মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

রোদ ঝড় বৃষ্টি

মঙ্গলবার, আগস্ট ১০, ২০২১
রোদ ঝড় বৃষ্টি

ডা. জয়নাল আবেদীন :

বাইরে থেকে এসে কাপড়ের ওয়ারড্রোবটা দেখেই আমি ভীষণ চমকে গেলাম। রাকিবের কোন কাপড় সেখানে নেই!
একটা মুহুর্তের চমক আমাকে আঠার বছর পেছনে টেনে নিয়ে গেল। আঠার বছর পেছনের সেই স্মৃতি আমার কাছে ভীষণ আতংকের, ভীষণ অন্ধকারের।

কপালে হাত দিয়ে বিন্দু বিন্দু ঘামের অস্তিত্ব অনুভব করলাম। আমার গলা শুকিয়ে আসল। একজন ডাক্তার হিসেবে এই এনজাইটিক মেকানিজমের সাথে আমি পরিচিত। কিন্তু এই বিশেষ মুহুর্তে আমার মেকানিজমের কথা মনে পড়ল না, মনে পড়ল রাকিবের কথা।

আমি দৌড় দিয়ে রাকিবের ঘরে গেলাম।
রাকিব উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। পাশে আমাদের চার বছরের মেয়ে অন্তরা। বাবা মেয়ে মিলে ট্যাবের মধ্যে কিছু একটা দেখছে।
রাকিব আমাকে দেখে মিষ্টি করে হেসে বলল, কি ব্যাপার মিলি!
তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে বাজার করে উইসাইন বোল্ট মার্কা এক দৌড়ে বাসায় এসেছো। কি ব্যাপার?
আমি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললাম, ওয়ারড্রোবে তোমার সব কাপড় কই?
সে খানিকটা অবাক হয়ে বলল, কই মানে? সব বাথরুমে। আবিদা কাপড় ধুয়ে দিচ্ছে।
আমি আরো কঠিন গলায় বললাম, কাপড় ধোয়ার জন্য সব কাপড় নিতে হবে? অর্ধেক অর্ধেক করে দেয়া যায় না?
রাকিব বলল, আজ শুক্রবার। শুক্রবারে আমার সব কাপড় ধোয়া হয়। নতুন কিছু তো না। তোমাকে এত টেন্সড লাগছে কেন?
আমি বললাম, কিছু না।
প্রতি দিনের বাজার আমিই করি। বাজার রেখে দিয়ে আমি বাথরুমে চলে গেলাম। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখলাম কিছুক্ষণ। নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজের কাছে কুৎসিত মনে হল। হঠাৎ করে বুক ফেটে কান্না আসতে লাগল। এ কান্না ১৮ বছরের জমানো কান্না। এ কান্না এক দিনে শেষ হবার নয়। আমি ফুল স্পিডে টেপ ছেড়ে দিলাম।
বাথরুম থেকে বের হয়ে আবার চমকে যেতে হল। রাকিব এক দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা মাপার কোন সিস্টেম জানা থাকলে এই দৃষ্টিটাই বোধহয় সবচেয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টির রেকর্ড করত।
আমাদের ছয় বছরের বিবাহিত জীবনে রাকিব এই দৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে কখনো তাকায় নি।
আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম আমি ধরা পড়ে গেছি। সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে গত আঠার বছর দেখে নিয়েছে।
:
:
রাত কত হয়েছে ঠিক বুঝতে পারছি না। আমার হাতে ঘড়ি নেই। তবে আড়াইটা বা তিনটার কম না সেটা ধারণা করতে পারছি।
আমি আর রাকিব আমাদের বাসার ছাদে বসে আছি। আকাশে চাঁদ নেই, কৃষ্ণপক্ষের রাত। তবে আকাশ একদম পরিষ্কার। হাজার হাজার তারা টিমটিম করে জ্বলছে। চাঁদ ছাড়াও যে আকাশের এতটা সৌন্দর্য থাকতে সেটা কখনো বুঝতে পারি নি।
আমরা এক প্রকার মৌনব্রত পালন করছি। কেউ কোন কথা বলছি না। অনেক ক্ষণ পর আমি বললাম, কালকে তো তোমার মর্ণিং ডিউটি আছে। ঘুমাবে না?
রাকিব বলল, না। কালকে ছুটি নিয়েছি।
আমি অবাক হয়ে বললাম, তুমি তো জীবনে কখনো ছুটি নাও নি। আজকে কেন নিতে গেলে?
অন্ধকারের মধ্যেও আমি তার হাসি দেখতে পেলাম।
সে বলল, তোমার জন্য, আজকে রাতের জন্য।
আমি বোকা হয়ে গেলাম। বিয়ের ছয় বছর পরও এই লোকটাকে এখনো বুঝে উঠতে পারি নি। কোন বিশেষত্ব নেই এই লোকের। কখনো মনে হয়েছে আমাকে ভালোবাসে আবার কখনো মনে হয় মোটেই না। সে কেবল দায়িত্ব পালন করতে জানে। যতটুকু ভালোবাসা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়বে সে কেবল ততটুকুই ভালোবাসবে। টানা ছয় বছর ধরে তাকে কখনো ছুটি নিতে দেখি নি। কঠিন অসুখের মধ্যেও টলতে টলতে ডিউটি করতে গিয়েছে। সেই মানুষটাই যখন বলে কেবল একটা রাতের জন্য ছুটি নিয়েছে তখন চমকে যেতেই হয়।
আবার কিছু মুহুর্তের নীরবতা।
অনেক ক্ষণ পর রাকিব বলল, মিলি একটা সত্য কথা বলবে?
-হু।
- আমাকে তোমার কেমন মানুষ মনে হয়?
- ভালো মানুষ, দায়িত্ববান মানুষ।
- উহু এটা বলি নি। চালাক মনে হয় না বোকা মনে হয়?
আমি ইতস্তত করে বললাম, এটা কোন ধরণের প্রশ্ন?
রাকিব আবার হাসল।
সে বলল, তোমাকে বিব্রত করে ফেললাম। দাঁড়াও, আমিই উত্তর দিই। আমাকে তুমি খানিকটা বোকা ভাব। সেটা অবশ্য দোষের কিছু না। বোকা না ভাবলেও কেউ ই আমাকে চালাক মনে করে না। এর একটা কারণ আমার চলাফেরা গৎ বাধা। আমার কথা বলা বা আচরণে কোন জটিলতা নেই।
ঠিক বললাম?
আমি এক শব্দে বললাম, হু।
রাকিব বলল, তবে এটা ভুল। আমি চালাক না হলেও বুদ্ধিমান। চলার মতো বুদ্ধিমান। আমার বুদ্ধি আমি প্রকাশ করি না। কারণ শেষ পর্যন্ত বুদ্ধিমানদের খুব কম মানুষ পছন্দ করে।
আমি অধৈর্য হয়ে বললাম, তুমি কিছু একটা বোধহয় বলতে চাও। বক্তব্য না দিয়ে সেটা বলে ফেলো। তোমার এই রূপের সাথে আমি পরিচিত নই।
রাকিব বলল, একজাক্টলি। আমার নিজের কাছেই এই রূপ অপরিচিত। তবে আমি ঠিক বলতে নই, শুনতে চাই।
আমি চমকে বললাম, কি শোনবা?
রাকিব গলার স্বর নিচু করে বলল, তোমার লাইফ হিস্ট্রি। খুব বিরাট কিছু আমার কাছে গোপন করে রেখেছো। তোমার লাইফ পার্টনার হিসেবে সেটা শোনার অধিকার আমার রয়েছে।
আমি কাঁপতে লাগলাম। ঠিক ভয় পাচ্ছি নাকি রাগ লাগছে বুঝতে পারছি না। কিংবা নিজের প্রতি হয়তো ঘৃণাও আসছে।
রাকিব আমার পাশে এসে আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলল, ভয় নেই! যাই বলো না কেন, আগামীকাল সকালটা প্রতি দিনের মতোই শুরু হবে। কথা দিচ্ছি।
নিজের গাল বেয়ে সিড়সিড়ে একটা অনুভূতি চিবুক অবধি পৌছে গেল। আমি সম্মোহিতের মতো বলতে লাগলাম, আবার বাবা....তুমি জানো বেঁচে নেই। আসলে বেঁচে আছেন।
রাকিব বলল, তোমার বাবা মানে আমার শ্বশুর মৃত নন, জীবিত সেটা আমি জানি।
- কিভাবে জানো?
রাকিব বলল, খুব সহজ ভাবে। একটা মানুষের বাবা মারা গেলে সন্তান হিসেবে তার মৃত্যুর দিন তাকে স্মরণ করা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। তুমি সেটা কখনোই করো নি। শ্বশুর প্রসঙ্গ আসলেই তোমার মধ্যে অস্বস্তি কাজ করত।
আমি বললাম, সেটা বলো নি তো কখনো?
- বলার দরকার বোধ করি নি। পরেরটা বলো।
আমি ভাঙা ভাঙা গলায় বললাম, আমার বাবা পৃথিবীর ভয়ংকর খারাপ একজন মানুষ।
কি রকম খারাপ সেটা তুমি কল্পনা করতে পারবে না।
রাকিব বিরস গলায় বলল, ডোন্ট আন্ডার ইস্টিমেট মাই ইমাজিনেশন। আমার কল্পনা অনেক সুদূরপ্রসারি। সুতরাং তুমি বলতে শুরু করো।
আমার হঠাৎ করে কি হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। মনে হল গত ১৮ বছরের জমানো কথা বিদ্রোহ করে উঠল। বুক ফুঁড়ে কথা গুলো বের হতে চাইল।
আমি বলতে লাগলাম।
- আমার বাবা মায়ের বিয়ে লাভ ম্যারেজ ছিল। মা চাকরি করতেন। বাবা ছিলেন বেকার। মা তার প্রিয়তম স্বামীকে নিজেই রোজগার করে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতেন।
আমার বয়স যখন পাঁচ তখন ভয়ংকর দুর্ঘটনাটা আমাদের জীবনে ঘটল।
আসি এক দিন দেখলাম বাবা আমাদের কাজের মেয়েকে ঘরে ঢুকিয়ে দরজা লক করে দিয়েছে।
তুমি বুঝতে পারছো দরজার ভেতরে ঠিক কি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারার মতো বয়স আমার তখনো হয় নি। কয়েক দিন এই ঘটনা দেখার পর আমি মা কে এই ঘটনা বলে দিলাম।
মা তার প্রিয়তম স্বামীর বিরুদ্ধে এত ভয়ানক অপবাদ হজম করতে না পেরে আমাকে ঠাস ঠাসিয়ে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিলেন। আমি বোবা হয়ে গেলাম। আমার চড় খাওয়ার কারণ খুঁজে পেলাম না। ঘটনা চলতে থাকল এবং আমার মা একদিন তাঁর প্রাণপ্রিয় স্বামীকে হাতে নাতে ধরে ফেললেন।
আমার বাপজান প্রচন্ড রকম ধুরন্ধর ছিলেন। তিনি মায়ের হাতে পায়ে ধরে মাফ চেয়ে পার পেয়ে গেলেন। তারপর থেকে তার কর্মকান্ড সাবধানে চলতে থাকল।
তিনি আমি এবং মা বাইরে না গেলে দরজা লক করতেন না। দুর্ভাগ্যক্রমে আবার একদিন আমার হাতে ধরা পড়লেন। ধরা পড়ে আমার শিশু মনকে ভোলানোর জন্য চমৎকার ফন্দি আটলেন। এক বোতল পানি এনে আমাকে দেখিয়ে বললেন, এটা হচ্ছে পড়া পানি। তুই যদি তোর মাকে এই ঘটনা বলিস তবে আমি এই পানি তোর মাকে খাইয়ে দেব। তুই মারি যাবি, তোর মাও মারা যাবে। বলবি?
আমি ঘাড় নাড়িয়ে বললাম, না।
বাপজানের দুর্ভাগ্য ছিল। তিনি আবার একদিন মায়ের হাতে ধরা পড়ে গেলেন। আমার মা জননী তার পতীদেবকে এবার শর্তসাপেক্ষ মাফ করতে চাইলেন। শর্তমতে তারা এ বাসা ছেড়ে অন্য বাসায় যাবেন। কারণ আমার দাদীজান বাপজানের উপর রুল জারি করেছেন। হয় বউ ছাড়ো, নয় বাসা ছাড়ো। বাপজান বউয়ের সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
নির্দিষ্ট দিন বাসা চেঞ্জ করার সময় মা বাবার কাপড়ের আলমারির দিকে তাকিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন।
আলমারিটা শূন্য, বাবার কোন কাপড় নেই!
তারপর থেকে....
রাকিব আমার কথা কেড়ে নিয়ে বলল, তারপর থেকে আমার শ্বাশুড়ি প্রচার করেছেন যে তার স্বামী বেঁচে নেই। এই তো?
আমি মাথা নিচু করে বললাম, হাঁ।
রাকিব খুব স্বাভাবিক গলায় বলল, তোমার এই গল্প শুনলে যে কেউ চমকে যেত। আমি মোটেই চমকাই নি। তার দুইটা কারণ।
প্রথমত এই গল্প আমার অনুমিত। আর দ্বিতীয়ত এসব গল্পের সাথে আমি পরিচিত।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, আমাকে খুব সম্ভবত এখন থেকে তুমি ঘৃণা করবে।
রাকিব সহজ গলায় বলল, না। ঘৃণা করব না। তবে পছন্দ করব কিনা সেটা কয়েকটা বিষয়ের উপর নির্ভর করছে।
আমি কম্পিত গলায় বললাম, কি?
রাকিব বলল, তোমার গল্পের আফটার ইফেক্ট এখনো বলো নি। তুমি কি চাও আমি আফটার ইফেক্ট বলি?
আমি মাথা নিচু করে চুপ করে রইলাম।
রাকিব বলল, মানুষ যখন একটা এক্সিডেন্ট করে তখন তার মনে পার্মানেন্ট ভয় ঢুকে পড়ে। একজন গাড়ি এক্সিডেন্ট করা মানুষ জীবনে আবার গাড়ি চড়তে ভয় পায়। অথচ একটা মানুষের দুইবার গাড়ি এক্সিডেন্ট করার ইতিহাস বিরল।
তোমার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটার কারণে তুমি ভয় পাচ্ছো। আমাদের অন্তরার জায়গায় নিজেকে দাঁড় করাচ্ছো। তুমি আতংকে আছো আমিও হয়তো কাজের মেয়েকে ঘরে ঢুকিয়ে দরজা লক করব।
রাইট?
আমি মাথা নিচু করে রইলাম।
রাকিব আবার বলল, আমি এটা বুঝতে পেরেছি অনেক আগে। তুমি কাজের মেয়ে আনতে রাজী ছিলে না। শেষ পর্যন্ত যখন দেখলে না আনলে চলবেই না তখন আবিদার নামের মেয়েটাকে খুঁজে বের করলে। তার গায়ের চামড়া ঘোরতর কালো। তাতেও তুমি আশ্বস্ত হতে না পেরে নিজের চাকরিটাই ছেড়ে দিলে। ডাক্তারী শিকেয় উঠল। তোমার কাজ হচ্ছে কাজের মেয়েকে আর আমাকে পাহারা দেয়া।
এম আই রাইট?
আমি ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদতে লাগলাম।
রাকিব ছোট করে বলল, গল্পের আরেকটা টুইস্ট আছে। আমার ধারণা তুমি কারো প্রেমে পড়েছিলে।
রাইট?
আমি এবার চমকে গেলাম। এ কথা তার জানার কথা না।
কিভাবে জানল?
অন্ধকারে আমি রাকিবের বের করা দাঁত দেখলাম।
সে হাসতে হাসতে বলল, আমি জানি আমার চেহারা খুব একটা ভালো না। তবে একেবারে খারাপও না।
তুমি একদিন কথা প্রসঙ্গে বলেছিলে "আচ্ছা প্লাস্টিক সার্জারী করতে কত টাকা লাগে? তোমার ফেস প্লাস্টিক সার্জারী করিয়ে টম ক্রুজের মতো করে নেব।"
অথচ তুমি টম ক্রুজের কোন সিনেমা দেখো নি কোন দিন। আমার ধারণা তোমার অন্য কোন টম ক্রুজ ছিল। খুব চমৎকার চেহারার কেউ। নাম কি ছিল তার?
আমি মোহাচ্ছন্য হয়ে বললাম, রৌদ্র।
- কোথায় থাকে?
- আমাদের মেডিকেলের সিনিয়র।
- পাত্তা দেয় নি?
- না।
রাকিব শব্দ করে হাসতে লাগল।
কিছুক্ষণ পর নিচু স্বরে বলল, তোমার এখন কি মনে হয়। এতকিছু জানার পর আমার কি উচিত তোমাকে ঘৃণা করা?
আমি বললাম, হাঁ।
রাকিব বলল, যে কেউ তাই করবে। আমিও হয়তো তাই করব। তবে ঘৃণা করা আর ঘৃণিত হওয়া কোনটাই ক্রেডিটের কিছু না। এই ঘৃণা করাটা স্কিপ করতে পারলে দুজনেরই মঙ্গল।
তবে তাতে তোমার সহযোগীতা লাগবে।
- আমার কি করতে হবে?
রাকিব বলল, কিচ্ছু করতে হবে না। তোমার মন থেকে সন্দেহের পাথর সরিয়ে নিতে হবে। তুমি আমাকে সন্দেহ করছো সেটা আমি অনেক আগে থেকেই জানি। আমি সন্দেহ করার মতো কিছু করছি না বলে আমি এতদিন কেয়ার করি নি। কিন্তু এখন যখন দেখলাম তুমি অসুস্থ হওয়ার পর্যায়ে চলে যাচ্ছো তখন ইন্টারফেয়ার না করে উপায় ছিল না।
আমার তীব্র অনুশোচনা বোধ চলে আসল।
আমি ঝরঝর করে কেঁদে বললাম, তুমি আমাকে ক্ষমা করো।
রাকিব বলল, ক্ষমা করার কিছু নেই। আমি জানি তুমি খানিকটা অসুস্থ। মিলি, অন্ধকার অতীতে জাবর কাটলে কেবল তিতাই হবে। কি দরকার পেছনে পড়ে থাকার?
তুমি আমাদের মেয়েটাকে নিজের জায়গায় ফেলে দিচ্ছো। অবচেতনভাবে তোমার কালো অতীতের সাথে তাকে মিশিয়ে ফেলছো। ডু ইউ ইমাজিন হোয়াট ইজ ইট?
আমি চোখ মুছে বললাম, স্যরি।
রাকিব বলল, আমি জানি তুমি এই মুহুর্তে আমাকে মহামানব ভাবছো। আমি মোটেই মহামানব নই। আমি বাস্তববাদী স্বার্থপর মানুষ।
আমি তোমার কথা না, আমার সংসার আর আমার মেয়ের কথা ভেবেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। তোমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার কোন লাভ হবে না। আমার মেয়ের জীবন অন্ধকারে চলে যাবে। তোমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার কোন লাভ থাকলে আমি ছেড়ে দিতাম। তবে এটাও বলি আমার নিজের জীবন বা আমার মেয়ের জীবনে তুমি কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে আমি তোমাকে ছুঁড়ে ফেলতে সময় নেব না।
ডু ইউ রিয়েলাইজ?
আমি চমকে উঠলাম।
ঘাড় নাড়িয়ে বললাম, বুঝেছি।
রাকিব চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে মিষ্টি করে বলল, মিলি! পাস্ট ইজ পাস্ট। অতীত তোমাকে কিচ্ছু দেবে না। ভবিষ্যত অনেক কিছুই দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো বললাম,হু।
রাকিব বলল, তুমি আজকে আমার যে রূপ দেখলে এটাও ভুলে যেও। আমি সরল মানুষ হিসেবে থাকতেই ভালোবাসি। আমার চিন্তা সরল, চলাফেরা সরল। আমার জীবনে কোন জটিলতা নেই। জীবনকে জটিল ভাবে নিলে জীবন তোমাকে আরো জটিল অবস্থায় ফেলবে। এখন তুমি আমাকে বিরাট বুদ্ধামান মানুষ ভাবলে তুমি সারাক্ষণ অস্বস্তি বোধ করবে।
আন্ডারস্ট্যান্ড?
আমি বললাম, আচ্ছা।
রাকিব বলল, মিলি উইল ইউ হাগ মি?
আমি তাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলাম। কাঁপতে কাঁপতে বললাম, তোমাকে হারাব না তো?
রাকিব বলল, উহু।
- আরেকটা কথা বলি?
- হু।
- তুমি প্রতিটা কথার শেষে ইংরেজীতে প্রশ্ন করার মুদ্রাদোষ কই থেকে পাইছো?
রাকিব ঝট করে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল, তাই নাকি?
খেয়াল করি নি তো? হাউ স্ট্রেঞ্জ!
আমি তাকে আবার ঝাপটে ধরে বললাম, রাকিব..জীবনের এত রূপ কেন? এই কালো, এই সাদা, এই মেঘ, এই রোদ....
রাকিব বলল, কে জানে! রূপের কর্তা রূপ সৃষ্টি করে আনন্দ পান হয়তো। আমরা আদার বেপারী। জাহাজের খবর নিয়ে কি লাভ?
পূর্ব আকাশে আলো ফুটছে। শুকতারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমি তারার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার ঘাড়ে রাকিবের উষ্ণ শ্বাস এসে পড়ছে।
আমার আবার বুক ফেটে আসা কান্না পেল। এ কান্না আনন্দের না কষ্টের নিজেই বুঝতে পারলাম না।
কিছু কান্নার উৎস কখনোই জানা যায় না।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল