নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের’ অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
বৃহস্পতিবার সংস্থার দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেলের পরিচালক ঈশিতা রনি স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, অভিযোগটি অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়ে তা মহাপরিচালকের (তদন্ত–১) কাছে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগ অনুসন্ধানের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন মোহাম্মদ এজাজ।
তিনি বলেন, “এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আমরা দুদককে সব ধরনের সহযোগিতা করবো। আমরা মনে করি, প্রত্যেক মানুষেরই স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা থাকা প্রয়োজন। অভিযোগের তদন্ত স্বচ্ছভাবে হোক—এটা আমরাও চাই।”
চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নতুন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় নদী গবেষণা, পানি ব্যবস্থাপনা ও নগর উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজকে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে তাকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক পূর্ণকালীন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট গণভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এর পর থেকে অন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের মতোই জনসমক্ষে দেখা যায়নি নির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলামকে।
পরবর্তীতে ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএস এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেয় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর ব্যাপক প্রশাসনিক পরিবর্তনের অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের ১৯ অগাস্ট দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত মেয়রদের অপসারণ করা হয়।
যদিও পরবর্তীতে মামলায় জিতে চট্টগ্রামের মেয়রের দায়িত্ব পান বিএনপির শাহাদাত হোসেন।
গেল এপ্রিলে গাবতলী গবাদি পশুর হাট ইজারার দরপত্র বাতিলের ঘটনায় ‘অনিয়মের’ অভিযোগ ওঠলে দুদকের একটি দল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-ডিএনসিসি কার্যালয়ে অভিযান চালায়।
ইজারা বাতিলকে ‘ত্রুটি’ হিসেবে চিহ্নিত করে এ সিদ্ধান্তে সরকারের বড় অঙ্কের রাজস্ব আয় হাতছাড়া হওয়ার ‘ঝুঁকি’ তৈরির কথা বলেছিল দুদক।
গেল ৩০ এপ্রিল ডিএনসিসি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে দুদকের দলটি প্রশাসক ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করেন।
সেসময় দুদকের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, গাবতলী গরুর হাটের ইজারা দরপত্রে অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি রাজস্বের ‘ক্ষতি’ করার প্রাথমিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, দুদক জানতে পেরেছে‒২০২৫ সালের হাট ইজারায় সর্বোচ্চ দর ছিল প্রায় ২২ কোটি টাকা, যা সরকার নির্ধারিত দরের (১৪.৬১ কোটি) চেয়ে অনেক বেশি। মূল্যায়ন কমিটি সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা দেওয়ার সুপারিশ করলেও তা বাতিল করে ‘খাস আদায়’-এর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়‒বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ)–এর ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি।
তবে হাট ইজারা সরকারি ক্রয় নীতিমালার আওতায় পড়ে না এবং এ ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও নেই‒এমন বিশেষজ্ঞ মতামত পায় দুদক।
দুদক বলেছিল, ‘অস্বচ্ছ’ প্রক্রিয়ায় দরপত্র বাতিলের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় অভিযান পরিচালনাকারী দলটি পরবর্তী করণীয় জানতে চেয়ে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
এমআই