নাদিম মাহমুদ :
ঢাকায় এক নায়িকাকে গ্রেপ্তারের পর আমাদের গণমাধ্যম নিজেদের যে পরিচয় দিচ্ছে, তাকে কখনোই দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা বলতে পারি না, বরং এটি এক ধরনের ভিক্টিম ব্লেমিং জার্নালিজম।
মিনিটে মিনিটে যেসব সংবাদ উঠছে, সেইসব সংবাদমূল্য নিয়ে যেমন প্রশ্ন করা যেতে পারে, তেমনি এই নায়িকাকে অপরাধী প্রমাণে উঠে পড়ে লেগেছে আমাদের কিছু গণমাধ্যম।
আমি গত কয়েক দিন একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলাম, ঢাকার ওই নায়িকা কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ? কেন সংবাদ মাধ্যমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে?
কিংবা আদালতে নিয়ে যাওয়ার আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীই বা কেন একজন আটককৃতকে অপরাধ প্রমাণে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছে?
আমি জানি না এই নায়িকা মাদক ব্যবসায়ী কি না কিংবা কোন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের সদস্য কি না। তবে সে যে কোন ড্রাইভিং ফোর্সের কোন একটি অংশকে নড়ে দিয়েছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। ক্ষোভটা যেভাবে পড়ছে, তা দেখে অনেকটাই স্পষ্ট।
মশা মারতে কামান নিয়ে যাওয়ার স্বভাবের কারণে ভারী অপরাধীরা সব সময় লুকিয়ে পড়ে। যে কারণে, আমাদের দেশে অপরাধীরা সব সময় নেতৃত্বে থাকছে। কাকে কখন, কোথায় কীভাবে ব্লেমিং করা হবে, তা তারা নির্ধারণ করে দিচ্ছে।
একটি উঠতি নায়িকা ঢাকায় এসে সিনেমা নামানোর আগে বাড়ি-গাড়ি করে ফেলছে, উদ্ভুত বিলাস-জীবন যাপন করছে, সেই অর্থের উৎস খোঁজার দায়িত্ব আরো ৫/৬ বছর আগে নেয়া উচিত ছিল।
কারা সেখানে টাকা ঢালছে, সেইসবের হিসেব-নিকেশ সরকার যদি করতে জানতো, তাহলে আজকে মদ আটক নিয়ে তুঘলকী কাণ্ড বেঁধে যেত না।
যারা এইসব নায়িকার পিছনে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালছে, এই টাকা তাদের কখনোই নয়, ছিল না। এই টাকা সাধারণ মানুষের টাকা, ব্যাংক লুটের টাকা, কালভার্ট রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে বাঁচানো টাকা, বিদেশী ব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া টাকা, মসজিদ-মন্দির মেরে দেয়ার টাকা, গৃহহীনদের প্রকল্পের টাকা।
এতো টাকা যাদের থাকে, তারা মিনি বারে যাবে, বিদেশী নায়িকাদের নিয়ে ঘুরতে যাবে, ফুর্তি করবে আবার গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণও নিবে। সব ক্ষমতা যাদের থাকে, তাদের কাছে পরিমণিরা নস্যি, কেবল খেলনা, কেবল সময় বিলাস ছাড়া কিছু নয়!