শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

অমানবিক জীবন: ১০ বছর ধরে শিকলবন্দী শাহিন

বুধবার, আগস্ট ৪, ২০২১
অমানবিক জীবন: ১০ বছর ধরে শিকলবন্দী শাহিন

এহসান রানা, ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় আরো এক যুবক ১০ বছর ধরে শিকলবন্দি হয়ে জীবনযাপন করছেন। তার নাম শাহিন ফকির (২৬)।

তিনি লেখাপড়া করতেন হেফজ বিভাগে। তবে ১৫ পারা পর্যন্ত মুখস্ত করে আর শেষ করতে পারেননি কোরআন শরিফ। মাথায় আঘাত পেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে বর্তমানে বিনা চিকিৎসায় অমানবিকভাবে জীবন কাটছে তার। তার শারীরিক অবস্থাও দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে।

উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কলিমাঝি গ্রামের আমিন ফকিরের দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীন শাহিন সবার বড়।

পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোটবেলায় এক দুর্ঘটনায় রেললাইনে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান শাহিন। পরে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর পাবনার একটি মাদরাসায় তাকে আরবি পড়তে পাঠানো হয়। সেখান থেকে কোরআনের ১৫ পারা পর্যন্ত মুখস্ত করেন শাহিন। হঠাৎ তার শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। পরে তিনি বাড়ি চলে আসেন।

শাহিনের মা সাজেদা বেগম বলেন, ‘বড় আশা নিয়ে ছেলেকে মাদরাসায় ভর্তি করেছিলাম। আশা ছিল সে বড় একজন আলেম হবে। কিন্তু বিধাতার নির্মম পরিহাস তাকে আজ আমরা ঘরের বারান্দায় শিকলে বেঁধে রেখেছি। তাকে ছেড়ে দিলে সে বাড়ির সবাইকে মারধর করে। বাড়িঘর ভাঙচুর করে। আগে শরীরে জামা-কাপড় রাখলেও এখন রাখতে চায় না।’

তিনি বলেন, তাকে সুস্থ করার জন্য লোকে যা যা বলেছে আমরা তাই করেছি। তার চিকিৎসা করতে গিয়ে আমরা এখন নিঃস্ব। থাকার জায়গায়টুকু ছাড়া আর কিছুই নেই।

আক্ষেপ করে সাজেদা বেগম বলেন, ‘শাহিনের নামে একটা প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড আছে। এছাড়া আমরা আর কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাই না। ছোট ছেলে তুহিন ফকির (১৮) ইলেকট্রনিক্সের কাজ করে যা পায় তা দিয়েই আমরা কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।’

শাহিনের বাবা আমিন ফকির বলেন, ‘আমি একজন দিনমজুর। এখন বয়স হয়েছে। কাজকর্ম করতে পারি না। আমার ৩০ শতাংশ জায়গা বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করেছি। এখন আর কিছু নেই। টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি।’

ছেলের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে চোখের পানি ছেড়ে দেন সাজেদা বেগম। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ এই কোরআনের পাখিকে নিয়ে গেলে কাইন্দে কাইটে মাটি দিয়ে থুইতাম। আল্লাহ তায়ালার কাছে বলতাম, হে আল্লাহ, আমি গরিব মানুষ। আমার সংসারের বড় ছেলের কী অপরাধ ছিল? তুমি আমাদের এত কষ্ট কেন দিচ্ছ?’

স্থানীয় বাসিন্দা ও সমাজকর্মী সৈয়দ তারেক মো. আব্দুল্লাহ বলেন, শাহিন সত্যিই মানসিক ভারসাম্যহীন। তার পরিবারের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। অমানবিক জীবনযাপন করছে শাহিন। পরিবারটির পাশে স্থানীয় প্রশাসন ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।

রুপাপাত ইউনিয়ন পরিষদের চার নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. ঝন্টু বিশ্বাস বলেন, আমরা পরিবারটিকে সহযোগিতা করার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করি। প্রতিবন্ধীর ভাতার কার্ড আমি নিজ উদ্যোগে করে দিয়েছি।

এ ব্যাপারে সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রকাশ কুমার বিশ্বাস।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঝোটন চন্দ্র এসময় সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে মঙ্গলবার মানসিক ভারসম্যহীন রবিউলকে পাবনার মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করেছি।

তিনি আরো বলেন, শাহিনের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সময় জার্নাল/এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল