আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক পরিবর্তিত ধরন ডেল্টায় শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউিএইচও)। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির কোভিড ১৯ টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান মারিয়া ভ্যান কারখোভ।
সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় ডব্লিউএইচও কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মারিয়া ভ্যান কারখোভ বলেন, ‘একটা বিষয়ে আমাদের সবার পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন; আর তা হলো- ডেল্টা ধরন শিশুদের সেভাবে আক্রমণ করে না। বরং, যারা করোনা টিকার ডোজ নেননি কিংবা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ববিধি ঠিকমতো মেনে চলেন না, তাদের এই ধরনটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।’
গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ ও বিভিন্ন প্রানীর দেহে সংক্রমিত হতে হতে অসংখ্যবার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে গেছে সার্স-কোভ ২ বা করোনাভাইরাস। ফলে উদ্ভব হয়েছে এই ভাইরাসটির বেশ কয়েকটি পরিবর্তিত ধরন বা প্রজাতি।
করোনাভাইরাসের পরিবর্তিত এই ধরন বা প্রজাতিসমূহের মধ্যে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৬ টি ধরনের আধিপত্য চলছে বলে এর আগে জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গ্রীক বর্ণমালা অনুসারে এই ধরনগুলোর নাম দেওয়া হয় আলফা, বিটা, গ্যামা, ডেল্টা, কাপ্পা ও ল্যাম্বডা।
ডব্লিউএইচওর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের আধিপত্যশীল এই ধরনসমূহের মধ্যে বর্তমানে প্রাধান্য বিস্তারকারী ধরনের নাম ডেল্টা। ২০২০ সালের অক্টোবরে ভারতে প্রথম শনাক্ত হয় এই ধরনটি। তারপর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৩২ দেশে ডেল্টায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
গবেষণায় জানা গেছে, ডেল্টার কারণে ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে চলতি বছর এপ্রিল ও মে মাসে প্রাণ হারিয়েছেন ২ লাখেরও বেশি মানুষ, আক্রান্ত হয়েছেন কয়েক কোটি। এছাড়া যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইউরোপ ও এশিয়ার দেশে দেশে সম্প্রতি ডেল্টার প্রভাবে বাড়ছে করোনায় দৈনিক আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।
ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেল্টাকে ‘উদ্বেগজনক ধরন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে মারিয়া ভ্যান কারখোভ জানান, ডেল্টা ধরনের গঠন, কী কারণে এটি এত সংক্রামক এবং কোন শ্রেণীর মানুষজনের এই ধরনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি- এসব বিষয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও গবেষণা করছে ডব্লিউএইচও।
শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড ১৯ টেকনিক্যাল টিমের প্রধান বলেন, ‘অনেকেই শঙ্কিত ছিলেন এই ভেবে, যে ডেল্টার কারণে শিশুদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে কি না। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে- ডেল্টার কারণে শিশুদের জন্য নতুন করে কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি হয়নি; কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ, যারা এখনও করোনা টিকার ডোজ নেননি বা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে উদাসীন – তাদের জন্য ডেল্টা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।’
করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের অনেক দেশে স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসূহ বন্ধ আছে, ফলে বিশ্বজুড়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা।
সংবাদ সম্মেলনে মারিয়া ভ্যান কারখোভ বলেন, মাহামারি পরিস্থিতিতে কিভাবে স্কুল ও শিক্ষপ্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়মিত কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা সম্ভব – এ বিষয়ক একটি পরিকল্পনা বা গাইডলাইন প্রস্তুতের উদ্যোগ নিয়েছে ডব্লিউএইচও।
সূত্র : এএফপি
সময় জার্নাল/এমআই