মাহবুবুল আলম রিপন, ধামরাই প্রতিনিধি: ঢাকার ধামরাই উপজেলার শতাধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকদের জীবনযাপন চরমে পৌঁছেছে। করোনার অভিঘাতে দেড় বছর ধরে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানের ভাড়া, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। অতি দ্রুত স্কুল খুলতে না পারলে প্রতিষ্ঠান টিকবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন তারা। বন্ধের মধ্যে মালিকরা বেতন দিতে না পারায় সরকারি সহায়তার দিকে চেয়ে রয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।
সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ধামরাই উজেলার কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের পরিবারে চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। এসব শিক্ষকদের সহায়তায় কেউ এগিয়ে না আসায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে এ সমস্ত শিক্ষকদের।
ধামরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা মিলে শতাধিক কিন্ডারগার্টেনে প্রায় এক হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োজিত রয়েছেন। এরা প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায় পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীদের বেতন-ভাতা আর টিউশনের ফি দিয়ে সংসার চালাতো তারা। করোনার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বেতন যেমন বন্ধ, প্রাইভেট টিউশনিও রয়েছে বন্ধ। ফলে একেবারেই বন্ধ তাদের আয়।
কয়েকজন শিক্ষক জানান, কয়েক মাস আগে সারাদেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষকরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। সেখানে তারা আপদকালীন সময়ে সরকার থেকে সহজ শর্তে ঋণ ও অনুদান প্রদান এবং কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সমস্যাকে চিহ্নিত করে সমাধানসহ বেশ কিছু দাবি তোলেন। সেই সঙ্গে দ্রুত প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ারও দাবি জানানো হয়। কিন্তু সরকার থেকে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
কালামপুর বেগম রোকেয়া বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, গত ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের আয়-রোজগারও। এক বছরেরও বেশি সময় বন্ধ রয়েছে বেতন-ভাতা। কিন্তু প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা স্কুলের ঘর ভাড়া। সেটার জন্য বাড়িওয়ালা চাপ দিচ্ছেন। অভিভাবকদের কাছ থেকে স্কুলের বেতন আদায় হচ্ছে না। স্কুলের ঘর ভাড়াও পরিশোধ করতে পারছি না। অনেক শিক্ষক চাকরি ছেড়ে অন্য পেশা খোঁজছেন। এখন চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।
ধামরাই উপজেলা কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুস সালাম জানান, স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা কোনও বেতন দিচ্ছে না এবং প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্রও নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া এই দুর্যোগকালীন সময়ে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোন সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় শত শত শিক্ষকরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারের উচিত কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকদের সরকারি অনুদান দেওয়া।
ধামরাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাজমুন নাহার বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে সরকারি সহায়তার বিষয়ে আমাদের কোনও পরিকল্পনা নেই। আমরা সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি ক্লাস নিচ্ছি। এখন মোবাইল, রেডিও ও অনলাইন এই তিনটি পাল্টফর্ম ব্যবহার করে সব শিক্ষার্থীর কাছে কীভাবে শিক্ষা পৌঁছাতে পারি, সে বিষয়ে কাজ করছি।
সময় জার্নাল/এমআই