ইংল্যাণ্ডে ২০২০ সালের মার্চ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত কোভিডে আঠার বছরের নীচে মারা গিয়েছিল ২৫ জন। সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য বলছে, সেখানে প্রতি এক লাখ আক্রান্তে মাত্র ২ জন মারা গিয়েছে, যাদের বয়স আঠার বছরের নীচে। সারা বিশ্বেই কোভিডে আক্রান্ত তরুণদের মধ্যে মরার সংখ্যা একবারে নগণ্য। আক্রান্ত হওয়ার পর তারাই বেশি আরোগ্য হচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ স্কুল খুলছে। বেশ কিছু দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যদি প্রতি দশ লাখ স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিদিন ৫০ জনও আক্রান্ত হয়, সেই ক্ষেত্রে স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখছে। ডেনমার্ক, নেদারল্যাণ্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, বেলজিয়াম, ভিয়েতনামসহ বেশ কিছু দেশ এই নীতিটিকে সামনে রেখেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক করেছে।
বাংলাদেশ সরকার আজও বলছে,‘যথেষ্ট কমলে’ খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যথেষ্ট কম বলতে তারা কি বুঝাতে চাচ্ছেন তা আমার অজানা, তবে সংক্রমণের যে পরিস্থিতিতে আমরা আছি, সেই পরিস্থিতি থেকে সহজে আমরা মুক্তি পাচ্ছি না। আমি জানি না, গত দেড় বছরে শিক্ষামন্ত্রণালয় কোভিডকে মেনে নিয়ে ঠিক কোন কাজটি বা গাইডলাইনটি তৈরি করেছে, তবে শিক্ষাকে আটকে রেখে সব কিছু খুলে দেয়া সত্যি বেমানান। মূলত শিক্ষা নিয়ে সরকারের উদাসিনতা আমরা সব সময় দেখতে পাচ্ছি। আমি সব সময় বলে আসছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা জরুরি, আর সেটা বর্তমান পরিস্থিতিতেও সম্ভব।
গত দেড় বছরে আমাদের কতজন স্কুল-কলেজের কতজন শিক্ষার্থী কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে, সেই তথ্য আমাদের যেন জানা জরুরি, তেমনি জাতীয় শিক্ষানীতির পরিবর্তনও আনতে হবে। অন্তত ৫ বছরের জন্য একটি বিশেষ শিক্ষা প্লান গ্রহণ করতে হবে যাতে করে আমাদের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। সাপ্তাহিক ছুটি ও সাধারণ ছুটি বাতিল করা যেমন জরুরি, তেমনি ডাবল শিফটে পড়াশুনার ব্যবস্থা করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যদি শতকরা ৬০ ভাগও টিকা গ্রহণ করে, তাহলে সেটি খুলে দিতে কোন বাধা আছে বলে আমি অন্তত মনে করছি না।
মনে রাখতে হবে টিকার আওয়তায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আনা আপাতত সম্ভব নয়, এই কথাটি মেনে নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। যে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাচ্ছে না, পড়াশুনার চাপ থাকছে না, তারা কিন্তু ঘরে থাকছে না, বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা আরো বেশি ঘরের বাহিরে থাকছে, সংক্রমিত হওয়ার সম্ভবনা তাদেরই থাকছে। সিদ্ধান্ত দ্রুত নিন, অন্তত বিজ্ঞান ভিত্তিক গাইডলাইনে শিক্ষাকে এগিয়ে নিন