ডা. রাসেল চৌধুরী :
শুধুমাত্র টিকার ২ টি পূর্নাংগ ডোজ প্রাপ্তিই টিকাগ্রহীতাকে করোনার বিরুদ্ধে কাংখিত সুরক্ষা দিতে পারে। তাই ২য় ডোজ নিশ্চিত না রেখে ১ম ডোজ দেয়াটা টিকাদান কর্মসূচিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলবে।
কারণ ১ম ডোজ পাওয়া ব্যক্তিরা টিকা পেয়েও করোনা আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে বা মৃত্যুবরণ করলে মানুষের মধ্যে টিকার কার্যকারিতা ও মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এবং ইতোমধ্যে সেটা উঠেছেও।
সারাদেশে গতকাল ৩০ লাখ ১ম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে টিকা দেয়ার ক্যাম্পেইন আজ ও কালও বাড়ানো হয়েছে। যদি কালকের মতো একই হারে দেয়া হয়, তাহলে আজ ও কাল আরও প্রায় ৫০ লাখ ডোজ দেয়া হবে।
তাহলে ২য় ডোজ দেবার জন্য এই ৩ দিনে টিকা দেয়া ব্যক্তিদের ২৮ দিন পর একই ব্র্যান্ডের টিকাগুলোর স্টক রাখা ভীষণ ভীষণ জরুরি। কারণ ২৮ দিন পর আমাদের একেবারে একই ব্র্যান্ডের আরো প্রায় দেড় কোটি ডোজ টিকা লাগবে।
পাশাপাশি আগে এস্ট্রোজেনকার টিকা নেয়া ১৫ লাখ লোকের ২য় ডোজ পাওয়া বাকি।
এছাড়াও আগামী ২৮ দিন ১ম ডোজ যদি দিনে মাত্র ৫ লাখ ডোজও দেয়া হয়, তাহলে লাগবে আরো প্রায় দেড় কোটি টিকা। পাশাপাশি আছে গত ১মাসে ১ম ডোজ নেয়াদের জন্য ২য় ডোজের প্রায় ৫০ লাখ টিকার চাহিদা।
তারমানে আগামী ১ মাসে আমাদের চাহিদা প্রায় চার কোটি টিকা।
অথচ আমাদের হাতে এই মুহূর্তে সব ব্র্যান্ড মিলিয়ে এই চাহিদার ৫ ভাগের ১ ভাগ অর্থাৎ ৮০ লাখ টিকাও নেই।
তাই ১ম ডোজ দেয়া টিকার ব্র্যান্ডগুলোর কোনো একটির সরবরাহ ব্যবস্থায় সামান্যতম ঝুঁকি তৈরি হলেও পুরো টিকাদান কর্মসূচির সফলতা বিশাল হুমকির মাঝে পড়ে যাবে।
এবং এতে করে টিকা সংকটের কারণে ২য় ডোজ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরা টিকা পেলেও সাধারণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বৈষম্যের শিকার হবেন।
পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে, টিকা প্রাপ্তির বয়স হঠাৎ করে ২৫ বছর করে ফেলাতে অত্যধিক ভিড়ের মাঝে ৪০ বছর ঊর্ধ জনগোষ্ঠীর জন্য টিকা প্রাপ্তি কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অথচ করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর সংখ্যা এদেরই বেশি।
তাই আমাদের দেশি কোম্পানিগুলো দ্বারা নিজস্ব টিকা উৎপাদন ব্যবস্থা চালু না হওয়া পর্যন্ত ঘনঘন টিকাদান পলিসি পরিবর্তন আমাদের জন্য বুমেরাং হয়ে উঠতে পারে।
ভাবিয়া দিও ১ম ডোজ, ১ম ডোজ দিয়ে ২য় ডোজের জন্য যাতে হাপিত্যেশ করতে না হয়।
সকল টিকাগ্রহীতা ও টিকাদানের সাথে জড়িত সকল স্বাস্থ্যকর্মীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও
অভিনন্দন
।
লেখক : এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমডি (শিশু)
শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ।