এম. পলাশ শরীফ, বাগেরহাট:
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়নে ৫১ টি পরিবার সুপেয় পানির অভাবে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। ভুগছে নানাবিধ পেটের পীড়া সহ পানিবাহিত রোগে। তাদের একমাত্র ভরসা খালের লবনাক্ত পানি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অত্র ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম খাউলিয়া গ্রামের ৫১টি পরিবারের প্রায় ৪শ’ মানুষ কয়েক যুগ ধরে বসবাস করে করছে। বেশিরভাগ পরিবারগুলো আয়ের উৎস মৎস্য ও কৃষি নির্ভর। স্থানীয় ক্ষেত খামারে দৈন্দদিন মজুরিতে কাজ করে সংসার চালায়। আবার অনেকে সংসারের তাগিদে ছেলে মেয়ে পরিবার পরিজন রেখে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ফেনী শহরে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চলে তাদের। এ গ্রামের বাসিন্দারা বছরের পর বছর ধরে পানি খালের লবনাক্ত নদীর পানি পান করছে। এ পানিতেই চলে তাদের রান্না, খাওয়া, গোসলাদিসহ যাবতীয় কাজ। এ গ্রাম থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরত্বে পায়ে হেঁটে ইউপি মেম্বর ডবলু শেখের বাড়ি থেকে সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে হয়। গ্রামের অপরপ্রান্তে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে পঞ্চায়েত বাড়ির মিষ্টি পুকুরের পানি এনে তাদের ব্যবহার করতে হয়। এত দূরত্ব থেকে পানি সংগ্রহ অনেক কষ্ট সাধ্য বিধায় অনেকে খালের পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করছে। লবনাক্ত এ পানি ব্যবহার করার ফলে ডায়রিয়াসহ পানি জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গ্রামবাসীরা।
স্থানীয়রা জানায়, নির্বাচর এলে জনপ্রতিনিধিরা ভোট নেওয়ার জন্য গ্রামের মানুষকে খাবার পানির সমস্যা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পাকা রাস্তা নির্মাণের একাধিক প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পরে আর কোন খোঁজ খবর রাখেন না। ৫১টি পরিবারের বৃষ্টির পানি ধরে রাখার শুধুমাত্র ৩টি পানির ছোট ট্যাংকি দিয়েছে এনজিও সংস্থা। তা থেকে ৩টি পরিবারের পানির সংকট কিছুদিনের জন্য মিটাতে পারে। বাকিদের খালের পানিই একমাত্র ভরসা। ওই গ্রামের বাসিন্দা মতিয়ার খলিফা, ইসমাইল শেখ, বৃদ্ধ সামছুল হক মৃধা, কালাম মোল্লা, হাসিনা বেগম, হাজেরা বেগম, মেহেরুন নেছা, আসমা আক্তার, নুপুর বেগম, নাসরিন বেগম, ফাহিমা খানম বলেন ৫০/৬০ বছর ধরে আমরা এ গ্রামে বসবাস করে আসছি। ভিটেমাটি বলতে ২ থেকে ৫ শতক বসতবাড়ি। দিনমজুরী করে তাদের সংসার চলে না। ছেলে মেয়েদের অনুপযোগী ৩ কিলোমিটার মাটির রাস্তা হেটে স্কুলে যেতে হয় । বর্ষার সময়ে হাটু পানি থাকে। গ্রামের একজন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তার কিংবা হাসপাতালে আসতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় ।
যদিও বেসরকারী সংস্থা ডর্প ২০১৭ সাল থেকে উপকূলীয় মোরেলগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে সুপেয় পানীর সংকট দূরীকরনে জন্য মাঠ পর্যায়ে খাবার পানির পুকুর খনন ও ফিল্টার স্থাপন পানির ট্যাংকি সরবরাহ করছেন এলাকা ভিত্তিক তা অপ্রতুল। অভিজ্ঞজনরা মনে করছেন শুধু ডর্প এনজিও নয় এ এলাকার মানুষের সুপেয় খাবার পানির সংকট নিরসনে ও তাদের জীবন যাত্রার মান পরিবর্তনে সরকারের পাশাপশি বেসরকারী একাধিক সংস্থার এগিয়ে আশা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। এ ছাড়াও ডর্প এলাকার পানি, স্যানিটেশন অবস্থার মানোন্নয়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বাজেট বৃদ্ধি বরাদ্দ ও ব্যবহার নিশ্চিতের লক্ষে বিভিন্ন পর্যায়ে লবি অ্যাডভোকেসি সভা করেছেন।
এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় খাবার পানির সরবরাহে সাড়ে ৪ হাজার টিউবঅয়েল এর ব্যবহার ছিল। আর্সেনিক ও অতিরিক্ত লবনাক্ততার কারনে টিউবঅয়েলগুলো ব্যবহারে অনুপযোগী। বিকল্প ব্যবস্থায় বৃষ্টির পানি ধরে রেখে খাবার পানি ব্যবহারে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে ইতিমধ্য উপকূলীয়অঞ্চলে পানি সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে ৩ হাজার লিটারের ১১ হাজার পানির ট্যাংকি বিতরণ করা হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী অপ্রতুল বরাদ্ধ ১ লাক্ষ পরিবারের শুধু মাত্র ১৫% মানুষকে সরকারি বরাদ্ধের এ সুবিধার আওতায় এসছে। পরবর্তী বরাদ্ধ হলে পর্যাক্রমে তা সরবরাহ করা হবে।
এমআই