বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫

জয়ী হওয়ার পর মামদানির সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ৬, ২০২৫
জয়ী হওয়ার পর মামদানির সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি নানা দিক থেকেই বেশ উল্লেখযোগ্য। ১৮৯২ সালের পর তিনি এই শহরের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম মুসলিম মেয়রও তিনি।

গত বছর সামান্য অর্থ এবং পরিচিতি নিয়ে কোনো রকম প্রাতিষ্ঠানিক দলীয় সমর্থন ছাড়াই এই প্রতিযোগিতার দৌঁড়ে অংশ নিয়েছিলেন জোহরান মামদানি, যা সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো ও রিপাবলিকান মনোনীত প্রার্থী কার্টিস সিলওয়ার বিরুদ্ধে অসাধারণ জয় এনে দিয়েছে তাকে।

তিনি তরুণ ও ক্যারিশম্যাটিক, নিজের প্রজন্মের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও একটা স্বাভাবিক স্বাচ্ছন্দ্য রয়েছে তার। জোহরান মামদানি ঠিক এমন একজন রাজনীতিবিদ, যেমনটা বামপন্থিদের অনেকেই বহু বছর ধরে খুঁজছেন।

তার জাতিগত পরিচয় দলের ভিত্তির বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করে। তিনি কোনো রাজনৈতিক লড়াই থেকে পিছপা না হয়ে গর্বের সঙ্গে বামপন্থিদের উদ্দেশ্যগুলোকে সমর্থন করেছেন- যেমন বিনামূল্যে শিশু যত্নের ব্যবস্থা, গণপরিবহন সুবিধা সম্প্রসারণ এবং মুক্ত বাজার ব্যবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ।

সাম্প্রতিক সময়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন সাধারণ শ্রেণি-পেশার ভোটারদের কাছে অগ্রাধিকার পাওয়া মূল অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে মনোনিবেশের দারুণ ক্ষমতা দেখিয়েছেন মামদানি, তবে তিনি বামপন্থিদের সাংস্কৃতিক নীতিগুলোকেও নাকচ করেননি।

সমালোচকরা সতর্ক করেছেন যে, এ ধরনের প্রার্থী আমেরিকার বিস্তৃত অংশে অনির্বাচিত এবং রিপাবলিকানরা আনন্দের সাথেই স্ব-ঘোষিত এই ডেমোক্রেটিক সোশালিস্টকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অতি-বাম মুখ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তারপরও মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্ক সিটিতে, বিজয়ীর বেশে আবির্ভূত হন মামদানি।

নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর কুওমোর বাবাও একজন গভর্নর ছিলেন। তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাকে পরাজিত করে মামদানি সেই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে পরাজিত করেছেন, যেটিকে বামপন্থিদের অনেকেই তাদের দল এবং জাতির সাথে যোগাযোগহীন বলে মনে করেন।

এ কারণেই মেয়র পদে মামদানির প্রচারণা গণমাধ্যমের ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং অর্থ হলো, মেয়র হিসেবে তার সাফল্য এবং ব্যর্থতাগুলোও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

১২ বছর আগে, ডেমোক্র্যাট বিল ডি ব্লাসিও নিউইয়র্ক সিটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য মোকাবিলার জন্য একটি প্ল্যাটফর্মে মেয়র পদে জয়লাভ করেছিলেন। বামপন্থি আমেরিকানদের প্রত্যাশা ছিল যে ব্লাসিও প্রশাসন কার্যকর উদার শাসনের একটি জাতীয় উদাহরণ তুলে ধরবে।

তবে ডি ব্লাসিও আট বছর পর ব্যাপকভাবে অজনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এবং নতুন নীতি বাস্তবায়নে মেয়র হিসেবে পাওয়া ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার সঙ্গে লড়াই করে অনেকটা মিশ্র রেকর্ড নিয়েই দফতর ছাড়েন।

মামদানিকে এখন সেই একই প্রত্যাশা আর সীমাবদ্ধতার সাথে লড়াই করতে হবে। নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল একজন ডেমোক্র্যাট। তিনি বলেছেন, মামদানির উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কর বৃদ্ধির বিরোধিতা করবেন এবং পর্যাপ্ত তহবিল থাকা সত্ত্বেও মামদানি এককভাবে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না।

কর্পোরেট ও অভিজাত ব্যবসায়ী যারা নিউইয়র্ক শহরকে তাদের বাড়ি বলে অভিহিত করে ম্যানহাটনকে বিশ্বের আর্থিক রাজধানীতে পরিণত করেছেন, তাদের তীব্র সমালোচক হিসেবে প্রচারণা চালিয়েছিলেন মামদানি। তবে কার্যকরভাবে শাসন পরিচালনা করতে এখন তাকে সম্ভবত সেই সব স্বার্থ-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক ধরনের শান্তিপূর্ণ অবস্থান তৈরি করতে হবে যা তিনি ইতোমধ্যেই শুরু করেছেন।

মামদানি গাজা যুদ্ধ ইস্যুতে ইসরায়েলের আচরণের নিন্দাও করেছেন এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্ক শহরে পা রাখলে তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গ্রেফতার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমন একটি প্রতিশ্রুতি মামদানির মেয়াদের কোনো এক পর্যায়ে পরীক্ষার মুখে পড়তে পারে।

তবে এগুলো সম্ভবত আগামী দিনগুলোতে সমস্যা হিসেবে সামনে আসবে। আপাতত মামদানিকে জনসাধারণের মঞ্চে নিজেকে সংজ্ঞায়িত করার কাজ শুরু করতে হবে তার বিরোধীরা সেটা শুরু করার আগেই।

যদিও তার প্রচারণা জাতীয় মনোযোগ আকর্ষণ করেছে তবুও তিনি এখনো আমেরিকার বেশিরভাগ অংশের কাছেই একটি ফাঁকা স্লেট, যাতে কিছু লেখা নেই।

সিবিএসের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে যে ৪৬ শতাংশ আমেরিকান জনগণ নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচন ‘মোটেও ভালোভাবে অনুসরণ করছে না’। এটি মামদানি এবং আমেরিকান বামপন্থিদের জন্য সুযোগ আর চ্যালেঞ্জ দুটোই তৈরি করে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে রক্ষণশীলরা নবনির্বাচিত এই মেয়রকে সমাজতান্ত্রিক হুমকি হিসেবে এমনভাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করবেন- যার নীতি এবং অগ্রাধিকার আমেরিকার বৃহত্তম শহরকে ধ্বংস করে দেবে আর সমগ্র জাতি যদি তা গ্রহণ করে তবে এটি একটি বিপদ ডেকে আনবে।

নিউইয়র্কের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রাখা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মামদানির সাথে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে অবশ্যই গ্রহণ করবেন এবং নতুন মেয়রের জীবনকে জটিল করে তুলতে ট্রাম্পের কাছে নানা উপায় রয়েছে।

মামদানিকে ডেমোক্র্যাটিক নেতাদের মন জয় করতেও চাপ দেওয়া হবে, যেমন নিউ ইয়র্কের সিনেটর এবং সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার, যিনি কখনো তার প্রচারণাকে সমর্থন করেননি।

তবে মামদানির সুবিধা হচ্ছে যে তার ওপর অতীতের বোঝা নেই, যা তার রাজনৈতিক বিরোধীরা প্রচারণার সময় ব্যবহার করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল।

জানুয়ারিতে যখন তিনি শপথ নেবেন, তখন শুরু থেকেই রাজনৈতিক খ্যাতি গড়ে তোলার সুযোগ পাবেন মামদানি এবং তার বিরোধিতা করলে ট্রাম্প কেবল মামদানির কাজের জন্য আরো বৃহত্তর প্ল্যাটফর্মই তৈরি করবেন।

তার রাজনৈতিক প্রতিভা এবং ক্ষমতা তাকে এতদূর এনেছে, যা কোনো ছোট কৃতিত্ব নয়। তবে সামনের বছরগুলোতে তার জন্য অপেক্ষা করা কঠিন পরীক্ষার তুলনায় এটি কিছুই নয়।

নিউইয়র্কবাসীরা তাদের শহরকে মহাবিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু ভাবতে পছন্দ করে, কিন্তু শহরটির মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হওয়া একমাত্র নির্বাচনী প্রতিযোগিতা ছিল না। এটি সম্ভবত বর্তমান নির্বাচনী মেজাজের সেরা ইঙ্গিতও ছিল না।

নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়া- গত বছর যে রাজ্যগুলোতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিস। উভয়ই গভর্নর নির্বাচন করেছে এবং উভয় রাজ্যেই ডেমোক্র্যাটরা আরো ভালো ব্যবধানে জয়লাভ করেছে।

মামদানির বিপরীতে শেরিল ও স্প্যানবার্গার আরো বিনয়ী নীতিমালার প্রেসক্রিপশনসহ প্রতিষ্ঠান-সমর্থিত মধ্যপন্থি প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তবে তিনজনই সাশ্রয়ী মূল্য আর জীবনযাত্রার ব্যয়ের ওপর দৃষ্টি দিয়েছেন। এক্সিট পোল দেখিয়েছে যে, অর্থনীতি আবারও ভোটারদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।

মঙ্গলবার বামপন্থি ও কেন্দ্রীয় ডেমোক্র্যাটরা জয়লাভ করায়, ভবিষ্যতের নির্বাচনী সাফল্য পেতে ডেমোক্র্যাটদের কী ধরনের নীতি এবং প্রার্থীদের নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত সে বিষয়ে অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে যেতে পারে।

গত সপ্তাহে মামদানি অবশ্য জোর দিয়ে বলেছিলেন যে দলে সকল ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য প্রচুর জায়গা রয়েছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি এটি এমন একটি দল হওয়া উচিত যেখানে প্রকৃতপক্ষে আমেরিকানরা নিজেদেরকে দেখতে পান, যা কেবল রাজনীতি সংস্লিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তির প্রতিচ্ছবি নয়। আমার কাছে, আমাদের সকলকে যা একত্রিত করে তা হলো আমরা কাদের সেবা করার জন্য লড়াই করছি এবং তারা হলো শ্রমজীবী মানুষ।

এই দৃষ্টিভঙ্গি পরের বছর পরীক্ষিত হবে, যখন দেশজুড়ে ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য তাদের প্রার্থী নির্বাচন করতে ভোটদানে যাবে। তখন উত্তেজনা নিশ্চিতভাবেই বৃদ্ধি পাবে এবং ঐতিহ্যবাহী সমস্যাগুলোও আবার দেখা দিতে পারে। তবে আপাতত এক রাতের জন্য ডেমোক্র্যাটরা সত্যিই একটি বড়, সুখী দল।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল