শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

ঢাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতার অভিযোগ

শনিবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৫
ঢাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক নিয়োগকে ঘিরে অনিয়ম, রাজনৈতিক প্রভাব ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। বিভাগের পাঁচটি শাখা—ওয়াইল্ডলাইফ, প্যারাসাইটোলজি, ফিশারিজ, এন্টোমোলজি ও জেনেটিক্স শাখা—থেকে মোট তিনজন প্রভাষক নিয়োগের লক্ষ্যে গত ২৭ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে পরীক্ষার আগেই নির্দিষ্ট কয়েকজন প্রার্থীকে ঘিরে গুঞ্জন শুরু হলে পুরো প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। এ নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

জানা গেছে, ওয়াইল্ডলাইফ শাখায় আশিকুর রহমান সমী এবং প্যারাসাইটোলজি শাখায় জান্নাতুন নাহার ঝিনুকে শুরু থেকেই ‘প্রত্যাশিত প্রার্থী’ হিসেবে ধরা হচ্ছিল। বিশেষ করে জান্নাতুন নাহার ঝিনুর পারিবারিক ও রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তার ভাই আমিনুল হক পলাশ বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সভাপতি। সাবেক এনএসআই কর্মকর্তা এবং বর্তমানে বিদেশে পলাতক আমিনুল হক পলাশ নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্তুর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রদান করছেন৷ এদিকে ঝিনুকে নিয়োগের পেছনে সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ বোর্ডের অন্যতম সদস্য, শহীদুল্লাহ হলের বর্তমান প্রোভোস্ট ও সাদা দল সমর্থনকারী হিসেবে পরিচিত প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়ার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। 

নিয়োগ বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ঝিনুর একাডেমিক ফলাফলকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বললেও অভিযোগকারীরা বলছেন, একই মানদণ্ড অন্য শাখাগুলোর ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়নি।

অভিযোগ অনুযায়ী, ওয়াইল্ডলাইফ শাখায় সুপারিশপ্রাপ্ত আশিকুর রহমান সমীর অনার্স সিজিপিএ ৩.৬৩, যেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক প্রার্থীর সিজিপিএ ৩.৯১—তবু কম ফলাফলধারী প্রার্থীকে এগিয়ে রাখা হয়েছে। একইভাবে ফিশারিজ শাখায় সম্ভাব্য প্রার্থী আনিকা তাবাসসুমও ফলাফলের দিক থেকে অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও সুপারিশ পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই দুই প্রার্থীই নীল দলের প্রভাবশালী শিক্ষকদের সমর্থনপুষ্ট বলে জানা গেছে।

 নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রভাষক পদে পাবলিকেশন বা পূর্ব কাজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ ছিল না। বরং প্রভাষক নিয়োগে একাডেমিক ফলাফলকেই প্রধান মূল্যায়ন মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়—তবুও এই নিয়োগে সেই নীতির ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক  কয়েকজন জানান, এতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত লঙ্ঘন করে অধিকতর মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের বঞ্চিত করা হয়েছে, যা মেধাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থার পরিপন্থী।

এদিকে ওয়াইল্ডলাইফ শাখার প্রার্থী আশিকুর রহমান সমী বর্তমানে তথ্য উপদেষ্টার এপিএস হওয়ায় নিজের নিয়োগসহ অন্যদের নিয়োগেও প্রভাব বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই কারণে মূলধারার গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া এর আগে নিয়োগ পরীক্ষায় তার বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ি ব্যবহার ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগের খবর প্রকাশিত হয়।

অভিযোগকারীরা জানান, জুলাই আন্দোলনের চেতনার বিপরীতে গিয়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরপেক্ষতা ও ন্যায়ভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি ড. মামুন আহমেদ বলেন, “বোর্ডের পাঁচজন সদস্যের সর্বসম্মতিতেই প্রার্থীদের সুপারিশ করা হয়েছে। যাদের সুপারিশ করা হয়েছে, তাদের মেধা, যোগ্যতা ও একাডেমিক রেকর্ডের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের সময় আমার জানার সুযোগ ছিল না যে কেউ ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত কিনা বা কেউ কারো পিএস বা এপিএস কিনা।”

একাডেমিক ফলাফলের তুলনায় কম যোগ্য প্রার্থী সুপারিশ পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সবক্ষেত্রে একাডেমিক রেজাল্টই একমাত্র মানদণ্ড নয়। অনেক সময় পাবলিকেশন বা অন্য বিষয়ও বিবেচনায় আনা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “বোর্ড সর্বসম্মতিক্রমে বিষয়টি সিন্ডিকেটে পাঠিয়েছে। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সিন্ডিকেট। কারো রাজনৈতিক পরিচয় বা পারিবারিক সম্পর্ক থাকলে সেটি দেখার দায়িত্বও সিন্ডিকেটের।”

নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. এনামুল হক বলেন,“এটি এখনো সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়নি, তাই আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”

বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. আব্দুস সালাম বলেন, “আমি ওই নিয়োগ বোর্ডে ছিলাম না, তাই এ বিষয়ে কিছু জানি না।”

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল