; বরং প্রতিটি সূত্র ও নিয়মের পেছনের যুক্তিটা আমাদের বুঝিয়ে দিতেন। এতে পড়াশোনার প্রতি আমার আগ্রহ বহুগুণ বেড়ে যায়।

কৈশোরের নানা অস্থিরতার মধ্যে তিনি আমাকে শুধু অঙ্ক শেখাননি, বরং শিখিয়েছেন ধৈর্য, শৃঙ্খলা ও অধ্যবসায়ের মূল্য। ব্যর্থতার সময়ে স্যার প্রায়ই বলতেন

“অঙ্কের মতোই জীবনের প্রতিটি সমস্যারও সমাধান আছে, শুধু সঠিক পথে এগোতে জানতে হবে।”

এই কথাগুলো আজও আমার জীবনের দিকনির্দেশনা হয়ে আছে।

শিক্ষক দিবসে তাঁকে স্মরণ করতে গিয়ে মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা—পড়া না পারলে তাঁর ধৈর্যশীল বোঝানো, পরীক্ষার আগে মনোবল বাড়ানোর কথা, কিংবা ছোট্ট সফলতায় তাঁর আন্তরিক হাসি।

আমি কৃতজ্ঞ যে জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমন একজন মহান শিক্ষককে পেয়েছিলাম। আজকের এই দিনে আমার একান্ত কামনা, সন্জু স্যার সুস্থ থাকুন, দীর্ঘজীবী হোন। তাঁর প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী যেন তাঁর জ্ঞান ও প্রেরণার আলোকে আলোকিত হতে পারে।

“শিক্ষক হলেন সেই প্রদীপ, যিনি নিজে জ্বলে অন্যকে আলো দেন।”

মো. দিদারুজ্জামান
ইংরেজি বিভাগ 

মমতা আর প্রজ্ঞায় গড়া এক আদর্শ শিক্ষক 

প্রফেসর মিলি রহমান — এক মমতাময়ী দিকনির্দেশক শিক্ষক। তিনি শুধু পাঠদানেই সীমাবদ্ধ নন, বরং শিক্ষার্থীদের জীবনে হয়ে ওঠেন অনুপ্রেরণা, সাহস আর আলোর উৎস।
জয়েন্ট ডিরেক্টর, রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন সেল এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফি ক্লাবের চিফ অ্যাডভাইজার হিসেবে তিনি দায়িত্ব ও স্নেহের অনন্য সমন্বয় ঘটিয়েছেন।

মিলি রহমান ম্যাডাম শিক্ষার্থীদের পাশে থাকেন অভিভাবকের মতো—সমস্যায় দিকনির্দেশনা দেন, ভুল হলে ভালোবাসায় সংশোধন করেন। তাঁর ইতিবাচক মনোভাব ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
তিনি বিশ্বাস করেন, শিক্ষক তখনই সফল, যখন শিক্ষার্থীরা নিজেদের ভেতরের শক্তি চিনে নিতে শেখে।

শিক্ষক দিবসে আমরা কৃতজ্ঞ হৃদয়ে স্মরণ করছি আমাদের প্রিয় প্রফেসর মিলি রহমান ম্যাডামকে—যিনি শিখিয়েছেন, “শিক্ষক হওয়া মানে কেবল শেখানো নয়; প্রতিটি শিক্ষার্থীর পাশে থাকা।”

মো. লিটন মাহমুদ
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ 

একজন শিক্ষকের ছায়ায় আমার পথচলা

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই আমার জীবনে এক বিশেষ মানুষ সবসময় অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছেন — আমার এক প্রিয় শিক্ষক। শুরু থেকেই তিনি শুধু পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না; বরং প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন, আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন।

তার পরামর্শ ও প্রেরণাতেই আমি নিজের সীমাবদ্ধতা ভেঙে আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছি। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তার আন্তরিক দিকনির্দেশনা, সহানুভূতি ও ইতিবাচক মনোভাব আমাকে শিখিয়েছে — সঠিক মানুষ ও সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে জীবনে এগিয়ে যাওয়া কখনোই অসম্ভব নয়।

তিনি সবসময় বলতেন, “জীবনে অনেক সমস্যা আসবে, কিন্তু সব সমস্যা অতিক্রম করেই তোমাকে সামনে এগোতে হবে।”
আরও বলতেন, “ভালো কিছু করতে হলে কখনোই মিথ্যা কথা বলবে না, সৎ পথে চলার চেষ্টা করবে।”

শিক্ষক দিবসে যখন প্রিয় শিক্ষককে স্মরণ করি, তখন মনে হয় — আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য ছিল তার মতো একজন শিক্ষককে পাওয়া। তার ছায়ায় শেখা জীবনের এই পাঠগুলোই আজ আমার চলার প্রেরণা।

লিমা আক্তার 
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

শিক্ষক: জীবনের আলোকবর্তিকা

আমার শিক্ষাজীবনের প্রাথমিক স্তর থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত দুটি ব্যক্তিত্ব আমার জীবনে রেখেছেন গভীর ছাপ। কেজি শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত আমার গৃহশিক্ষক ছিলেন জনাব বশির আহমেদ। তাঁর স্নেহ, পরিশ্রম আর নিবিড় তত্ত্বাবধানে পড়াশোনার প্রতি আমার ভালোবাসা জন্ম নেয়। তিনি শুধু আমাকে পাঠ শিখাননি, বরং শিখিয়েছেন নিয়মিততা, অধ্যবসায় আর দায়িত্ববোধের মানে। তাঁর উৎসাহেই আমি পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পেরেছি, ভালো ফলাফল করার প্রেরণাও পেয়েছি।

অষ্টম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আমি কোচিং করেছি মোশাররফ হোসেন স্যারের কাছে। তাঁর কাছ থেকে আমি পেয়েছি শুধু পাঠ্যজ্ঞান নয়, জীবনের দীক্ষাও। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন নেতৃত্বের গুণাবলি, মানুষকে ভালোবাসার শিক্ষা এবং মানুষের ভালোবাসা অর্জনের মূল্যবোধ।

একদিন স্যার বলেছিলেন এক গভীর শিক্ষণীয় কথা—

“মানুষের কথায় কখনো কান দেবে না, আর তুমি এমন স্বপ্ন দেখবে—যে স্বপ্নে মানুষ হাসে, তখন বুঝবে তুমি সঠিক পথে এগিয়ে চলেছ।”

এই কথাগুলো আজও আমার জীবনের অনুপ্রেরণার উৎস।
বশির স্যার ও মোশাররফ স্যারের শিক্ষা, দিকনির্দেশনা আর অনুপ্রেরণা আমার জীবনপথে এখনো আলোকবর্তিকা হয়ে আছে।

সাব্বির হোসাইন 
ফার্মাসি বিভাগ

সময় জার্নাল/একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল