মোঃ এমদাদ উল্যাহ, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে দেয়া আয়-ব্যয় হিসেবে ১৪ লক্ষ টাকারও বেশি গরমিল। এ নিয়ে দেয়া হয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিশ। তবে বিদ্যালয়ের হিসেব বুঝিয়ে না দিয়ে প্রধান শিক্ষক মোঃ কামরুজ্জামান আগামী ১৪ অক্টোবর যাচ্ছেন অবসরে। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ে।
বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় হিসাব নিরীক্ষা কমিটি সূত্রে জানা যায়, ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসেব যাচাই বাছাই করা হয়েছে। যার মধ্যে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, সরকারি অনুদান, টিউশন ফি, উন্নয়ন তহবিল, শিক্ষার্থীদের বেতন, রেজিস্ট্রেশন ফি, সেশন ফি, ফরম পূরণ ফি, পরীক্ষার ফিসহ অন্যান্য ফি এবং ব্যাংক হিসাব ও অন্যান্য আয়-ব্যয়ের হিসেব পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনায় আগস্ট ২০২১ থেকে আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত ক্লোজিং ব্যালেন্স ১৭,৭৪,২৩২ টাকা থাকার পরিবর্তে ক্যাশ বই অনুসারে ক্লোজিং ব্যালেন্স পাওয়া যায় ৩,৬৭,৪৫১ টাকা। আর্থিক অনিয়ম ও গরমিল রয়েছে ১৪ লক্ষ ৬ হাজার ৭৮১ টাকা। এরপর গরমিলে জড়িত প্রধান শিক্ষক মোঃ কামরুজ্জামানকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৩ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। নিরীক্ষা কমিটির আহবায়ক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন মজুমদার, সদস্য আলমগীর আলম মাঝি, রোকেয়া আক্তার, মাহবুবুল হক ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে ২০২১-২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রত্যেক মাসের অনিয়ম ছক আকারে তুলে ধরা হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, সাবেক রেলমন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুজিবুল হকের আশির্বাদে ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান উপজেলা আ’লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামান। ওই সময় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আন্দোলন নিয়ে মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। উপজেলা আ’লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার সুবাদে তিনি ছিলেন প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। শুরু থেকেই ছিল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সকল ফি অতিরিক্ত আদায়সহ অনিয়ম দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার। বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতেন নিজের ইচ্ছে মতো। দলীয় দাপটের কারণে মুখ খুলতেন না কেউ। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পরই তার বিরুদ্ধে উঠে দূর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মোঃ কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেভাবেই হোক অনিয়মের সমাধান করা হয়েছে। এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি’।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম মজুমদার প্রধান শিক্ষক মোঃ কামরুজ্জামানের অনিয়মের তথ্যটি স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের প্রতি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম মীর হোসেন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক মোঃ কামরুজ্জামানের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো’।
এমআই