আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যুক্তরাষ্ট্র প্রণীত একটি প্রস্তাবকে অনুমোদন করেছে, যাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজার জন্য প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনাকে সমর্থন করা হয়েছে। প্রস্তাবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও পুনর্গঠনে একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠনের কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে একাধিক দেশ ওই বাহিনীতে সদস্য পাঠাতে আগ্রহ দেখিয়েছে, তবে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
খসড়া অনুযায়ী আইএসএফের দায়িত্বের মধ্যে থাকবে হামাস ও অন্যান্য অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্ত্র স্থায়ীভাবে অপসারণ, বেসামরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং মানবিক রুটগুলো রক্ষার ব্যবস্থা। একই সঙ্গে প্রস্তাবে গাজায় নতুন একটি প্রশিক্ষিত ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনী গঠনেরও সুপারিশ রয়েছে-বর্তমানে সেই অঞ্চলের পুলিশ বাহিনী হামাসের তত্ত্বাবধানে আছে।
প্রস্তাবটিকে মোট ১৩টি দেশ সমর্থন জানায়। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সোমালিয়া রয়েছে। কোনো দেশ বিরোধিতা করেনি। রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি মাইক ওয়াল্টজ নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, আইএসএফের কাজ হবে ‘অঞ্চল নিরাপদ রাখা, গাজাকে নিরস্ত্রীকরণে সহায়তা, সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করা, অস্ত্র অপসারণ এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’ তিনি প্রথম ধাপ হিসেবে চলমান যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি ও আটক ব্যক্তিদের বিনিময় ১০ অক্টোবর কার্যকর হয়। ওয়াল্টজ একে ‘অত্যন্ত নাজুক প্রথম পদক্ষেপ” বলে উল্লেখ করেন।
হামাস প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও দাবিকে মানতে ব্যর্থ।
টেলিগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি বলেছে, ‘এ পরিকল্পনা গাজা উপত্যকায় একটি আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা চাপিয়ে দিচ্ছে, যা আমাদের জনগণ ও বিভিন্ন প্রতিরোধ গোষ্ঠী মেনে নেবে না।’
হামাস আরও বলেছে, “গাজার ভেতরে আন্তর্জাতিক বাহিনীকে অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণসহ বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া নিরপেক্ষতাকে নষ্ট করবে এবং এটিকে সংঘাতের এক পক্ষ হিসেবে ‘ইসরায়েলের পক্ষে’ প্রতিষ্ঠা করবে।
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুই আইএসএফ। পাশাপাশি এতে বোর্ড অব পিস নামে একটি পরিষদ গঠনের প্রস্তাব রয়েছে, যার নেতৃত্বে থাকার কথা নিজ ট্রাম্পের।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার পুনর্গঠনের অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক সমর্থিত একটি ট্রাস্ট ফান্ড।
খসড়া প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরা হয়েছে, যা ইসরায়েল স্পষ্টভাবে বিরোধিতা করে। আরব দেশগুলোর চাপে এই অংশটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এরপর থেকে ইসরায়েলে সামরিক অভিযান চালায় ইসরায়েল। টানা দুই বছর ধরে চালানো হামলায় ৬৯ হাজার ৪৮৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পরে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়।
এমআই