ডা. তারেক রেজা আলী :
ছবিটা দেখে কেমন যেনো লাগছে। বুকের গভীরটা দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে চোখ বেয়ে নেমে আসছে জলের ধারা। কি গভীর বেদনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চোখে। কি অপরিসীম কষ্ট সহ্য করে উনি দিনাতিপাত করেন। রাষ্ট্রীয় শত কাজে ব্যস্ত থাকেন। ষোল কোটি অধিবাসীর খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান আর শিক্ষা সহ সকল অবশ্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটাতে দিন-রাত কাজ করেন। এরই মাঝে দলের ভিতরে-বাইরে কত বিরোধ মীমাংসা করতে হয় তাঁকে। এক রাতে সবাইকে হারিয়ে কত বন্ধুর পথ অতিক্রম করে আজকের দিনে এসে উপস্থিত হয়েছেন তিনি। দেশ এখন অনেক দিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অর্থনীতি গতি পেয়েছে। দাঁত ভাঙা জবাব দিয়েছেন তিনি সকল সমালোচকদের। সর্বক্ষণই কিন্তু মৃত্যু তাড়া করছে তাঁকে। সব ছাপিয়ে নিজের কাজ করে যাচ্ছেন বুকে পাথর চাপা দিয়ে, বিশাল শোকের সমুদ্র সামলে রেখে।
খুব কাছ থেকে যখন দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী, সেদিনের রাজপথে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী শেখ হাসিনাকে সেই ১৯৮৫ থেকে ১৯৯১ সালের ১৫ আগষ্টে, তখনো দেখেছি তাঁর শোকের মূর্তি। আমরা যেতাম 'সন্ধানী'র পক্ষ থেকে স্বেচ্ছায় রক্তদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে। যে খাবার ঘরে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যরা খেতেন সেই ঘরে নিজ হাতে আমাদের বেড়ে দিতেন খিচুড়ি। আমাদের অনেকের জানা ছিলো না, ১৫ আগষ্ট তিনি রোজা রাখতেন। রোজা রেখে শোককে নিজের ভিতরে রেখে তিনি মনে করতেন আমাদের খাবারের দেখভাল করাটাও তাঁর দায়িত্ব। আজ তাঁর ছবি দেখে যে কষ্ট বেজেছে মনে, সেদিনও এ অনুভূতি হতো। কর্মীরা আসছে দূর-দূরান্ত থেকে, ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়ী লোকে লোকারণ্য এসব স্মৃতি চোখে ভাসে। সবচেয়ে বেশী মনে পড়ে সবাই মিলে ঐ খিচুড়ি খাওয়ার কথা। খাবার ঘর ছাড়াও কোন বার লেকের পাড়ে, কোন বার ধানমন্ডি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাজু ভাইয়ের বাসায় সবাই জড়ো হোতাম। স্বপ্ন দেখতাম একদিন না একদিন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হবে এ দেশে।
নেত্রী অনেক করেছেন। আরো অনেক কাজ করবেন এই শোককে গভীর মমতায় গোপনে একপাশে সরিয়ে রেখে। আমরা যে শুধু মুখে বলি শোক কে পরিণত করতে হবে শক্তিতে, তিনি তা প্রমাণ করেছেন নিজের কর্মকাণ্ডে। এই ছবি তার প্রমাণ।
লেখক : শিক্ষক ও চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।