নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অনুভূত শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকায় তিনজন, নারায়ণগঞ্জে একজন এবং নরসিংদীতে দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। বহু ভবন-স্থাপনায় ফাটল দেখা গেছে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী। কম সময় স্থায়ী হলেও ভূমিকম্পের তীব্রতায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ভবন দুলতে থাকে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে। মানুষ ভবন থেকে নিচে নেমে আসেন।
ঢাকা ছাড়াও গোপালগঞ্জ, নড়াইল, রংপুর, সাতক্ষীরা, যশোর, কুমিল্লা, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, সিলেট, ফেনী, মাদারীপুর, ঝালকাঠি, দিনাজপুরসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়েই কম্পন অনুভূত হয়। এর প্রভাব ভারতের কিছু এলাকাতেও পড়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় এখন পর্যন্ত ২০৮ জন চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য জানানো হয়।
ভূমিকম্পের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের শিক্ষার্থীরা রুম থেকে বেরিয়ে আসেন।
বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের পরিচালক ডা. মঈনুল আহসান বলেন, ‘সব হাসপাতালে জরুরি বার্তা দেয়া হয়েছে। আহতদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব সহায়তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। টেলিফোনে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে—ঢাকাসহ গাজীপুর, নরসিংদী ও আশপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন হাসপাতালে আহত রোগীর চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ঢাকায় রেলিং ভেঙে নিহত ৩
রাজধানীর বংশালের কসাইটুলী এলাকায় একটি পাঁচ তলা ভবনের রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে তিন পথচারীর মৃত্যু হয়।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রেলিং ভেঙে পড়ার পর রক্তাক্ত অবস্থায় তিন জন পথচারী রাস্তার ওপর পড়ে আছেন। আশপাশের মানুষ ছুটে এসে তাদের উদ্ধার করেন।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অনেক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।
নরসিংদীতে সানশেড ভেঙে পড়ে নিহত ২
নরসিংদীর সদর উপজেলার গাবতলি এলাকায় ভূমিকম্পের সময় বাড়ির সানশেড ভেঙে পড়ে ওমর নামে এক শিশু ও ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ নিহত হন। ওমরের বাবা দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
ওমরের চাচা জাকির হোসেন জানান, ভূমিকম্প শুরু হলে দেলোয়ার হোসেন তিন সন্তানকে নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ঠিক তখনই সানশেডটি ভেঙে পড়ে তাদের ওপর।
আহতদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে বাবা-ছেলেকে ঢামেকে আনা হলে চিকিৎসকেরা ওমরকে মৃত ঘোষণা করেন। তার দুই বোন নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নারায়ণগঞ্জে দেয়াল চাপায় এক শিশু নিহত
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমিকম্পের সময় একটি টিনশেড বাড়ির দেয়াল ধসে পড়ে ফাতেমা নামের এক বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শিশুটির মা কুলসুম বেগম ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগম আহত হন।
নিহত ফাতেমা গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকার আব্দুল হকের মেয়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত ও আহতদের পরিচয় নিশ্চিত করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভূমিকম্প শুরু হলে কুলসুম বেগম মেয়েকে নিয়ে ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় যাচ্ছিলেন। এ সময় রাস্তার পাশে টিনশেড বাড়িটির দেয়াল ভেঙে তাদের ওপর পড়ে। স্থানীয়রা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন।
এমআই