ইসাহাক আলী, নাটোর : জেলার বড়াইগ্রামের উপল শহরের স্কুল ছাত্রীর সাথে ছবি ভাইরাল করার অভিযোগে জমশেদ আলী নামে এক কাঠ ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রীর পরিবার।
প্রতিবেদক বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারের নজরে আনার আড়াই ঘন্টার মধ্যেই সোমবার বিকাল সোয়া ৫ টার দিকে অভিযুক্তকে জমশেদকে আটক করে পুলিশ। এতে ওই এলাকার সাধারণ জনসাধারণ পুলিশের ভূমিকায় সন্তোষ ও প্রশংসা জানিয়েছে।
সোমবার বেলা ১২টার দিকে এই প্রতিবেদকের কাছে ভাইরাল হওয়া একটি ছবি আসে বড়াইগ্রামের উপলশহর এলাকা থেকে। দুপুরে ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে উপলশহর গ্রামে গিয়েই সাংবাদিকদের দেখে কানা ঘুষা করতে থাকে সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, সেখানকার বাজায় এলাকায় উন্মুক্ত দোকানেও ওই ছাত্রী সম্পর্কে নানা মন্তব্য করতো জমশেদ। সেই খবরে উপলশহর বাজারে গেলে সংবাদকর্মিদের দেখে মুহুর্তেই জড়ো হয়ে যায় এলাকার ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।
এ সময় স্থানীয়রা জানান, বাড়িতে একটি ফার্নিচারের দোকান করে কাঠ ব্যবসা করে জমশেদ। দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক জমশেদ এর বিরুদ্ধে নারী আসক্তির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এরই মধ্যে একই গ্রামের ওই স্কুল ছাত্রীর পরিবারের সাথে যোগাযোগের কারণে নিয়মিত সেখানে যাতায়াত করতো সে। এরই মধ্যে নানা প্রলোভনে ওই স্কুল ছাত্রীর সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে তার। ওই পরিবারের সাথে ছোট খাটো অর্থনৈতিক লেনদেনও হতো জমশেদের। পরে সম্পর্কের অবনতি হলে বছর খানেক আগে স্থানীয় মেম্বার ও সামাজিক প্রধানদের কাছে ছাত্রীর পরিবারের কাছে টাকা পাওয়ার অভিযোগ আনেন জমশেদ। এনিয়ে একটি গ্রাম্য শালিশে বিভিন্ন সময় লেনদেনের হিসাব কষে ৮ হাজার টাকা পাওনা হয় জমশেদ। সেই টাকা পরিশোধের শেষের জমশেদ ওই ছাত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্তের কিছু ছবি পরিবার ও ওই ছাত্রীকে দেখিয়ে ব্লাকমেইল এবং ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। স্থানীয় স্কুলের ১০ শ্রেনীর ছাত্রী বিষয়টি নিয়ে বিব্রত সময় কাটাতে থাকে। করোনার মহামারিতে স্কুলও বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া জমশেদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ওই ছাত্রীর পরিবার তাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যায়। সেখানেও ওই মেয়েকে ব্লাকমেইলিংর জন্য গিয়ে নানা হুমকি দিতো জমশেদ। এরই মধ্যে ওই ছাত্রীর সাথে অর্ধলগ্ন অন্তরঙ্গ একটি ছবি ইমোতে পরিচিত জনদের কাছে পাঠায় জমশেদ। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে বাজারের দোকানেও মেয়েকে নষ্টা প্রমাণ করতে আরো ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার হুমকিও দেয় সে এমনটা জানান স্থানীয় অনেকেই।
স্থানীয় ময়মনসিংহপাড়ার চা দোকানী আব্দুল মতিন জানান, গতকাল সকালে প্রবাশে থাকা তার ভাগিনা মাহবুব হোসেন ইমোতে তার কাছে ফোন করে জানতে চান জমশেদের কি হয়েছে। পরে কথাবার্তার এক পর্যায়ে ওই ছবি তিনিও হাতে পান। এরপর এ বিষয়টি তিনি জমশেদকে অবহিত করলে জমশেদ তা ভ্রুক্ষেপ না করে বলে, যে যা পারে করুক এতে তার কিছু এসে যায়না।
পরে গতকাল রবিবার বিকালে জমশেদ স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে চা খেতে আসলে সেখানেও তার তার মোবাইলে থাকা আরো আপত্তিকর ছবি দেখিয়ে মেয়েকে নষ্টা প্রমাণ করতে সব কিছু করার ঘোষণা দেন। সে সময় স্থানীয় আবুল হোসেন ভোলা ও মফিজ উদ্দিন ওই স্টলে উপস্থিত ছিলেন এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।
এছাড়া সোমবার দুপুরে উপল শহর বাজারে উপস্থিত উৎসুক অনেকেই এমন নানা কথার বর্ণনা দিয়ে জমশেদের বিচার দাবি করেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, ইউপি যুবলীগ সভাপতি রাশেদুল ইসলাম, ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানা ও সাধারণ সম্পাদক খাদেম বিশ্বাস এমন গর্হিত ঘটনার বিচার দাবি করেন।
এ ব্যাপারে ইউপি মেম্বার নূরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, টাকা পয়সার লেনদেন নিয়ে তিনি একটা শালিশ করেছেন সেই টাকা পরিশোধের পর ওই মেয়েকে নানা ভাবে ব্লাকমেইল ও পরিবারকে হুমকি দিলে পুরো পরিবার এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে যায়। সেখানে গিয়েই ওই মেয়েকে ভয়ভীতি দেখাতো জমশেদ। এমন নানা অভিযোগ পেয়ে বারবার নিষেধ করলেও আমলে নেয়নি জমশেদ।
এ ব্যাপারে মেয়ের জ্যাঠা বলেন, জমশেদের অত্যাচারে তার দিনমজুর ভাই পুরো পরিবার নিয়ে ঢাকায় গিয়ে পেটের তাগিদে গার্মেন্টেসে কাজ করেন। জমশেদের অত্যাচারে স্কুল পড়–য়া ওই ছাত্রীর বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। সে খবরে সেখানেও যায় জমশেদ। যার সাথে বিয়ের কথা চলছিল তাকে ওই আপত্তিকর ছবি দিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। আমরা গরিব হওয়ায় এর বিচার পাইনা প্রতিবাদও করতে পারিনা। জমশেদের দৃষ্ট্রান্তমূলক শাস্তির দাবি তার। তিনি জানান, তারা পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করবেন। তবে ওই ছাত্রী ও তার পরিবার ঢাকায় অবস্থান করায় যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
এদিকে সরেজমিনে ঘটনার সত্যতা পেয়ে বিকাল সোয়া ৩টার দিকে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহাকে জানানো হলে তাৎক্ষনিক সেখানে পুলিশ পাঠান তিনি। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পেয়ে বিকাল সোয়া ৫টার দিকে জমশেদকে আটক করে বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন ও শামসুল ইসলাম। এ ঘটনায় পুলিশের তাৎক্ষণিক ভূমিকায় প্রশংসা জানিয়েছে এলাকার মানুষ।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, সামাজিক মূল্যবোধ নষ্ট করার কোন সুযোগ নাটোর জেলা পুলিশ দেবে না। যেই হোক কোন অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় এনে সুবিচার নিশ্চিত করা হবে। এমন ঘটনা নজরে আনায় সংবাদকর্মিদের ধন্যবাদ দেন তিনি। এছাড়া নাটোরের চৌষক পুলিশ সদস্যরা জেলার সকল ভাল কাজে নিবেদিত বলেও তাদের ধন্যবাদ দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সময় জার্নাল/আরইউ