সৈয়দ জামান লিংকন, জাপান থেকে :
জাপানের করোনা পরিস্থিতি ভয়ংকর আকার ধারন করেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারনার চেয়ে দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে সংক্রমণ। এই গতিতে চলতে থাকলে আগামী ২-১ সপ্তাহে টোকিও শহরে প্রতিদিন ৩০ হাজারের বেশী লোক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবে।
করোনা রোগীর হসপিটালে ভীড় সামাল দিতে জাপান সরকার শুধুমাত্র সিরিয়াস রোগীদের হসপিটালে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই মুহুর্তে ১৪ হাজার রোগী হসপিটালে সিট না পেয়ে বাসায় চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে। বাসায় চিকিৎসারত রোগীদের মধ্যে গত ৫ দিনে মারা গেছে ৮ জন (বয়স ৩০-৬০, পুরুষ) যারা চিকিৎসা পেলে হয়ত বেঁচে যেত। কিছু রোগীদের সরকারীভাবে বাসায় অক্সিজেন এর ব্যবস্থা করে দিলেও হঠাৎ করেই রোগীর অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছে এবং চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে।
ডেল্টা ধরনের কারনে শপিং মলগুলোতে ক্লাস্টার আক্রমণ এখন নিয়মিত ঘটনা, ভয় হচ্ছে খুব শীঘ্রই প্রচন্ড ভীড়ের ট্রেনগুলোতে হয়ত ক্লাস্টার হবে এবং এটা শুরু হলে, চিকিৎসা সুবিধায় বিশ্বের সেরা দেশটিতেও অক্সিজেনের অভাবে মারা যাবে শতশত মানুষ।
পরিস্থিতির ভয়ানকতা জাপান সরকার খুব ভালো ভাবেই ঠের পাচ্ছে এবং অলিম্পিক এর পরপরই হয়ত জাপানে সব ধরনের চলাচল সীমিত করে ফেলবে।
ডেল্টা টাইপের কারনে এই মুহূর্তে জাপানে সবচেয়ে বেশী সংক্রমণ হচ্ছে পরিবারের মধ্যে, অনেকটা বাংলাদেশের মত, বাসার একজনের থেকে সব সদস্যদের মধ্যে সংক্রমণ হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না ছোট ছোট শিশুরাও। আজকে টোকিও শহরে নতুন করে সংক্রমণ হয়েছে ৫০০০, তবে প্রকৃত সংখ্যাটা কয়েকগুন বেশী। কেননা শুধুমাত্র সিরিয়াস রোগীরাই করোনা টেস্ট করছে, যাদের অবস্থা সিরিয়াস নয় তাদের সবার টেস্ট করলে সংখ্যাটা যে ভয়ানক হবে সেটা সহজেই অনুমেয়।
এই মুহূর্তে করোনা থেকে রেহাই পাবার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হচ্ছে ভ্যাকসিনেশন, যদিও এই মুহূর্তে জাপানে ভ্যাকসিনের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। যারা এখনও ভ্যাকসিন নিতে পারেনি তাদের কে অনুরোধ করব আপাতত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে, বাজার করতে হলে প্রতিদিন বের না হয়ে এক সাথে কেনাকাটা করে ফ্রিজে রেখে দিন।
আগামী সপ্তাহে জাপানে শুরু হচ্ছে গরমকালীন ছুটি তবে আপাতত ছুটি টা শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাটানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
বাংলাদেশ নিয়ে কিছু বলার বা লেখার পরিস্থিতি অনেক আগেই শেষ। প্রতিদিন কতজন আক্রান্ত আর কতজন মারা যাচ্ছে সে হিসেব নিজে নিজেই বের করুন। গত কয়েক সপ্তাহে আমার বাংলাদেশের পরিবার, বন্ধুবান্ধব এর মধ্যে ৯০% পরিবারেই করোনার সংক্রমণ ঘটেছে। আমার ধারণা বাংলাদেশে ১০-১২ কোটি মানুষ করোনাতে আক্রান্ত হয়েছে যা মোট জনসংখ্যার ৬০-৭০%।
বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষ মুসলিম হওয়াতে মারা যাওয়ার পর নিজ বাড়িতেই চুপচাপ দাফন করাতে ভয়ানক পরিস্থিতিটা ঠের পাওয়া যাচ্ছে না। যদি হিন্দুদের মত টাকা দিয়ে চিতাতে পুড়াতে হতো তাহলে রাস্তা ঘাটে লাশ পড়ে থাকত।
বর্তমান ভয়ানক পরিস্থিতি আমরা না বুঝলেও বাংলাদেশের সরকার ঠিকই বুঝতে পারছে তাইতো কিউট বাংগালীদের জন্য সরকারের হালকা চটকদার বিনোদন হেলেনা, পরীমনিরা- ল্যা বাবা তোরা এইসব নিয়ে ব্যস্ত থাক। আমার মাথায় আসছে না, দেশের এইরকম ভয়ানক অবস্থায় কিভাবে সরকার পরীমনীর মত একটা বিষয় নিয়ে এত সময় ব্যয় করতে পারে। হোয়াট এ ট্র্যাজেডি ফর এ কান্ট্রি।
জাপানেই হউক আর বাংলাদেশেই হউক, সুযোগ পেলেই টিকাটা নিয়ে নিন। ভালো থাকুন, পরিবারের সাথেই থাকুন।
সময় জার্নাল/ইএইচ