সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

শান্তি চুক্তির ‘অনেক কাছাকাছি’ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন: জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প

সোমবার, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৫
শান্তি চুক্তির ‘অনেক কাছাকাছি’ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন: জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে একটি চুক্তির বিষয়ে তিনি এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি 'অনেক কাছাকাছি, সম্ভবত খুব কাছাকাছি' পৌঁছেছেন। তবে তিনি এটিও স্বীকার করেছেন যে, বিতর্কিত দনবাস অঞ্চলের ভাগ্য এখনও একটি বড় ধরনের অমীমাংসিত ইস্যু হিসেবে রয়ে গেছে।

রোববার বিকেলে ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের মার-এ-লাগো রিসোর্টে বৈঠকের পর দুই নেতা এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। শান্তি আলোচনার সবচেয়ে বিতর্কিত দুটি বিষয়—ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের বিভাজন (যা রাশিয়া দখলের চেষ্টা করছে)—এক্ষেত্রে অগ্রগতির কথা জানিয়েছেন উভয় নেতা।

ট্রাম্প এবং জেলেনস্কি উভয়েই শান্তি চুক্তির বিষয়ে খুব কম তথ্য প্রকাশ করেছেন এবং এটি সম্পন্ন করার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দেননি। তবে ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা সফল হবে কি না, তা 'কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই' পরিষ্কার হয়ে যাবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, ভূখণ্ড সংক্রান্ত কিছু 'জটিল বিষয়' এখনো সমাধান করা বাকি।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তার বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো গেছে। তবে ট্রাম্প কিছুটা সতর্ক থেকে বলেন, তারা এই চুক্তির '৯৫ শতাংশ পথ' পাড়ি দিয়েছেন। তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইউরোপীয় দেশগুলো এই প্রচেষ্টার 'একটি বড় অংশের দায়িত্ব' নেবে।

ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠকের পর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, নিরাপত্তার নিশ্চয়তার বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। মাখোঁ জানান, তথাকথিত 'কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং' (স্বেচ্ছাসেবী দেশগুলোর জোট) জানুয়ারির শুরুতে প্যারিসে বৈঠকে বসবে, যাতে তাদের 'সুনির্দিষ্ট অবদানগুলো' চূড়ান্ত করা যায়।

জেলেনস্কি এর আগে বলেছিলেন যে, তিনি দনবাস থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করার মার্কিন প্রস্তাবটি কিছুটা শিথিল করার আশা করছেন। দনবাস থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার অর্থ হবে ইউক্রেনের দখলে থাকা কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়া—যা রাশিয়ার একটি দীর্ঘদিনের দাবি। মস্কো পুরো দনবাস অঞ্চলটি পাওয়ার বিষয়ে অনড় থাকলেও, কিয়েভ চায় বর্তমান যুদ্ধক্ষেত্র যে অবস্থানে আছে, সেখানেই সীমানা নির্ধারিত হোক।

ট্রাম্প এবং জেলেনস্কি উভয়েই রোববার বলেন, দনবাসের ভবিষ্যৎ এখনো মীমাংসা হয়নি, যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে আলোচনা 'সঠিক দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।' একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাব করেছে যে, ইউক্রেন যদি ওই এলাকা ত্যাগ করে, তবে সেখানে একটি 'মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল' গড়ে তোলা হবে। তবে বাস্তবে সেই অঞ্চলটি কীভাবে কাজ করবে, তা এখনো অস্পষ্ট।

ট্রাম্প বলেন, 'এটি এখনো অমীমাংসিত, তবে আমরা অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এটি খুবই কঠিন একটি ইস্যু।'

যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে তারা ঠিক কী চুক্তিতে পৌঁছেছেন, সে বিষয়েও দুই নেতা বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে জেলেনস্কি রবিবার এই নিরাপত্তাকে 'স্থায়ী শান্তি অর্জনের প্রধান মাইলফলক' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন যে, যেকোনো শান্তি চুক্তিকে অবশ্যই ইউক্রেনের পার্লামেন্ট অথবা গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে। ট্রাম্প বলেন, চুক্তিটি নিশ্চিত করার প্রয়োজনে তিনি ইউক্রেনের পার্লামেন্টে ভাষণ দিতেও রাজি আছেন।

জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের আগে ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপ

জেলেনস্কি ও তার প্রতিনিধিদল ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের বাসভবনে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এ ফোনালাপকে 'ফলপ্রসূ' বলে উল্লেখ করেন, আর ক্রেমলিনের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ এটিকে 'বন্ধুত্বপূর্ণ' বলে বর্ণনা করেন।

মস্কোতে থাকা উশাকভ বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউক্রেনের প্রস্তাবিত ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করবে—এ কথা পুতিন ট্রাম্পকে জানিয়েছেন। ক্রেমলিনের ওই উপদেষ্টা আরও বলেন, দনবাস অঞ্চল নিয়ে ইউক্রেনকে 'আর দেরি না করে' সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ট্রাম্প বলেন, তার ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কথা হয়েছে। তিনি জানান, পুতিন ইউক্রেন পুনর্গঠনে সহায়তার অঙ্গীকার করেছেন, যার মধ্যে সস্তা জ্বালানি সরবরাহও রয়েছে। ট্রাম্প বলেন, 'রাশিয়া চায় ইউক্রেন সফল হোক।' এরপর তিনি আরও বলেন, 'শুনতে বিষয়টি একটু অদ্ভুত লাগছে।'

ট্রাম্প যখন পুতিনের প্রশংসা করছিলেন, তখন জেলেনস্কিকে মাথা একটু কাত করে মুচকি হাসতে দেখা যায়।

ট্রাম্প আরও বলেন, জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি আবার পুতিনকে ফোন করবেন।

এদিকে ট্রাম্পের আলোচনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ক্রেমলিন। জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের পর সোমবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে পুতিনের বিশেষ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ লেখেন, 'পুরো বিশ্ব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার দলের শান্তি প্রচেষ্টার প্রশংসা করছে।'

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনা

মার্কিন আলোচকরা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর যৌথ নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাবও দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) রোববার জানায়, সংস্থাটির মধ্যস্থতায় হওয়া আরেকটি স্থানীয় যুদ্ধবিরতির পর সেখানে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের মেরামতকাজ শুরু হয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে আলোচকরা অগ্রগতি অর্জন করেছেন এবং এটি 'প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই চালু করা সম্ভব'। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, রাশিয়া এ পর্যন্ত স্থাপনাটিতে বোমা হামলা না করায় এটি 'একটি বড় অগ্রগতি'।

রাশিয়া ২০১৪ সালে সংযুক্ত করা ক্রিমিয়া পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এছাড়া প্রায় চার বছর আগে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর দেশটির মোট ভূখণ্ডের প্রায় ১২ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে মস্কো। রাশিয়ার হিসাব অনুযায়ী, এর মধ্যে রয়েছে দনবাস অঞ্চলের প্রায় ৯০ শতাংশ, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলের ৭৫ শতাংশ, এবং খারকিভ, সুমি, মাইকোলাইভ ও দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের কিছু অংশ।

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের জন্য জেলেনস্কি ফ্লোরিডায় পৌঁছানোর এক দিন আগে রাশিয়ান বাহিনী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। এতে ইউক্রেনের রাজধানীর কিছু অংশে বিদ্যুৎ ও তাপ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জেলেনস্কি এসব সপ্তাহান্তের হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় চলমান শান্তি প্রচেষ্টার প্রতি রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে ট্রাম্প রোববার বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন পুতিন ও জেলেনস্কি—উভয়েই শান্তির ব্যাপারে আন্তরিক।

শনিবারের বিমান হামলার পর পুতিন বলেন, কিয়েভ দ্রুত শান্তির পথে না এলে মস্কো যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং রোববার আরও কয়েকটি বসতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে।

রোববারের বৈঠকের অন্তত একটি অংশে ফোনে যোগ দেন ইউরোপের কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, 'ইউরোপ ইউক্রেন ও আমাদের মার্কিন অংশীদারদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।' তিনি আরও বলেন, শক্ত ও নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থাকা 'অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ'।

এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের একজন মুখপাত্র বলেন, ইউরোপীয় নেতারা 'দৃঢ় নিরাপত্তা নিশ্চয়তার গুরুত্ব' তুলে ধরেছেন এবং এই 'নৃশংস যুদ্ধ' যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা দ্রুত জরুরিভাবে প্রয়োজনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল