অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন অফিসে সংঘটিত অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃত আসামির কাছ থেকে অগ্নিসংযোগের সময় তোলা ছবি সংবলিত একটি স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এই ঘটনায় নির্বাচন বানচাল ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এর পরদিন ১২ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টা ৫৮ মিনিটে লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন অফিসে দুষ্কৃতিকারীরা অগ্নিসংযোগ করে। আগুনে অফিসের একটি স্টোররুমসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ৬(২) ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নং-৩৪, তারিখ: ১৩/১২/২০২৫)।
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় পুলিশ সুপার মো. আবু তারেকের নির্দেশনায় সদর থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার সমন্বয়ে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়। অফিসার ইনচার্জ (ডিবি)-এর নেতৃত্বে এসআই ফয়েজের সমন্বয়ে গঠিত এই টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং আশপাশের এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সড়কের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় তদন্ত দল।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যা ৭টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের ১০নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে মো. রুবেল (৪১) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি মৃত আব্দুল হাশেমের ছেলে। গ্রেপ্তারের সময় তার ব্যবহৃত একটি স্মার্টফোন জব্দ করা হয়।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তার মোবাইল ফোন পর্যালোচনা করে অগ্নিসংযোগের সময় তোলা একাধিক স্থিরচিত্র পাওয়া যায়, যা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এছাড়া মোবাইল কললিস্ট ও জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জেলা খাদ্য গুদাম ও এলজিইডি অফিসে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনার তথ্যও পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তদন্তে আরও জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত রুবেল আগে বিদ্যুৎ অফিসে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার ভাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় প্রায় তিন মাস আগে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ অফিসে কর্মরত থাকার সময় সাবেক এমপি ও মন্ত্রী শাহজাহান কামালের (মৃত) এপিএস শিমুল চক্রবর্তীর ভাই শ্যামল চক্রবর্তীর সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং পরবর্তীতে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।
পুলিশের দাবি, নির্বাচন বানচাল ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে শ্যামল চক্রবর্তী ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে জেলা নির্বাচন অফিসে আগুন দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। রুবেল এতে সম্মত হয়ে ঘটনার আগের দিন নির্বাচন অফিসে রেকি করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিকাশের মাধ্যমে প্রথমে তাকে ২ হাজার টাকা পাঠানো হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ ডিসেম্বর ভোর ৩টা ২৭ মিনিটে রুবেল পেট্রোলভর্তি বোতল নিয়ে মুখে মাস্ক পরে নির্বাচন অফিসে প্রবেশ করে স্টোররুমে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন লাগানোর সময় তার মুখের ডান পাশ আংশিক দগ্ধ হয়। পরে সে আগুন লাগানোর ছবি তুলে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং পরিচয় গোপন রাখতে নিজের পরিহিত পোশাক আগুনে পুড়িয়ে ফেলে।
পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন বিকেলে চুক্তির বাকি ৮ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। আসামির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নির্বাচন ভবনের বাউন্ডারি প্রাচীরের পাশ থেকে ব্যবহৃত পেট্রোলের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিকাশ নম্বরগুলোও শনাক্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো. আবু তারেক জানান, ঘটনার নির্দেশদাতা ও অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।
একে