ডা. হাবিবুল্লাহ তালকুদার রাসকিন :
খচখচ করে কাঁটার মতো বিঁধছিলো কাল একটা ঘটনা দেখে। তাই এই ভোরবেলাতে শেয়ার করছি। জানি অনেকেই মেনে নিতে পারেন না। তারপরও আবার বলি। এ বিষয়টা আমাকে সবসময়ই ভূগায়। আমি বোধহয় কেতাদুরস্ত কর্মকর্তা হতেই পারলাম না।
আরও একবার বলছি।
রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। সরকারী কর্মচারীরা তাদের সেবক। এটাই সত্য। এর বাইরে নিজেরা ঠাঁটবাট দেখাতে কর্মকর্তা, ক্যাডার, যতকিছুই বলি, তা বাড়তি। আরোপিত।
সেবক হয়ে আমরা সুযোগ পেলেই মালিক সেজে যাই। জনগণকে মনে করি গোলাম। ঔপনিবেশিক বৃটিশরা তাদের স্বার্থে আর এদেশের মানুষকে দমিয়ে রাখতে এ ব্যবস্থা চালু করে গেছে। আমরা সেই ব্যবস্থা চালু রেখেছি নিজেদের স্বার্থে।
একজন সেবাগ্রহিতা নাগরিকের সাথে কি আচরণ আমরা করি! একবার ভাবি না, আমি কোথা থেকে এসেছি। আমি না হয় সরকারি কর্মকর্তা হয়েছি, একজন নাগরিকের সাথে দুর্ব্যবহার করছি নিজেদের সুরক্ষিত পরিমন্ডলে থেকে। আমার পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়-স্বজন তো আর 'ক্যাডার' কর্মকর্তা না! তারা তো অন্য কোন সরকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে এরকম আচরণ পেতে পারে! এমনকি আমিও পেতে পারি। অবসরে যাচ্ছেন এমন একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত চিকিৎসকের সাথে আমার এক সহকর্মীর দুর্ব্যবহারের জন্য আমি কিছু কথা বলেছিলাম। কয়েক বছর আগের ঘটনা। সে ভুল বুঝতে পেরেছিলো। কাল এমন একটা ঘটনা দেখলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিছুদিন যাবত মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের এরকম জমিদারসুলভ আচরণের খবর মিডিয়াতে আসছে একের পর এক। জনগণ তথা মালিকের কাছ থেকে স্যার ডাক শোনার তীব্র বাসনা থেকে কত কেলেংকারি হয়ে যাচ্ছে! অথচ, স্যার যদি কাউকে ডাকতেই হয়, তা প্রাপ্য আসল মালিকের, অর্থাৎ জনগণের।
ইদানীং দেখি 'বিসিএস ক্যাডার' নামের মহিমা বেড়ে গেছে মিডিয়ায়, বিশেষ করে নিম্নমানের অনলাইনগুলোতে। অমুক এখন বিসিএস ক্যাডার!
স্বাধীন দেশের নাগরিকদের সাথে এই তথাকথিত অভিজাত ক্যাডার বা সরকারি কর্মকর্তাদের ঔপনিবেশিক বা জমিদারী মনোভাবের একটা প্রতিক্রিয়া হয়তো হবে কোন একদিন। সেটা সামাল দিতে পারবেন তো স্যারেরা?
লেখক : ক্যান্সার ইপিডেমিওলজিস্ট।