রুহুল সরকার, রাজীবপুর প্রতিনিধি: গত বছরে পাটের ভালো দাম পাওয়ায় চলতি বছর আরও অধিক পরিমাণ জমিতে পাট চাষ করেছে রাজীবপুর উপজেলার কৃষকরা। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তবে পাট জাগ (পচানো) দেওয়ার পানি সংকটের কারণে দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষকরা।
আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণ মাসের ১৩ দিন অতিবাহিত হলেও বৃষ্টির দেখা নেই উপজেলায়। দীর্ঘদিন থেকে ভারি বৃষ্টি না হওয়ায় খাল, বিলগুলোর পানি কমছে প্রতিনিয়ত। এতে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার দিন কাটছে কৃষকেরা।
সরেজমিনে উপজেলার বড়াইডাঙ্গী গ্রামের স'মিল মোড় সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় একজন শ্রমিক নিয়ে পাট কাটছে আজহার আলী(৪৮)। পাটের ফলন কেমন এবার জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ফলন এবার ভালো বিঘা প্রতি ১০ থিকা ১২ মন পাট হইছে কিন্তু পানি নাই পাট কোনজায়গায় জাগ দিমু এইডা নিয়াই টেনশনে আছি'।
আজাহার আলীর পাশের জমিতে পাট কেটে রেখেছেন কৃষক তপ্ত রোদে গাছ গুলো শুকিয়ে মরিচাধরা রং নিয়েছে। এগুলো এভাবে ফেলে রেখেছে কেন জানতে চাইলে আজহার আলী বলেন, পানি নাই তাই কাইটা রাইখা দিছে। একজন জাগ দেওয়ার পর তারটা ধোঁয়া হইলে তারপর আরেক জন সিরিয়াল পায় জাগ দেওয়ার তাই ফালাইয়া রাখছে।
রাজীবপুর থেকে বটতলা হয়ে শিবেরডাঙ্গী পর্যন্ত ডিসি সড়কের দু'ধারে দেখা গেছে পরিপক্ব হলেও, পানির অভাবে পাট কাটতে পারছে না কৃষকরা। একই চিত্র উপজেলার সকল ইউনিয়নে মাঠে জুড়ে।
কলেজ পাড়া গ্রামের পাট চাষী নজরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, জমি থেকে শ্রমিক দিয়ে পাট কেট জাগ দেওয়ার জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যেতে প্রতি আঁটিতে কাটা ও পরিবহন সহ খরচ পরবে ৫ টাকা। তারপর জাগ দেওয়া ধোঁয়া শুকানো খরচতো আছেই। বৃষ্টি না হলে এবার পাট চাষীদের মরণ দশা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বৃষ্টি না হওয়ার কারণে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে যে সব খাল বিলে সামান্য পানি আছে, সেখানেই হুমড়ি খেয়ে পরছেন কৃষকরা পাট জাগ দিতে। তবে এসব খালে নতুন পানি প্রবেশ না করা এবং বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পানির রং কালো হয়ে গিয়েছে। এই পানিতে পাট জাগ দিলে পাটের রং ভালো হবে না এবং বাজার মূল্য কমে যাবে। এছাড়াও সময়মত পাট না কেটে জমিতে রাখলে পাটের আঁশ ক্ষতিগ্রস্থ হয় বলেও জানিয়েছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর প্রায় ৮৯০ মিলিমিটারের অধিক বৃষ্টিপাত হয়েছিলো জেলা জুরে। এবছর এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০০ মিলিমিটারের মত বৃষ্টি পাত হয়েছে। বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে পাট জাগ দিতে পারছে না কৃষকরা। এছাড়াও বৃষ্টি নির্ভর আমন ধান রোপনেও বিলম্ব হচ্ছে।
রাজীবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, এবার উপজেলায় ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। গতবছর এর পরিমাণ ছিলো ২ হাজার ৩৫৫ হেক্টর। গতবারের চেয়ে দাম ভালো হবে, এই আশায় কৃষকেরা এবার বেশি জমিতে পাটের আবাদ করেন বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
উপজেলার পাট ব্যবসায়ী লিটন আহমেদ এর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মান ভেদে ২হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি মন কিনছেন তারা। ঈদের আগে ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বাজার ছিলো পাটের, এখন দাম কিছুটা কমেছে।
রাজীবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে কিছুটা পানির সমস্যা আছে, যে কারনে কৃষকদের পাট জাগ দিতে কষ্ট হচ্ছে। তিনি রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট জাগ দিতে কৃষকদের মধ্যে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান এই পদ্ধতিতে খুব সহজেই পাটের আঁশ ছাড়িয়ে স্বপ্ল জায়গায় জাগ দেওয়া যায় এবং পাটের রং ভালো হয়। এখন পর্যন্ত বাজারে পাটের দাম বেশ ভালো এই দাম অব্যাহত থাকলে কৃষকরা লাভবান হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সময় জার্নাল/এমআই