আদালত ডেস্ক : আইনে নেই তবুও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় শিশু শহীদুল্লাহকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে শিশু আদালত। ঐ সাজার রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল করেন তিনি। ঐ আপিলের শুনানি নিয়ে যশোরের শিশু আদালতের বিচারক মাহমুদা খাতুনকে শোকজ করেছে হাইকোর্ট।
কোন এখতিয়ার বলে তিনি শিশুকে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন সেই বিষয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়েছে। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল বুধবার এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে শহীদুল্লাহর জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। হাইকোর্ট বলেছে, এত ট্রেনিং দেওয়ার পরেও কেন এ ধরনের সাজার রায় হবে। আইনের বিধান প্রয়োগে বিচারকদের আরো সতর্ক হতে হবে।
২০০৩ সালের ৯ মার্চ বিস্ফোরক দ্রব্যসহ জাহিদুল ইসলাম সুমন ও শহীদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ। পরে তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করা হয়। ঐ মামলায় ২০১৯ সালে যশোরের শিশু আদালত শহীদুল্লাহকে বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের ৪(বি) ধারায় তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ ধারায় দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে যশোরের কারাগার থেকে হাইকোর্টে জেল আপিল করেন শহীদুল্লাহ।
ঐ জেল আপিলে তিনি বলেছেন, উদ্দেশ্যমূলক ভাবে আমাকে এই মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি দরিদ্র মানুষ। আমার বাড়িতে কেউ নাই। মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক এই মামলা থেকে আমাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হোক।
আবেদনের শুনানিতে আদালতের জিজ্ঞাসার জবাবে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, আপিল অ্যাডমিট করে জামিন মঞ্জুর করতে পারে আদালত। এরপরই হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করে বিচারককে শোকজ করেন।
প্রসঙ্গত শিশু আইনের ৩৩ ধারায় বলা হয়েছে, অন্য কোন আইনে ভিন্নরূপ যা কিছুই থাকুক না কেন কোন শিশুকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা কারাদণ্ড প্রদান করা যাবে না। কিন্তু এরপরেও তাকে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট। এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম ইত্তেফাককে বলেন, শিশু আইন ঠিকভাবে পাঠ না করার কারণে এই সমস্যাগুলো হচ্ছে। এজন্য অধস্তন আদালতের বিচারকদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং দরকার। তিনি বলেন, যেখানে শিশুকে কারাদণ্ডই দেয়া যায় না, সেখানে সশ্রম কারাদণ্ড কিভাবে দেওয়া যায়।
সম্প্রতি ‘আনিস মিয়া বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ এক রায়ে শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সাক্ষ্যগত কোন মূল্য নাই বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। আদালত বলেছে, স্নায়ু বিজ্ঞান এবং মনস্তত্ত্ব গবেষণা অনুযায়ী শিশুরা তাদের কর্মের পরিণতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল নন। তারা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বস্তুত মস্তিষ্কের যে অংশ আবেগ ও যৌক্তিকতা নিয়ন্ত্রণ করে, শিশু অবস্থায় ব্রেনের সে অংশ পরিপক্ব হয় না। শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কোন সাক্ষ্যগত মূল্যও নেই।
সময় জার্নাল/আরইউ