শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

৮০০ বছর ধরে শক্তি জমছে নরসিংদী অঞ্চলে, বড় ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কা

শনিবার, নভেম্বর ২২, ২০২৫
৮০০ বছর ধরে শক্তি জমছে নরসিংদী অঞ্চলে, বড় ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীর মাধবদীতে শুক্রবার যে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়, তা মুহূর্তেই কাঁপিয়ে তোলে রাজধানীসহ পুরো দেশকে। ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এই কম্পনে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং আহত হয়েছেন পাঁচশরও বেশি মানুষ।

দেশি-বিদেশি গবেষণা সংস্থা ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে মাটির প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে শক্তির সঞ্চয় ঘটায় এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, প্রায় সাত কোটি মানুষ বিভিন্ন মাত্রার ঝাঁকুনি অনুভব করেছেন। আবহাওয়া বিভাগও এই ভূমিকম্পকে সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে ভয়াবহ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

শুক্রবারের পর শনিবার আরও দুবার একই এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যার মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩ দশমিক ৩ ও ৪ দশমিক ৩। উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর পলাশ উপজেলা।

এর পরপরই প্রশ্ন উঠেছে, কেন নরসংদী— যে এলাকা সাধারণত বড় ভূমিকম্পের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত নয় হঠাৎ এমন শক্তিশালী কম্পনের উৎস হয়ে উঠল?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ সৈয়দ হুমায়ুন আখতারের মতে, নরসংদীর ভূমিকম্প মূলত ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মিজ প্লেটের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে হয়েছে। পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ টেকটোনিক প্লেটে বিভক্ত এবং এগুলো ভূগর্ভস্থ তরলের ওপর ভাসমান অবস্থায় থাকে।

তিনি বলেন, প্লেটগুলো একে অন্যকে ধাক্কা দেওয়া, সরে যাওয়া বা ফাটলের সৃষ্টি করার মধ্য দিয়েই শক্তি সঞ্চিত হয়। যখন সেই শক্তি শিলার ধারণক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন ফাটল বা শিলাখণ্ডের হঠাৎ সরে যাওয়ার ফলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।

নরসিংদীর ভূমিকম্প নিয়ে আরও যা জানা গেল

ইউএসজিএস জানায়, যে অঞ্চলে শুক্রবারের ভূমিকম্প হয়েছে, সেখানেই ১৯৫০ সালের পর থেকে ৫ দশমিক ৫ বা তার বেশি মাত্রার ১৪টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।

বাংলাদেশের ভূমিকম্পের প্রধান দুটি উৎস— ডাউকি ফল্ট এবং সিলেট থেকে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত একটি দীর্ঘ ফল্ট জোন। দুটিই বিশেষজ্ঞদের কাছে অত্যন্ত বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচিত হয়।

টেকটোনিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের পশ্চিমে রয়েছে ইন্ডিয়ান প্লেট, পূর্বে বার্মা প্লেট ও উত্তরে ইউরেশিয়ান প্লেট।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলছেন, ভারতীয় প্লেটটি ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বার্মা প্লেটের নিচে অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, তলিয়ে যাওয়ার কারণে একটা সাবডাকশান জোনের তৈরি হয়েছে। আর নটরিয়াস (ভয়ংকর অর্থে) এই জোনের ব্যাপ্তি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। এখানে বিভিন্ন সেগমেন্ট আছে। আমাদের এই সেগমেন্টে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তি জমা হয়ে আছে। এটা বের হতেই হবে।

তার মতে, নরসিংদীর মাধবদীতে যে ভূমিকম্পের উৎস ছিল সেই এই সেগমেন্টেরই। নরসিংদীতে দুই প্লেটের যেখানে সংযোগস্থল, সেখানেই ভূমিকম্প হয়েছে।

তিনি বলেন, এখানে প্লেট লকড হয়ে ছিল। এর অতি সামান্য ক্ষুদ্রাংশ খুলল বলেই শুক্রবারের ভূমিকম্প হয়েছে। এটিই ধারণা দেয় যে সামনে বড় ভূমিকম্প আমাদের দ্বারপ্রান্তে আছে।

নরসংদীর ভূমিকম্প প্রসঙ্গে হুমায়ুন আখতার বলেন, এই যে বড় একটি প্লেট বাউন্ডারির খুব ক্ষুদ্র শক্তি খুলে গেল তার মানে সামনে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। কারণ একটু খুলে যাওয়া কিছু শক্তি বের হওয়ায় সামনে এই শক্তির বের হওয়া আরও সহজ হয়ে গেছে।

৮০০ বছর ধরে শক্তি জমছে

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই প্লেটের সংযোগস্থলে শক্তি সঞ্চয় হচ্ছে ৮০০ বছরের বেশি সময় ধরে। সেখানে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূকম্পন তৈরির মতো শক্তি জমা হয়ে আছে বলে বলছেন সৈয়দ হুমায়ুন আখতার।

তিনি বলেন, এটা বের হবেই। নরসংদীর ভূমিকম্পের কারণে এখন সামনে সহজেই সেই শক্তি বের হয়ে আসতে পারে। আর সেটি হলে আমাদের ঢাকা নগরীর একটি মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠার আশংকা আছে। সে কারণে আর অবহেলা না করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের এই অঞ্চলে আগেও বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে, এমনকি ভূমিকম্পে নদীর গতিপথ বদলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে সেগুলো ছিল সিলেট ও চট্টগ্রাম এই দুটো উৎসের বাইরে।

এ ধরনের ভূমিকম্পে ১৭৯৭ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ বদলে গেছে । এখনকার মেঘনা নদী এক সময় লালমাই পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে প্রবাহিত হতো। বড় ধরনের ভূমিকম্পের ফলে এই নদীর গতিপথও পরিবর্তিত হয়ে ২০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে বর্তমান অবস্থানে সরে আসে।

১৭৬২ সালে টেকনাফ থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে সেন্টমার্টিন দ্বীপ তিন মিটার উপরে উঠে আসে। সিলেটের মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ এই অঞ্চলে ১৯২২ সালে হয়েছিল ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প। এর আগে ১৮৬৮ সালে ঐ অঞ্চলে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল।

ডাউকি ফল্ট যে অঞ্চলে সেই জৈন্তাপুর-সুনামগঞ্জে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল ১৮৯৭ সালে।

তবে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হতে পারে এমন দুটি অঞ্চলের যেখানেই বড় কোনো ভূমিকম্প হয় অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঢাকাতেই বড় বিপর্যয়ের আশংকা প্রকাশ করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল