স্পোর্টস ডেস্ক : ‘বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, যারা এখনো অলিম্পিকে পদক জেতেনি’ -এ বিস্মরণযোগ্য তকমাটা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ সে তকমাটা আরও পাঁচ বছর আগেই মুছে যেতে পারত। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাশান জিমন্যাস্ট মার্গারিতা মামুনকে যদি নিজেদের করে দেখাতে পারত বাংলাদেশ। সেবার রাশিয়ার হয়ে সোনা জিতেছিলেন এই রিদমিক জিমন্যাস্ট।
রাশিয়ার হয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও বাংলাদেশকে এখনো মনে পড়ে তার। বুধবার ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রামে বিষয়টি জানান মার্গারিতা। তিনি লিখেন, ‘অনেকেই জানেন আমার বাবা বাংলাদেশি, আমিও অর্ধেক বাংলাদেশি। যদিও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় আমি আমার দেশ রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছি, এরপরও আমি বাংলাদেশ থেকে অনেক সমর্থন আর অভিনন্দন পেয়েছি। আর একদিন একটা সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী বাংলাদেশি মুহাম্মদ ইউনুস বলেছিলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এই অলিম্পিক পদকটা তাদের বলে মনে করেন!’
চলতি বছর ২৫-এ পা দেওয়া মার্গারিতা গত অলিম্পিকে সোনা জেতেন। গেমসের পঞ্চদশ দিনে ব্যক্তিগত অল-অ্যারাউন্ড ইভেন্টে তিন বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও তার স্বদেশি ইয়ানা কুদ্রিয়াভৎসেভাকে হারিয়ে জেতেন সোনা। সেবার সর্বমোট ৭৬.৪৮৩ স্কোর গড়ে সেরা হন মার্গারিতা। আর তার স্বদেশি ইয়ানা রুপা জেতেন ৭৫.৬০৮ স্কোর করে। এরপর তিনি জানান, এই সোনা দুই দেশেরই। তার এই জয় যেমন রাশিয়ার, সমানভাবে বাংলাদেশেরও।
তবে প্রতিযোগিতার পর এক বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবীর সমর্থনে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই ইনস্টাগ্রাম পোস্টেই তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশি তরুণের (দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার নামটা জানি না আমি) সঙ্গে যখন আমার দেখা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, আমি সেই জিমন্যাস্টিক সেন্টারে পারফর্ম করব জেনেই তিনি সেখানে স্বেচ্ছাসেবার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আর তিনি আমাকে সেবার প্রতিদিনই শুভকামনা জানিয়েছেন।’
অনেকেই জানেন আমার বাবা বাংলাদেশি, আমিও অর্ধেক বাংলাদেশি। যদিও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় আমি আমার দেশ রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছি, এরপরও আমি বাংলাদেশ থেকে অনেক সমর্থন আর অভিনন্দন পেয়েছি। আর একদিন একটা সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী বাংলাদেশি মুহাম্মদ ইউনুস বলেছিলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এই অলিম্পিক পদকটা তাদের বলে মনে করেন!
মার্গারিতার সঙ্গে দেখা করতে তিন ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছিল সেই স্বেচ্ছাসেবীকে। বাংলাদেশি সেই তরুণের ধৈর্য আর নিবেদনে সেদিন মুগ্ধ হয়েছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাশান এই জিমন্যাস্ট। সেদিনই বুঝে গিয়েছিলেন, কল্পনাতীত সমর্থন নিয়েই তিনি পা রেখেছেন রিওতে।
সেই দিনের স্মৃতি মনে করে মার্গারিতা লিখেন, ‘সেদিন পারফর্ম্যান্স, পুরস্কার প্রদান, অনেক বড় একটা সাক্ষাৎকার, ফটোসেশন, লম্বা একটা ডোপ টেস্টের পর প্রতিযোগিতাটা যখন শেষ হলো, তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে তখন। আর তখন প্রায় ফাঁকা হলরুমটা থেকে বেরিয়ে এসে তাকে দেখলাম, আনন্দিত আর উৎফুল্ল হয়ে সে এতক্ষণ ধরে আমার অপেক্ষা করছিল, সঙ্গে বাংলাদেশের একটা পতাকা নিয়ে। এত আমি কেমন অবাক হয়েছিলাম তা একবার ভাবুন? সে মুহূর্তেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম, অনেক মানুষই আমাকে সমর্থন দিচ্ছে, যা আমি কল্পনাও করতে পারি না!’
সময় জার্নাল/আরইউ