রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

হাসিনার রায় আগামীকাল: নাশকতার শঙ্কা জনমনে, সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

রোববার, নভেম্বর ১৬, ২০২৫
হাসিনার রায় আগামীকাল: নাশকতার শঙ্কা জনমনে, সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গত বছরের জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আগামীকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর) সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিনজনের মামলার রায় ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই রায়কে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে রাজধানীসহ দেশের নানা স্থানে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। এতে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে রাজধানীর জনজীবনে অনেকটা প্রভাব পড়েছে। রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস হলেও অনেকটা ফাঁকা ছিল রাস্তাঘাট।  

তবে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যেকোনো মূল্যে নাশকতা রোধে কাজ করছে পুলিশ। নাশকতাকারীদের দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, যেকোনো মূল্যে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড তারা রোধ করবেন। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোসহ নগরবাসীর সহযোগিতা চেয়েছে ডিএমপি।

গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই আওয়ামী লীগ অনেকটা ছন্নছাড়া অবস্থায় রয়েছে। দলটির নেতাদের সিংহভাগ দেশের বাইরে কিংবা কারাগারে। অস্তিত্ব সংকটে পড়া আওয়ামী লীগ নতুন করে অস্তিত্বের জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে আদালতের রায়কে কেন্দ্র করে। মাঠ পর্যায়ে তেমন কোনো কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান না হলেও বিদেশে বসে নেতারা নানা হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। ট্রাইব্যুনালের রায় ঘিরে রোব ও সোমবার দেশে কথিত লকডাউনের ডাক দিয়েছেন তারা।

অনলাইনে ডাকা আওয়ামী লীগের লকডাউনের তেমন কোনো প্রভাব নেই জনজীবনে। তবে নাশকতার কারণে জনমনে একটা চাপা আতঙ্ক রয়েছে। ‎রোববার ‎ফার্মগেট এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী সোনিয়া মরজান বলেন, গত কয়েক দিন যাবত দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এজন্য সড়কে চলাচল করতে গিয়ে আতঙ্কে থাকি। কখন যে কোন দিক দিয়ে এসে কে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যায় এবং কার ওপর এই ককটেল পড়ে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। জীবনের তাগিদে শুধু ঘর থেকে বের হয়ে অফিসে যেতে হয়। অফিসে যাতায়াত করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

‎মিরপুর এলাকার বাসিন্দা আবু সাইফ রহমান বলেন, সড়কে বের হলেই আমরা সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকি। কোনদিক দিয়ে ককটেল নিক্ষেপ করে আমাদের আহত করে কিংবা বাসে আগুন দেয়। পরিবাারের সদস্যরা জরুরি কাজে বের হলে তাদের নিয়ে টেনশনে থাকতে হয়। দেশের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এতে আমাদের আতঙ্ক দিন দিন বাড়ছে। আগে ককটেল ব্যবহার করলে শুধু ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হতো। এখন এই ককটেলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হচ্ছে। এজন্য যত ককটেল বিস্ফোরণ হচ্ছে, সবগুলোতে লোহা, স্প্রিন্টার ও ধারালো ধাতব পাওয়া যাচ্ছে।

‎এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারাদেশে বেশ কয়েকটি জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যার পর আগারগাঁও, মিরপুর, হাতিরঝিল, পল্লবী ও বিমানবন্দরসহ প্রায় ১০টি এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আজ ভোরে রাজধানীর হাজারীবাগ বেড়িবাঁধে একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

‎গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যা ৭টার পর মিরপুর বিআরটিএ'র ভেতর ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। একই সময়ে পল্লবী মেট্রো স্টেশনের ১৭৭ নম্বর পিলারের নিচে পরপর একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এতে মেট্রোরেলের যাত্রীরা আতঙ্কে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

‎হাতিরঝিল এলাকায় মধুবাগ ব্রিজের ওপর থেকে একটি ককটেল নিচে নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে ককটেলটি একটি মোটরসাইকেলের ওপর বিস্ফোরণ হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে, কোনো ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শনিবার রাত ১১টা ১০ মিনিটে বিমানবন্দর রেলস্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘রাতে বিমানবন্দর রেলস্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা।‌ এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। বিষয়টি রেলওয়ে পুলিশ দেখছে। আমরা জেনেছি দুর্বৃত্তরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে।’‎

‎এসব ঘটনার পাশাপাশি শনিবার (১৫ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১২টায় বেড়িবাঁধ এলাকার শেখ ফজিলাতুন্নেসা কলেজের সামনে থেমে থাকা একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এতে পুরো বাসটি পুড়ে যায়। এ ঘটনায় কোনো আহত কিংবা হতাহতের হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে রোববার এক বেতার বার্তায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল নিক্ষেপকারীদের গুলির নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। নাশকতাকারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

‎ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণাকে ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগসহ আওয়ামীপন্থি সংগঠনগুলো দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই ডিএমপি কমিশনার এই নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সারাদেশেই পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। ঢাকাসহ চারটি জেলায় নামানো হয়েছে বিজিবি। এছাড়া সেনাবাহিনীও রয়েছে মাঠে। ‎

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল